বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৮ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম: দেশে সন্ত্রাসীদের আরো হামলার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে বুধবার গণভবন থেকে বিভিন্ন জেলার সরকারি কর্মকর্তা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সমাজকর্মী, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সকালে এ কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় দেশবাসীকে আরো সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গোয়েন্দাদের হাতে তথ্য রয়েছে, সন্ত্রাসীরা দেশে আরো হামলার পরিকল্পনা করছে। শেখ হাসিনা বলেন, সবাইকে আরো সচেতন থাকতে হবে। কারণ এটাও মনে রাখতে হবে যে, এটা আর এখানেই থামবে না। নানা ধরনের পরিকল্পনা আছে। আমরা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জায়গা থেকে আমরা সংগ্রহ করে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে আরও সচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জঙ্গি, সন্ত্রাসবাদবিরোধী প্রচার-প্রচারণাটাও ব্যাপকভাবে আপনাদের করতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও নিজ নিজ এলাকায় আরও সচেতন থাকতে হবে। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানগুলোকেও আরও সচেতন রাখতে হবে। সেই সাথে গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকেও আমি বলব, তথ্য সংগ্রহ করা, নিজেদের মধ্যে আদান-প্রদান করা এবং যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
সশস্ত্র বাহিনীকেও সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনীরও বিভিন্ন ডিভিশন আছে। তাদেরকেও আমি আহ্বান করব, তারাও যেন তাদের কর্মক্ষেত্রে যথেষ্ট সচেতন থাকে এবং সন্ত্রাসবিরোধী প্রচার-প্রচারণা এবং যে কোনো ব্যবস্থা যেন তারা গ্রহণ করে, সে ব্যাপারে সবাইকে আরও সচেতন থাকতে হবে।হয়তো দেখা যাবে একইসাথে সাত-আটটি জেলায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আক্রমণ চালাতে পারে। সেখানে জনপ্রতিনিধি থাকতে পারে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা থাকতে পারে; এমনকি পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সশস্ত্র বাহিনীসহ বিভিন্ন জায়গা এবং মন্ত্রী অথবা সাংবাদিক বা বিদেশি নাগরিক বিভিন্ন জায়গায় কিন্তু আক্রমণ চালাবার একটা পরিকল্পনা রয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, এ বিষয়গুলি সম্পর্কে আমি দেশবাসীকে আরও সচেতন করতে চাই। এবং এ ব্যাপারে সকলকে আরও এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানাতে চাই। তিনি বলেন, সমগ্র দেশব্যাপী জনসচেতনতা গড়ে তুলে জনগণের শক্তি দিয়েই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে মোকাবেলা করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ যখন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সারাবিশ্বব্যাপী এত উজ্জ্বল,যখন আমরা আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছি সেই সময় এই ঘটনা ঘটিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করা, উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা ব্যহত করা, দেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়ার একটা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, কাজেই আমি মনে করি আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমন করতে হবে ,বাংলাদেশকে এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে মুক্ত করতে হবে, মানুষের জীবনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলের শান্তি-নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমি মনে করি- আমাদের মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, অভিভাবকবৃন্দ, প্রশাসনে যারা কর্মরত, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা (যেমন-পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, আনসার-ভিডিপি), জনপ্রতিনিধিরা আছেন (ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা, মহানগর, জেলা এবং সংসদ সদস্যবৃন্দ) এবং সমাজসেবক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার যারা আছেন সকলকেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এই জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদি গোষ্ঠী প্রকৃত অর্থে ইসলাম ধর্মেরই ক্ষতি সাধন করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,যখন মানুষের কল্যাণ হচ্ছে, মানুষের মাঝে একটা স্বস্তি ফিরে এসেছে, আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে ঠিক সেই সময় এই ঘটনাটা ঘটিয়ে সমগ্র বিশ্বের সামনে যেমন আমদেরকে হেয় করছে; সেই সাথে আমি মনে করি-মুসলমান হয়ে মুসলমানকে হত্যা করে এই পবিত্র ইসলাম ধর্মটাকেই আজকে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। আমাদের এই পবিত্র ধর্মকে কেউ হেয় করবে এটা আমরা বরদাশত করব না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক এলাকায় জঙ্গিবাদ বিরোধী কমিটি, কোর কমিটি গঠন করে আড়ালে ঘাপটি মেরে থাকা জঙ্গি, নিখোঁজ ব্যক্তি এবং গোপন তৎপরতাকে খুঁজে বের করতে সবাইকে তৎপর হতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখার মাধ্যমে আমাদের জাতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একজোট হয়ে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় এবং উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফরেন্সে দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়েও সকলকে সতর্ক করে দেন।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন সিকদার ভিডিও কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো.আবুল কালাম আজাদ।