রবিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:১২ অপরাহ্ন
আজিজুল ইসলাম চৌধুরী/মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার/মোফাজ্জল হোসেন: গত কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে সুনামগঞ্জের ৬টি হাওরের বাঁধ ভেঙ্গে ও জলাবদ্ধতায় তলিয়ে গেছে ফসল। শুক্রবার সকালে জেলার দিরাই উপজেলার তোফানখালির বাঁধ ভেঙ্গে বরাম হাওর, ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনারতাল, ডুবাইল, ফাসোয়া, ঘুরমা ও মেঘনার হাওর তলিয়ে গেছে। অবস্থায় দু:চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। জেলার অন্যান্য হাওরগুলোও রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে। ফলে এসব হাওরপাড়ের কৃষকরা হয়ে পড়েছেন আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন। কৃষকরা জানান, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ এখন পর্যন্ত ৪০ ভাগও হয়নি এবং যেটুকু কাজ হয়েছে সেগুলোও প্রজেক্ট ইপ্লিমেন্টেশন কমিটি (পিআইসি) ও পাউবোর নিযুক্ত ঠিকাদাররা অসময়ে শুরু করায় বাঁধের মাটি ঠিকমতো বসেনি। ফলে বৃষ্টির পানিতে বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে।
সনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, এবার হাওরের ফলস রক্ষা বাঁধের কাজে বরাদ্দ এসেছে প্রায় ৫৭ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৪৬ কোটি টাকার কাজ ঠিকাদারা ও ১০ কোটি ৭২ লাখ টাকা পিআইসির মাধ্যমে কাজ করছেন। সূত্র আরো জানায়, প্রতি বছর ১৫ ডিসেম্বর হাওররক্ষা বাঁধের কাজ শুরু হয়ে ২৮ ফেব্র“য়ারির মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা থাকলেও পাউবোর নিযুক্ত ঠিকাদার ও পিআইসি কমিটিগুলো সে নির্দেশনা না মেনে বাঁধের কাজ শুরু করে মার্চের মাঝামাঝিতে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, গত ৩ দিনে গড় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৯৮ মিলিমিটার।
দিরাই উপজেলার বরাম হাওরপাড়ের কৃষক আবুল হোসেন জানান, এক সপ্তাহ আগে জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম তুফানখালি বাধ পরিদর্শন করে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং সঙ্গে সঙ্গে এ বাঁধকে বাঁশ ও ছাটাই দিয়ে ভালোভাবে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন। কিন্তু পাউবো ও পিআইসি কমিটি জেলা প্রশাসকের নির্দেশ মানেনি, ফলে আজ এ বাঁধটি ভেঙ্গে গেছে।
ধর্মপাশা উপজেলার সোনামড়ল, ধানকুনিয়া, ধারাম, কাঞ্জিয়া, টগার, শাসকা, চাউুলিয়ার হাওরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড় এ উপজেলার সব কটি হাওরের বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। চন্দ্রসোনারতাল হাওরপাড়ের কৃষক আলী আহমদ, রইছ উদ্দিন, ফাসোয়ার হাওরপাড়ের রতন মিয়া, আব্দুর রহিম, ঘুরমার হাওরপাড়ের কৃষক নূরুজ্জামান ও বিদ্যা মিয়া জনান, তারা ফসল হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন।
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)-এর কেন্দ্রীয় নেতা হামিদুল কিবরিয়া চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে পাউবো ও তাদের নিযুক্ত ঠিকাদারদের গাফিলতি রয়েছে। ফলে জেলার সব কটি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নড়বড়ে রয়েছে। যেকোন সময় এ সকল বাঁধ ভেঙ্গে হাওরের ফসল তলিয়ে যাবে। তিনি বাঁধের কাজে জড়িত পাউবো ও তাদের নিযুক্ত ঠিকাদারদের গাফলাতির ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের মাহবুব জানান, সদর উপজেলার করচার হাওরের প্রায় ৩ ভাগ উঠতি বোরো ফল জলাবদ্ধতায় তলিয়ে গেছে।
ধর্মপাশা উপজেলা কৃষি অফিসার শোয়েব আহমদ জানান, বাঁধ ভেঙ্গে এ উপজেলা চন্দ্রসোনার হাওরের ৩শত হেক্টর, ঘুমরার হাওরের ৬শত হেক্টর, ডুবাই হাওরের ২শত হেক্টর ও ফাসোয়ার হাওরের ২৫০ হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। উপজেলার অন্যান্য হাওরও বিপদসীমার মধ্যে রয়েছে। তিনি আরো জানান, উপজেলার উলাসখালি, নূরপুর ও মঈনপুর ঢালা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
সুনামগঞ্জ পনি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দিন জানান, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ সামগ্রিকভাবে ৭০ ভাগ হয়েছে। তিনি আরো জানান, জেলার নদ-নদীগুলোতে পানির চাপ বাড়ছে। এ পর্যন্ত নদীতে যেটুকু পানি বৃদ্ধি পেয়েছে, সেটাকে হাওর এলাকার জন্য ডেঞ্জার লেভেল ধরা যায়।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসার অধিদপ্তর সূত্রে জানা য়ায়, এবার জেলা ১১টি উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ১৫ হাজার ৫৭০ হেক্টর। কিন্তু চাষাবাদ হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৮২ হেক্টর জমি। যার ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ লাখ ৪৩ হাজার মেট্রিকটন। তবে গতকাল পর্যন্ত বেশ কয়েকটি হাওরে অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।