শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৩ অপরাহ্ন
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থেকে শামুয়েল কবীর: দক্ষিণ সুনামগঞ্জে দুটি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে হাজার হাজার হেক্টর কাঁচা বোর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। বাঁধের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় এবং কাজ নিয়ে গড়িমসি করায় বাঁধ ভেঙ্গে এই ফসলহানির ঘটনা ঘটেছে বলে এলাকার একাধিক কৃষকের অভিযোগ। শনিবার রাতে জামখলা হাওরের শল্লাদাইড় ও দেখার হাওরের হলদিখাড়া আফার দিয়ে পানি প্রবেশ করে এই বাঁধ ভাঙ্গার ঘটনা ঘটে। এলাকার কৃষকদের অভিযোগ সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-এর গাফিলতি ও সংশ্লিষ্ট বাঁধের ঠিকাদার, পিআইসি কমিটির সভাপতিদের উদাসীনতা বিল না পেলে কাজ করবেন না, শুধু বিলের জন্য অপেক্ষা করে দেরীতে কাজ শুরু করায় এবং বাঁধের পুরো কাজ বাস্তবায়ন না করার কারণেই কৃষকের স্বপ্নের সোনার ফসল তলিয়ে গেছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, একেকটি বাঁধে যে পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হয় তার অর্ধেকের ও কম কাজ করানোর ফলেই ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া চৈত্র মাসে তড়িঘড়ি করে মাটি কাটানো ও বাঁধের কাছ থেকে মাটি উত্তোলনের ফলে একটু বৃষ্টি হলেই মাটি গলে যায় ও বাঁধে ফাটল ধরে বাঁধ ভেঙ্গে যায়। পাউবো ও পিআইসি কমিটির লোকজন মিলেমিশে কৃষকের সোনার ফসল নিয়ে চিনিমিন খেলে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করার কারণেই প্রতিবছর সামান্য বৃষ্টিাপাত হলেই বাঁধ ভেঙ্গে পানি হাওরে প্রবেশ করে। কৃষকদের ফসলের ক্ষতিপূরণ ও বেরিবাঁধের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হাওরপাড়ের হাজার হাজার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের আহাজারি। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আলমগীর কবির জানান, আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেরিবাঁধ রক্ষার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, সার্বক্ষণিকভাবে সবগুলো হাওরের খোঁজ খবর রাখছি। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী আবুল কালাম জানান, ডিসেম্ভর-জানুয়ারি মাসে বেরিবাঁধের কাজ টেকসইভাবে না করিয়ে চৈত্র মাসে তড়িগড়ি করে কাজ করানোর ফলেই কৃষকরা প্রতিবছরই এই ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমার সুপারিশ, নির্ধারিত সময়েই যেন বরাদ্ধ অনুযায়ী দূর্নীতি জালিয়াতি না করে পুরো কাজ করানো হয়। কাজের বিল নিয়ে পাউবোর কালক্ষেপনের কারণেই পিআইসি সঠিক সময়ে কাজ করেনা, এটি ফসলহানির আরেকটি মারাত্বক কারণ।
অপরদিকে দেখার হাওর ও জামখলা হাওরে পানি ঢুকে হাজার হাজার হেক্টর কাঁচা ধান পানির নিচে যাওয়ায় বিকাল ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের আস্তমা রাস্তার সামনে আস্তমা, কামরূপদলং, পার্বতীপুর, তালুকগাঁও, সুলতানপুর, সদরপুর, তেঘরিয়া, পাগলা, কান্দিগাঁও, আসামপুর, ইনাতনগর, ডুংরিয়া, উজানীগাঁও, জয়কলস এলাকার ৫ হাজার জনতা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে ঠিকারদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করে ফাঁসির দাবী জানান। খবর পেয়ে সুনামগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মোঃ শফিউল আলম, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী আবুল কালাম, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার ওসি আল আমিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে বিক্ষুব্দ জনতা বেরিবাঁধের কাজের ঠিকাদার, পিআইসি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের গাফিলতি খতিয়ে দেখে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা, দেখার হাওর ও জামখলা হাওরসহ উপজেলার সবকটি হাওরের ঝুঁকিপূর্ণ বেরিবাধে সুইচ গেইট ও রাবার ড্যাম নির্মাণ করা, ছয়মাস এলাকাবাসির খাদ্যের ব্যবস্থা করা ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জকে দূর্গত এলাকা ঘোষণা করার দাবী জানান। অবশেষে বিক্ষুব্দ জনতার সম্মুখে সুনামগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মোঃ শফিউল আলম এসব দাবী জেলা প্রশাকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রেরণের আশ^াস দিলে অবরোধ তুলে নেন কৃষক ও জনতা। তবে দাবী বাস্তবায়ন না হলে আবারো অবরোধে নামবেন তারা।