রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:০১ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : ভরণ-পোষণ চাওয়ায় এক মহিলাকে নয় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে পিটিয়েছে স্বামীর পরিবারের লোকজন। নির্যাতনের সময় তৃষ্ণায় পানি খেতে চাইলে ওই নারীর মুখে প্রস্রাব ঢেলে দেয়া হয়। এমনকি ক্ষতস্থানে ছিটিয়ে দেয়া হয় মরিচের গুঁড়ামিশ্রিত পানি। এই অমানবিক ঘটনা ঘটেছে সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চল শাল্লা উপজেলায়। উপজেলার বাহাড়া ইউনিয়নের ভাতগাঁও গ্রামের মহসিন মিয়ার স্ত্রী নির্যাসতিত রাহেলা খাতুনকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে।
শাল্লা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রাহেলা বেগম সংবাদমাধ্যমকে জানান, ভাতগাঁও গ্রামের ধন মিয়ার ছেলে মহসিন মিয়ার সঙ্গে তিন বছর আগে তার বিয়ে হয়। গত বছর মহসিন স্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই আরেকটি বিয়ে করেন এবং মৌখিকভাবে তাকে তালাক দেন। মা-বাবাহীন রাহেলা দুই বছরের মেয়েশিশুকে নিয়ে নিজের বাড়ি চলে যান এবং অন্যের বাড়িতে কাজ করে খেতেন। কিছুদিন আগে রাহেলা স্বামীর বাড়ি গিয়ে সন্তানের ভরণ-পোষণ দাবি করেন। ভরণ-পোষণ না দিলে তিনি আইনের আশ্রয় নেবেন বলেও জানান।
গত শুক্রবার সকালে নিজের বাড়ি থেকে রাহেলাকে ধরে নিয়ে যায় স্বামীর বাড়ির লোকজন। রাহেলা বলেন, “আমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে বাড়িতে বেঁধে রাখে। পরে আমার স্বামী মহসিন, ভাসুর কুদ্দুছ মিয়া, কুদ্দুছ মিয়ার ছেলে কয়েছ মিয়া ও মহসিন মিয়ার খালাতো ভাই লুৎফুর মিয়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাঠি ও রড দিয়ে পেটায়।তারা আমার ক্ষতস্থানে মরিচের গুঁড়া দেয়। আমি পানি খেতে চাইলে আমার মুখে এনে প্রস্রাব ঢেলে দেয়।” রাহেলা জানান, বিকালে গিয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
শাল্লা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক হেলাল উদ্দিন জানান, শুক্রবার বিকালে রাহেলা খাতুনকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তার শরীরের প্রায় সব জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে কোমরে আঘাত পাওয়ায় এখনো তিনি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছেন না এবং স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারছেন না।” শাল্লা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জিন্নাতুল বলেন, খবর পেয়ে মহসিন মিয়ার বাড়ি থেকে রাহেলাকে হাত-পা বাঁধা ও রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে থানায় আনা হয়। সেখান থেকে বিকালে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এসআই আরো জানান, এ ঘটনায় রাহেলা বাদী হয়ে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আসামিরা হলেন মহসিন, কুদ্দুছ মিয়া, কয়েছ মিয়া ও লুৎফুর মিয়া। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়ে যান। তাদের গ্রেফতারে পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।