শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২১ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : সেনাপ্রধান হিসেবে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে বাঁচাতে ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে কেএম সফিউল্লাহ বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের সঠিক তদন্ত হয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সময় তৎকালীন সেনাপ্রধান সফিউল্লাহর ভূমিকার তদন্ত চেয়ে বিএনপি দাবি তোলার প্রেক্ষাপটে তিনি সোমবার নারায়ণগঞ্জের এক আলোচনা সভায় একথা বলেন। সফিউল্লাহ বলেন, “বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার হলেও সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি। এই হত্যার পেছনে কারা জড়িত তা তদন্তের জন্য একটি কমিশন করা যেতে পারে।” জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ আয়োজিত ওই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রূপগঞ্জের সাবেক আওয়ামীলীগ সংসদ সদস্য সফিউল্লাহ।
মুক্তিযুদ্ধকালীন কে ফোর্সের অধিনায়ক মেজর জেনারেল সফিউল্লাহ বীরউত্তম বাংলাদেশের প্রথম সেনাপ্রধান। তিনি দায়িত্বে থাকা অবস্থায়ই ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট এক দল সেনা সদস্য সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। ১৫ অগাস্টের কথা স্মরণ করে সফিউল্লাহ বলেন, “আমি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার কিছুক্ষণ পরেই বঙ্গবন্ধু নিহত হন। বঙ্গবন্ধুকে আমি রক্ষা করতে পারিনি-এই ব্যর্থতা নিয়েই আমি বেঁচে আছি।” ওই সময় বঙ্গবন্ধুকে রক্ষায় সময়োচিত ও ত্বরিত পদক্ষেপ না নেওয়ার সমালোচনা রয়েছে সফিউল্লাহর বিরুদ্ধে। তার অদক্ষতার বিষয়টি বঙ্গবন্ধু হত্যামামলার বিচারেও উঠে আসে। সফিউল্লাহ বলেন, “অনেকে বলেন, ব্রিগেডিয়ার জামিল (রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব) বঙ্গবন্ধুকে বাঁচাতে যেতে পারলে আমি কেন গেলাম না? আমি সেদিন যদি একা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যেতাম, তাহলে আমার পরিণতিও জামিলের মতো হতো। “আমি সেদিন মারা গেলে, যারা আজকে আমার সমালোচনা করছেন, তারা খুশি হতেন।”
একটি টেলিভিশনে আওয়ামীলীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যের সূত্র ধরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পুনর্তদন্ত দাবি করেছে বিএনপি। বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “ওই টেলিভিশনে সেদিন আওয়ামীলীগের এই দুই নেতার যে কথোপকথন প্রচারিত হয়েছে, তা থেকে অনুমান করা যায়, সেদিনের সেনাবাহিনী প্রধান কেএম সফিউল্লাহ ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এই অভিযোগ করেছেন দলটির দায়িত্বশীল নেতা শেখ ফজলুল করীম সেলিম।
“এই অভিযোগটি অত্যন্ত গুরুতর। শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পুনর্তদন্ত করা হোক। পুনর্তদন্ত হলে সেনাবাহিনী প্রধানের কী ভূমিকা ছিল, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগটি শেখ সেলিম তুলেছেন, তা খতিয়ে দেখা যেতে পারে। যিনি অভিযোগটি তুলেছেন, তিনি শাসক দলের প্রেসিডিয়ামের সদস্য, নিহত রাষ্ট্রপতির ভাগিনা। এটাকে হালকা করে দেখার বিষয় নয়।”
সফিউল্লাহ ওই সময়ে তার অবস্থা তুলে ধরে বলেন, “মেজর ডালিম অস্ত্রের মুখে আমাকে রেডিও স্টেশনে নিয়ে গিয়ে মোশতাক সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে বাধ্য করে। ১৫ থেকে ১৮ আগস্ট তিন দিন একই পোশাকে বঙ্গভবনে আমি প্রায় অবরুদ্ধ ছিলাম।”
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর তার সরকারের মন্ত্রী মোশতাক আহমেদ ক্ষমতায় বসে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান জিয়াউর রহমানকে পদোন্নতি দিয়ে সেনাপ্রধান করেছিল, সরানো হয়েছিল সফিউল্লাহকে।
তখন খন্দকার মোশতাক ও জিয়াউর রহমানের ভূমিকা ছিল খুবই ‘রহস্যজনক’, বলেন সফিউল্লাহ। তিনি বলেন, বঙ্গভবনে ‘অবরুদ্ধ’ থাকার সময় মোশতাকের কথাবার্তায় তার মনে হয়েছে যে পঁচাত্তরের অগাস্টের তিন মাস আগেই সামরিক আইন জারির প্রস্তুতি নিচ্ছিল তারা। তৎকালীন সেনাপ্রধান সফিউল্লাহ আরও বলেন, তখন সেনা গোয়েন্দা বিভাগ সেনাপ্রধান হিসেবে তার নিয়ন্ত্রণে নয়, সরাসরি রাষ্ট্রপতির তত্ত্ববাবধানে পরিচালিত হত। “বঙ্গবন্ধুকে হত্যার খবর জানার পর পর আমি ৪৬ ব্রিগেডকে (শাফায়াত জামিল নেতৃত্বাধীন ব্রিগেড) নির্দেশ দিয়েছিলাম, মুভ করার জন্য। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়।”
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর সংবিধানে ধারা যুক্ত করে তার বিচারের পথ বন্ধ করা হয়েছিল। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিচারের বাধা অপসারণ করা হয়। এরপর মামলা হলে ১৯৯৮ সালে বিচারিক আদালত ১৫ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেয়। আপিলের রায়ে ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। এদের সবাই সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ছিলেন।
দণ্ডিত পাঁচজন সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মুহিউদ্দিন আহমদ (আর্টিলারি), বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিনের (ল্যান্সার) ফাঁসির রায় ২০১০ সালে কার্যকর হয়। বাকিরা এখনও পলাতক।