বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৯ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১

ফিরে দেখা ২০১৭

কাজী জমিরুল ইসলাম মমতাজ, স্টাফ রিপোর্টার (সুনামগঞ্জ): গড়িয়ে যাওয়াই সময়ের ধর্ম। গড়াতে গড়াতে তাই বিদায় নিতে যাচ্ছে ২০১৭। জীর্ণ-শীর্ণতাকে ঝেড়ে ফেলে, নতুনের জয়ধ্বনি নিয়ে দুয়ারে ২০১৮। তবে অতীত হতে যাওয়া বছরকে তো স্মৃতি থেকে মুছে দেওয়া যাবেনা। সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, অর্জনা-হারানো অনেক ঘটনা বহুল বছর। জেলার অনেক কৃতি সন্তান, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতিস¤পন্ন অনেক ব্যক্তিত্বকে হারিয়েছি আমরা। তাদের শূন্যস্থান কখনো পূরণ হওয়ার নয়। আগামীর চলার পথে নিশ্চয়ই তাদের স্মৃতি আমাদের তাড়া করে ফিরবে। সুনামগঞ্জের এমন কিছু নক্ষত্র পতনের খবর নিয়ে আজকের সালতামামি। অন্যদিকে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানায় খুন হয়েছে ৩টিসহ বিভিন্ন ঘটনায় ১৬৩টি মামলা দায়ের হয় ২০১৭ সালে।
রাজনীতির কবি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মৃত্যু ফেব্র“য়ারি ৫, ২০১৭
বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ভোর ৪টা ২৯ মিনিটে তিনি রাজধানী ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিসাধিন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ষাটের দশকের উত্তাল রাজনীতি থেকে উঠে আসা বামপন্থি এই নেতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। দীর্ঘ ৫৯ বছর রাজনীতি করেছেন দাপটের সঙ্গে। যে কোন জটিল বা কঠিন বিষয় হাস্যরসের মাধ্যমে বলার অসামান্য ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তিনি। ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ৫নং সেক্টরের অধিন টেকেরঘাট সাব-সেক্টরে প্রথম সাব-সেক্টর কমান্ডার এবং পরে সংগঠক, ১৯৭২ সালে সাংবিধানিক সংসদ সদস্য, দিরাই-শাল্লা থেকে পরপর সংসদ সদস্য, ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা, ২০০৮ সালে রেলমন্ত্রী ছিলেন, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় স¤পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য।  সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ¯œাতক ও  ¯œাতকোত্তর পাশ করেন। সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে এলএলবি করার পর আইন পেশায় যুক্ত হন।
ক্রীড়াবিদ ফজলুল হক, মৃত্যু জানুয়ারি ২৬, ২০১৭
জেলার বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ ফজলুল হক একজন কৃতী ব্যাডমিন্টন, ফুটবল ও ক্রিকেট খেলোয়াড় ছিলেন। দীর্ঘ ২০ বছর নেতৃত্ব দিয়েছেন প্যারামাউন্ট ক্রিকেট ক্লাবের।
দাস পার্টির সদস্য অবনী কুমার রায়, মৃত্যু মে ১৬, ২০১৭
স্বাধীনতা যুদ্ধে সুনামগঞ্জ কাঁপানো কমান্ডার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি দাসের দাস কো¤পানির সদস্য ছিলেন অবনী কুমার রায়। যুদ্ধে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর এই বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) সিলেট বিআরডিটিআই অফিসে অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
ওস্তাদ ফটিক চন্দ, মৃত্যু জুলাই ১১, ২০১৭
শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রবীণ শিল্পী ছিলেন ওস্তাদ ফটিক চন্দ।  তিনি স্বাধীনতা পূর্বকালে উচ্চাঙ্গ সংগীতে জাতীয় পদকপ্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শরণার্থী শিবির ও যুদ্ধ শিবিরে এই গুণী শিল্পী সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে জাতির মনোবল বাড়ানোর কাজে নিয়োজিত ছিলেন। জীবনের শেষ দিকে তিনি কিছুটা অনাদর, অবহেলা ও সুচিকিৎসার অভাবে মনের দিকে দিয়ে ভীষণ পীড়িত ছিলেন।
সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী, মৃত্যু সেপ্টেম্বর ১, ২০১৭
মুক্তিযোদ্ধা, সংগঠক, চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, সাংবাদিক, কলাম লেখক সালেহ চৌধুরী রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ৩ সেপ্টেম্বর বিকালে দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের গচিয়া গ্রামে সালেহ চৌধুরীর ইচ্ছা অনুযায়ী পারিবারিক কবরস্থানে মা-বাবার পাশে তাঁর দাফন স¤পন্ন হয়। ১৯৭১ সনের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি টেকেরঘাট সাব-সেক্টরের আওতায় ভাটি এলাকার আঞ্চলিক সমন্বয়ক হিসেবে দেশের ভিতরে থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। একাত্তরের রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা সালেহ চৌধুরী শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটিতে সক্রিয় ছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের প্রতীকী বিচারে ১৯৯২ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে গণআদালত বসেছিল, তার অন্যতম সাক্ষী ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায়ও তিনি সাক্ষ্য দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সৈয়দ আবদুল্লাহ খালেদ নির্মিত ভাস্কর্য অপরাজেয় বাংলার নামকরণও করেন সালেহ চৌধুরী। জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ জেলার অনেকগুলো শহীদ মিনারের আর্কিটেক্ট ছিলেন তিনি। ছিলেন জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের উপদেষ্টা, কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সভাপতি ও দাবা ফেডারেশেনের সাবেক কর্মকর্তা, দেশসেরা দাবারু নিয়াজ মোর্শেদের মেন্টর। সালেহ চৌধুরী ১৯৬৩ সালে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকল্যাণে এমএ পাস করেন। তিনি অর্ধÑসাপ্তাহিক সোনার বাংলা ও গভর্ণর মোনায়েম খানের পয়গাম পত্রিকায় কাজ করেছেন। কাজ করেছেন দৈনিক আওয়াজ, সরকারি মালিকানাধীন দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকায় এবং স্বাধীনতার পর বন্ধ হবার পূর্ব পর্যন্ত দৈনিক বাংলায় সহকারী স¤পাদক ও ফিচার এডিটর হিসেবে। তাঁর লেখা সর্বশেষ বই ভাটি এলাকায় মুক্তিযুদ্ধঃ আমার অহংকার।
ফটো সাংবাদিক আবদুল কাদির তোতা মিয়া, মৃত্যু সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৭
তিনি সুনামগঞ্জ শহরে ফটোগ্রাফার তোতা মিয়া নামেই পরিচিত ছিলেন। আসল নাম আব্দুল কাদির। তিনি ষাট ও সত্তরের দশকে বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক পত্রিকা ইত্তেফাকে ফটো সাংবাদিক হিসাবে কাজ করেছেন। পরে সুনামগঞ্জ শহরে এসে আলোকচিত্রী হিসাবে কাজ করেন। তাঁর মালিকানাধীন খান ফটো স্টুডিও। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে সুনামগঞ্জের একমাত্র ফটো স্টুডিও ছিল এটি। বিভিন্ন সংবাদপত্রে তাঁর সংবাদ চিত্র ছাপা হয়েছে। কাজ করেছেন ফটো সাংবাদিক হিসেবে। এ ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ স¤পাদক সাইদুর রহমান চৌধুরী, শক্তিয়ারখলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহনূর আলম, সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রমথ নাথ তালুকদার, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি ও জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি, দিরাই উপজেলা বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ স¤পাদক আব্দুস শহীদ চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী, মুক্তিযোদ্ধা সফিকুল হক চৌধুরী, শাল্লায় প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা, প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বিশ্বস্ত রাজনৈতিক সহচর, বাহাড়া (সদর) ইউনিয়ন পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান নরেশ চৌধুরী, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা ইন্দু ভূষণ তালুকদার, মুক্তিযোদ্ধা প্রানেশ তালুকদার, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ কামাল, মুক্তিযোদ্ধা চিত্তরঞ্জন দাস, সদর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এবং ইউপি বিএনপির সাবেক সভাপতি তাজুল ইসলাম, সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান (ছাতকের) গোলাপগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা চিন্তাহরন দাস, সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ফয়সল আহমদ, সদর উপজেলার মাইজবাড়ী গ্রামের সমাজকর্মী ও জেলা কৃষক লীগের সাবেক সহ-প্রচার স¤পাদক জুনেদ আহমেদ, শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, বাহাড়া (সদর) ইউনিয়নের সাবেক দুইবারের চেয়ারম্যান, জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ঘনিষ্ট রাজনৈতিক সহচর প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা নরেশ চন্দ্র চৌধুরী, শাল্লা উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক রমেন্দ্র নারায়ন দাশ, জগন্নাথপুরের প্রবীণ শিক্ষক আব্দুর রহিম, দোয়ারা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান, জগন্নাথপুর পৌর এলাকার ভবানীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জগন্নাথপুর উপজেলা সদর জামে মসজিদের সাবেক মোতোয়াল্লী জগন্নাথপুর পৌরশহরের ৬নং ওয়ার্ডের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকার বাসিন্দা রহিছ উদ্দিন মাস্টার, দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ ইদ্রিস আলী বীরপ্রতিকের মাতা জমিরা খাতুন (১০৫), ছাতকের ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব আফরোজ মিয়া, মহিলা পরিষদ সুনামগঞ্জ জেলা শাখার প্রাক্তন সহ-সভাপতি মায়া রানী কর, মুক্তিযোদ্ধা মালদার মিয়া, ছাতক উপজেলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান সুজন মিয়া চৌধুরী, শ্রমিক নেতা সিরাজ মিয়া, ছাতক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল খালিক, তাহিরপুর উপজেলা জাতীয় শ্রমিকলীগের আহবায়ক রঞ্জু মুখার্জি।
এদিকে  দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানায় অপরাধের সংখ্যাও কমছিল না বিগত বছরে ২০১৭ সালে, এ থানায় ৩টি খুনসহ নানান ঘটনা ঘটে। তবে আইনশৃংখলা বাহিনীও ছিল সব সময় তৎপর। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা হয়েছে ৯টি, মাদকদ্রব্য আইনে মামলা হয়েছে ৪৩টি, চুরির ঘটনা ঘটেছে ১১টি, অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে ২টি, বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে ৮টি, সড়ক দূর্ঘটনায় মামলা হয়েছে ৭টি, মানব পাচার হয়েছে ১টি, দ্রুত বিচার আইনে মামলা হয়েছে ১টি, ডাকাতির প্রস্তুতিকালে অস্ত্রসহ গ্রেফতার ৫ ডাকাত, পরে পুলিশ বাদি হয়ে ডাকাতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। আত্মহত্যার প্ররোচনায় ১টি, থানায় অন্যান্য মামলা হয়েছে ৭৬টি। সর্বমোট ১৬৩টি মামলা দায়ের হয় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com