বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৩ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম: ইন্টারনেট নিয়ে ‘অনৈতিক’ ব্যবসা ভেঙে দিয়ে তা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন নবনিযুক্ত ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। মন্ত্রী হিসেবে নিজের অগ্রাধিকারের তিনটি ক্ষেত্র তিনি উল্লেখ করেছেন। এগুলো হচ্ছে ইন্টারনেটের দাম সাধারণ মানুষের আয়ত্তের মধ্যে আনা, শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর করা এবং ইন্টারনেটের সুফল পৌঁছে দিতে বাংলা ভাষায় কনটেন্ট তৈরি করা। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর গতকাল বুধবার সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
কারওয়ান বাজারে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) কার্যালয়ে এক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। এতে বেসিসসহ তথ্য-প্রযুক্তি খাতের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা মোস্তাফা জব্বারকে অভিনন্দন জানান। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গেও আলাদাভাবে কথা বলেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ বেগবান করতে আগে সরকারের মধ্যে ডিজিটাল চর্চা নিশ্চিত করতে চান মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, ‘আমার বড় এজেন্ডা সরকারের ডিজিটাল রূপান্তর। সরকারের মধ্যে কারা ডিজিটাল রূপান্তর চায় না, তা আমার জানা আছে। তাদের ধরে ডিজিটালে অভ্যস্ত করতে পদক্ষেপ নেব।’ এত স্বপ্ন মাত্র এক বছরে কিভাবে বাস্তবায়ন করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওয়ান ইয়ার ইজ এনাফ। এই এক বছরের মধ্যে আমি প্রথম ১০০ দিনে কী করব তার একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করব। আমি এত দিন যেসব দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করেছি, সেগুলো বাস্তবায়ন করা আমার নৈতিক দায়িত্ব। আমি তা তথ্য-প্রযুক্তি খাতের সবাইকে নিয়ে তা করতে পারব।’
দেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতের কানাগলি ভাঙবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, টেলিকম খাত ক্যান্সারে আক্রান্ত। আর আইসিটিতে অনেক কানাগলি আছে, যা ভাঙতে হবে। কত দিনের মধ্যে ইন্টারনেট সমস্যার সমাধান দেখা যাবে—এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি খুব শিগগির টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সবার সঙ্গে বসব। তারা কেন এত দিনে ইন্টারনেটের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে আনতে পারেনি, গতি বাড়াতে মোবাইল ফোন অপারেটরদের বাধ্য করতে পারেনি, তা জানব। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
মোস্তাফা জব্বার আরো বলেন, ‘আমি ইংরেজি কিংবা অন্য ভাষার বিরোধী নই। কিন্তু যে দেশের ৯৬ শতাংশ মানুষ যে ভাষা বোঝে তাদের প্রতি এবং ভাষাশহীদদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমার মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগসহ সব ভাষা হবে বাংলা।’ তিনি বলেন, ‘গ্রামীণফোন কিংবা মাইক্রোসফট আমার মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখলে বাংলা ভাষাতেই লিখতে হবে। এ জন্য তাদেরও বাংলা ভাষা জানা লোক অফিসে রাখতে হবে।’ ইংরেজি ভাষা বাংলায় এবং বাংলা ভাষা ইংরেজিতে শোনার জন্য আইসিটি ডিভিশনের একটি প্রকল্পের কাজ চলছে বলেও জানান বিজয় সফটওয়্যারের জনক। তিনি বলেন, ‘আমার মন্ত্রণালয়ে দেশের ডিজিটাল রূপান্তরের কাজ দেশি কম্পানিই করবে। বিদেশি কম্পানিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সংস্কৃতি বন্ধ হবে।’ তিনি দেশি কম্পানিগুলোকে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কাজ পাওয়ার পরামর্শ দেন। কোনো অনৈতিক দাবি নিয়ে তাঁর কাছে না আসার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি এক বছরের মেয়াদে ৬৯ বছরের অর্জন মুছে ফেলতে চাই না।’
তথ্য-প্রযুক্তি খাতের অন্যতম সংগঠন বেসিসের সভাপতি হওয়ার আগে মোস্তাফা জব্বার বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) চারবার সভাপতি ছিলেন। ছিলেন বেসিসের প্রতিষ্ঠাতা সহসভাপতি ও পরিচালক। দেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতে কয়েক যুগ ধরে এই পথচলায় তিনি খাতটির শুরু থেকে ভালো-মন্দ, আশা-হতাশা, সাফল্য—সব সময়ের সাক্ষী। তাই এ খাতের অনেক কিছুই তাঁর নখদর্পণে বলে জানান তিনি।
সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, “আমি মন্ত্রী হতে চাই না, আপনাদের ‘জব্বার ভাই’ হয়ে থাকতে চাই। আগেও আমাকে যেভাবে তথ্য-প্রযুক্তি খাতের নানা সমস্যায় সব সময় পাশে পাওয়া গিয়েছিল, এখনো পাওয়া যাবে। তবে মন্ত্রী হিসেবে যেহেতু আমার কিছু ক্ষমতা থাকবে, তাই সেই ক্ষমতা দেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে কাজে লাগাব। সরকারের যে ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন আছে তার সত্যিকার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে কাজ করব।”
কম্পিউটারে বাংলা লেখার সফটওয়্যার ‘বিজয়’-এর উদ্ভাবক মোস্তাফা জব্বার তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন সাংবাদিক হিসেবে। নিজের সাংবাদিকতাজীবনের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘এখনো আমার পাসপোর্টে সাংবাদিক পরিচয় আছে। এখনো আমি দেশের তিনটি পত্রিকায় কলাম লিখি। দেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নিতে আইসিটি সাংবাদিকরা ব্যাপক অবদান রেখে চলেছেন। আগামী ১০০ দিনের কর্মসূচিতে কী কী করণীয় হবে, তা আপনারা জানান।’