শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:৩৬ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেক্স : বয়স সাড়ে তিন থেকে চার বছর। পরনে লাল গেঞ্জি, গাঢ় সবুজ হাফ প্যান্ট আর কেডস। উপুড় হয়ে পড়ে থাকা দেহের নিচে সোজা নরম দুই হাত। বালুতে গুজে কোমল মুখখানি। যেন কার ওপর ভীষণরকম ‘অভিমান’ করে মুখ লুকোতে শুয়ে পড়েছে সমুদ্র সৈকতে। কিন্তু সৈকতের পানি আছড়ে পড়তেই দুলে ওঠে আদুরে দেহখানি। দুলে ওঠে কোস্টকার্ড সদস্যের মনও। কাছে ঘেঁষতেই আন্দাজ করা যায়, ‘সত্যিই, ভীষণরকম ‘অভিমান’ করেই লুকিয়ে গেছে কোনো মায়ের কোল আলোকিত করে রাখা শিশুটি, একেবারে না ফেরার দেশে।’
কার ওপর ‘অভিমান’? তুরস্কের ভূমধ্যসাগরের সৈকতে উদ্ধার নিথর শিশুটি যুদ্ধবাজ জগতের ওপরই ‘অভিমান’ করে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছে বলে জানাচ্ছেন উদ্ধারকারী স্থানীয় কোস্টগার্ডের সদস্যরা। শিশুটি বাশার আল-আসাদের সিরিয়ার। বুধবার তুরস্কের পূর্বাঞ্চলীয় সমুদ্র সৈকত থেকে তার মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের গৃহযুদ্ধ থেকে প্রাণ বাঁচাতে ইউরোপ অভিমুখে নিরীহ মানুষের যে স্রোত নেমেছে, সে স্রোতে নেমে যুদ্ধপ্রবণ এলাকা ছাড়তে চাইছিল ১২ সিরীয়। দুই নৌকায় করে তুরস্কের বোদরাম উপদ্বীপ থেকে গ্রিসের এজিয়ান দ্বীপের উদ্দেশে রওয়ানা হয় তারা। এই ১২ জনের মধ্যে ছিল শিশুটিও।
কিন্তু সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ আর বৈরী আবহাওয়া তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছুতে দিলো না। মায়ের কোল থেকে শিশুটিকে আছড়ে ফেলে দিলো সমুদ্রে, ভাসিয়ে নিয়ে এলো তুরস্কের সমুদ্র সৈকতে। মাকে ভাসিয়ে নিয়ে ফেললো দূরের অন্য এক সৈকতে। তুরস্কের কোস্টগার্ড বলছে, পাঁচ শিশু, এক নারীসহ অন্তত ১২ শরণার্থীর মরদেহ তাদের উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এদের সবাইকেই সিরীয় বলে মনে করা হচ্ছে।
মর্মান্তিক পরিণতির শিকার এই ১২ জনের মতো আর কারও ভাগ্যে এমন কিছু ঘটেছে কিনা, সেজন্য উপকূলে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে বলেও জানাচ্ছে তুরস্কের কোস্টগার্ড। সামাজিক যোগাযোগব্যবহারকারীরা বলছেন, সৈকতে শিশুর মরদেহ উদ্ধারের এ ঘটনা অভিবাসী নিয়ে দফায় দফায় নীতি-নির্ধারণে বসা ইউরোপের নেতাদের নতুন করেই ভাবাতে পারে বলে এ ‘ভয়ানক’ ছবিটি প্রচার করা হচ্ছে।