শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫৭ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেক্স : বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম সউদী আরবের ৮৫তম জাতীয় দিবস ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ইং উপলক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত সউদী রাষ্ট্রদূত ড. আব্দুল্লাহ এইচ, এম, আল মুতাইরীর বাণী। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের রব্ আল্লাহ্ তা’য়ালার জন্য আর সালাত ও সালাম মহা বিশ্বস্ত নবী ও তাঁর সমস্ত সাহাবা ও বংশধরদের উপর। সউদী আরবের জাতীয় দিবস একটি মহান দিন যা রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় পর্যায়ে পালন করা হয়। এ বছরও এটা দেশটির একত্রিকরণের পঁচাশিতম বছরের স্মরণে পালন করা হচ্ছে। আর এটা ১৩৫১ হিজরি মুতাবিক ১৯৩২ সালের ইতিহাস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। যেহেতু রাজকীয় সউদী আরবের প্রতিষ্ঠাতা (আল্লাহ তাহার প্রতি রহম করুন) বাদশাহ আব্দুল আযীয বিন আব্দুর রহমান আলে সাউদ দেশটিকে একীভূত করতে সক্ষম হন এবং আরব উপদ্বীপের জনগণকে রাজনৈতিক ও সামাজিক বন্ধনে একত্রিত করেন। এ কথা স্মরণ করে আজ আমাদের অন্তরগুলো গর্ব ও সম্মানের ভরে যায়। যখন আমরা দেখি কালেমা তাওহীদ খচিত পতাকা সউদী আরবের আকাশে পতপত করে উড়ছে, আর এটা আমাদেরকে এক নিকট ইতিহাসের গভীরে ডুব দিতে আহ্বান করে, যাতে আমরা ঘটনা বুঝতে পারি যে, এই পতাকার পিছনে কত ঝড়-ঝঞ্জা পাড়ি দিতে হয়েছে। আর এই পতাকার উত্তোলনকারীগণ আরব বাজপাখি বাদশাহ্ আব্দুল আযীযÑ আল্লাহ তাঁর কবরকে আলোকিত করুনÑ এর নেতৃত্বে তারা উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাই আজকে আমরা সউদী আরবের জাতীয় দিবস উদযাপনের গুরুত্ব অনুধাবন করি। এ দেশ বিচ্ছিন্নতা, উদভ্রান্ততা ও ধ্বংসের সব কিছুকে বিদায় দিয়েছে, যাতে করে এটা সকল অগ্রগতি ও সভ্যতার দরজায় কড়া নাড়ে এবং মহা সম্মানের শীর্ষ চূড়ায় উন্নীত হতে পারে। বাদশাহ্্ আব্দুল আযীয-আল্লাহ তাঁর কবরকে আলোকিত করুনÑ উত্তম বরকতময় জিনিসের ভিত্তি স্থাপন করেছেন। তাঁর পরে তাঁরই সুযোগ্য সন্তানগণ তা করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন। তারা অত্যন্ত গুরুত্ব, ধৈর্য, দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে এই মহাকর্তব্যকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করেন। সুতরাং কথার পূর্বেই কাজ হয়েছে বিরতির পূর্বেই উৎপাদন সম্পন্ন হয়েছে। কাজেই সউদী আরব একটি আলোকবর্তিকার মতোই হয়ে গিয়েছে যা সভ্যতা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অগ্রগতি ও উন্নয়নের নেতৃত্বের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিণত হয়েছে। তাই আমরা যখন আমাদের জাতীয় দিবস উদযাপন করি, তখন সমস্ত মূল্যবোধ, নীতিমালা, ত্যাগ ও অবিরাম প্রচেষ্টাসমূহ উপস্থাপন করি, যেগুলো এ মহান অবয়ব গড়তে সহায়ক হয়েছে। এই পবিত্র ভূমির জন্য আমাদের অন্তরে যে ভালোবাসা ও মূল্যায়ন রয়েছে, আল্লাহর পরে যাদের অবদানে আমাদের এই বরকতময় ভূমিতে কল্যাণ ও শান্তি বিরাজ করছে তাদেরকে গভীরভাবে স্মরণ করি। এটা এই পবিত্র ভূখ-ের উপর আল্লাহ তা’য়ালার এক বিশেষ দয়া যে, তিনি এর মর্যাদা ও বিশেষত্বসমূহের সাথে সঙ্গতি রেখে এর নেতাদেরকে বাছাই করেছেন। এর প্রতিষ্ঠাতার হাতে-আল্লাহ তাকে রহম করুন-এই ভূমি একত্রিত হবার পরে এর কল্যাণ ও অগ্রগতির ধারা আর থেমে থাকেনি। তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর সন্তানগণের হাতে এবং বর্তমান বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আযীযের স্বর্ণযুগ পর্যন্ত অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই সমস্ত ব্যাপারে সউদী আরব যে সভ্যতার ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেছে তা অন্যান্য রাষ্ট্র শত শত বছরেও করতে পারেনি। যদি আমরা এই মহান অর্জন সম্পর্কে বলতে চাই, তাহলে কয়েক খ-ের গ্রন্থের প্রয়োজন হবে। এই দেশ নিরাপত্তা, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যা অর্জন করেছে তা বর্ণনা করা দুঃসাধ্য ব্যাপার, আর তা অগণিত, তাই সেগুলো আঞ্চলিক ক্ষেত্রে স্থিতি, সমৃদ্ধি ও উন্নতির উপমায় পরিণত হয়েছে। এ উপলক্ষে যা বলতেই হবে; তা হলো যে, তা সউদী নাগরিকদের শিক্ষা, পুনর্বাসন ও যোগ্যতা বৃদ্ধি ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তোলার প্রতি বৃহত্তর গুরুত্ব প্রদান করেছে। প্রাথমিক শিক্ষা দেশের সকল প্রান্তরে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। বিদেশে সউদী ছাত্রদের শিক্ষার সুযোগ প্রদান করা হয়েছে, যা আল্লাহর ইচ্ছায় ইতোমধ্যেই ব্যাপক ফলপ্রসূ হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। এ মহান উপলক্ষে আমাদের সকলকে যে বিষয়টি উল্লেখ করতেই হয় তা হলো, সউদী আরব আরব বিশ্ব ও মুসলিম জাহানের জন্য যে বিশাল খেদমত আঞ্জাম দিচ্ছে এটা এদেশের স্বাভাবিক কর্মকা-। সুতরাং এতে অবাক হবার কিছুই নেই। এ দেশ ওহীর অবতীর্ণ হবার স্থান, রিসালাতের সূচনা স্থল এবং মুসলমানদের কিবলা। তাই এ দেশ শুরু থেকেই ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য বিশ্বের আনাচে কানাচে মসজিদ ও নামাজের ঘর তৈরি করেছে। আর উহা মূলত শুরু হয়েছে পবিত্র দুই মসজিদের মাধ্যমেই। এই দুই মসজিদের সর্বযুগের বৃহত্তম সম্প্রসারণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তাই বর্তমানে হজ খুবই স্বাচ্ছন্দময় ও সহজ হয়েছে যা ছিল পূর্বে খুবই কষ্টসাধ্য। এই পবিত্র দুই মসজিদের বিশাল ইমারত প্রত্যেক মুসলমানের গর্বের স্থানে পরিণত হয়েছে। তেমনিভাবে আল্লাহর ঘরের হাজী ও মসজিদে নববী জিয়ারতকারীগণ সকল সুবিধা ভোগ করছেন। আর তাদের খেদমতের কাজকে এই রাষ্ট্র বিশেষ প্রাধান্য দিয়েছে এবং সবকিছু উজাড় করে দিয়েছে, যা দূরের-কাছের সবাই অবলোকন করছে। অতঃপর আল্লাহর কিতাবের মুদ্রন বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত লক্ষ লক্ষ কপি ছাপানোর কাজ হচ্ছে যাতে করে যে যে ভাষাভাষী বা যেখানেই অবস্থানকারী হোক না কেন প্রত্যেক মুসলমান যেন তা অনায়াসে পেতে পারে। আঞ্চলিক ক্ষেত্রে এ নেতৃত্বমূলক ভূমিকার ধারাবাহিকতায় ও মুসলমানদের ব্যাপারে এর গুরুত্ব প্রদানের ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মুসলিম উম্মাহর ব্যাপারসমূহ সহযোগিতা পেয়ে আসছে ও আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে আসছে। এমন কি এটা আরবীয় ও ইসলামী কণ্ঠস্বরের জন্য শক্তিশালী ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিভিন্ন সংস্থা, ফোরাম ও সংগঠনের সাথে সংলাপের ক্ষেত্রে, আর তা আল্লাহ তা’য়ালা একে যে অর্থনৈতিক ও আধ্যাত্মিক অবস্থান দিয়েছেন তার সাহায্যে। আর এই সহযোগিতা বিশেষ করে মুসলিম ও অমুসলিম দেশে দুর্গতদের সহযোগিতায় দ্রুত এগিয়ে আসার মাধ্যমে যেন সউদী আরব সর্বদা প্রতিটি অভাবী ও দুস্থ মানবতার সেবায় অগ্রগামী ও মানবতার রাষ্ট্র হতে পারে। সউদী আরবের প্রতিষ্ঠার যুগ থেকেই এর বৈদেশিক নীতি পবিত্র ইসলামী নীতিমালা ও প্রাচীন আরবীয় বিধি-বিধানের উপর শক্ত ও মজবুত ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠিত এবং এর অনন্য বৈদেশিক নীতির কার্যক্রম হচ্ছে, আরবীয় ইসলামী ঐক্যে সহায়তা প্রদান ও আরবীয় ইসলামী ব্যাপারাদি হেফাযতকরণে কাজ করা ও অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা। আরবী ইসলামীয় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বহির্বিশ্ব কার্যক্রমের মাধ্যমে সউদী আরব বর্তমান বাদশাহর আমলে ইসলামী ব্যাপারে সহায়তা প্রদান ও ইসলাম সংরক্ষণে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করছে এবং এর উন্নত বার্তা এবং ন্যায় ও শান্তির স্বপক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সন্ত্রাস ও উগ্রবাদিতা প্রতিরোধ এবং বিভিন্ন ধর্ম ও সাংস্কৃতিক অনুসারীদের মাঝে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নেতৃত্ব এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রদান করছে। সউদী জাতির জন্য সম সুযোগ-সুবিধা ও ব্যাপক সম্মানজনকভাবে জীবন-যাপনের সুবিধা করে দিয়েছেন। আর এই সমস্ত কার্যাবলী ও পদক্ষেপ তাঁর সমুন্নত চরিত্র ও অনন্য গুণাবলী ও বিশ্বমানের নেতা হিসাবে তাঁর অবস্থানের পরিচায়ক। তেমনিভাবে এটা একটি নেতৃত্বদানকারী দেশ হিসেবে সউদী আরবের অবস্থান নির্ণয়ে অবদান রেখেছে। যা বিশ্ব অর্থনীতির সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী গ্রুপ ২০-এ এর প্রবেশকে সুগম করেছে। সউদী আরব সাহসিকতা, দৃঢ়তা ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন স্পষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে সন্ত্রাস দমন করছে, যা দায়িত্বশীল লোকদের দৃঢ়তা ও জাতীয় নেতৃত্বের সাহসী সিদ্ধান্তের কারণে অপূর্ব সফলতা অর্জন করেছে, যা সবাই প্রশংসা করেছে আর এটা বিশ্ববাসীর সামনে একটি উপমা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে আমি খাদেমুল হারামাইন আল শরীফাইন বাদশাহ আব্দুল্লাহর মহানুভব পৃষ্ঠপোষকতায় ২০০৫ সালে রিয়াদে অনুষ্ঠিত সন্ত্রাস মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের কথা উল্লেখ করতে চাই, যা বাহ্যত অপরাধ প্রতিরোধে সঠিক নেতৃত্বের গুরুত্বারোপ করে। সউদী আরব বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহের জাতীয় আয়ের শতকরা ০.৭% হারে সাহায্য প্রদান করে। আর এটা জাতিসংঘভুক্ত দাতা দেশসমূহ যা দান করে তার সমপরিমাণ। সউদী আরব উন্নয়নশীল দেশগুলোতে তার জাতীয় আয়ের ৫.৪৫% প্রদান করে। আর এই পরিমাণটা শিল্পোন্নত বড় বড় দেশগুলোর বৈদেশিক সহায়তার চেয়েও বেশি। সউদী উন্নয়ন তহবিল উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সউদী উন্নয়নমূলক সহায়তা প্রদান প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা হয়। আরব ও ইসলামী রাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দানে যেসব দেশ এগিয়ে আসে তাদের মধ্যে সউদী আরব অগ্রগামী। আর এটা খাদিমুল হারামাইন আর শরীফাইন কর্তৃক প্রদত্ত সংস্থা ও জাতীয় কমিটির মাধ্যমে সম্পাদিত হয়।সউদী-বাংলাদেশ সম্পর্ক বিষয়ে যা বলতে হয়, তা হলো এই সম্পর্কটি দৃঢ় ও চমৎকার। সউদী আরব স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের সকল দল, নেতা ও সরকারের সাথে সম্পর্ক রেখেছে। সউদী আরবের প্রতিটি সেক্টরে বর্তমানে ২৫ লক্ষ্যের অধিক বাংলাদেশী কাজ করছে। তারা উন্নয়ন ও দেশ গঠনের অংশীদার। এখনও সউদী আরব অনেক শ্রমিক আমদানি করছে। ইতোমধ্যেই সউদী বাদশাহ অবৈধ বাংলাদেশী শ্রমিকদের বৈধ করার রাষ্ট্রীয় ফরমান জারি করেছেন এবং কফিল পরিবর্তনের সুযোগ প্রদান করেছেন। সউদী জনগণ ও এর নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশী জনগণকে সত্যিকারভাবে মূল্যায়ন করেন। আল্লাহর নিকট কামনা করি তিনি যেন বাংলাদেশের সরকার ও জনগণকে সর্বদা নিরাপদে রাখেন এবং আরও বেশি উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি প্রদান করেন। পরিশেষে, আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছিÑ আল্লাহ যেন এ দেশের সম্মান, নেতৃত্বের মর্যাদা ও জনগণের উন্নতি সর্বদা দান করেন। আর আমাদের সকলকে নাগরিক হিসেবে পরিপূর্ণভাবে দায়িত্ব পালন করার তওফিক দেন, যাতে করে আল্লাহ’র রহমতে আমাদের দেশ সম্মানের শীর্ষ স্থানে পৌঁছতে পারে। আল্লাহতাআলা আমাদের বাদশাহ জাতির কান্ডারী সালমান বিন আব্দুল আযীয ও যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন নায়েফ বিন আব্দুল আযীযকে হেফাজত করেন এবং তাঁদেরকে সুস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দান করেন। ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পদ হিসেবে তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখেন।ওয়াসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।বাংলাদেশে নিযুক্ত সউদী রাষ্ট্রদূতআব্দ্ল্লুাহ এইচ, এম, আল মুতাইরী
সূত্র : দৈনিক ইনকিলাব