রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৮ পূর্বাহ্ন
মুফতি মাওলানা আব্দুল মুনতাকিম:
আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া, তুর্কী ভিত্তিক ঐতিহাসিক সোলায়মানিয়া মাদ্রাসার দাওয়াতে আমাদের সফর অব্যাহত রয়েছে ।আমরা প্রথমে সোলায়মানিয়া মাদ্রাসা পরিচালিত হযরত আবু আইয়ূব আনসারী রা. হিফযুল কোরআন মাদ্রাসা দেখতে যাই। মাদরাসাটি অনেক আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিন শতাধিক বছর পুরনো বলা হয়। কিন্তু তুর্কী খেলাফতের অবসানের পর এই প্রাচীন বরকতময় প্রতিষ্ঠানটিকে আবর্জনা ফেলবার জায়গায় পরিণত করা হয়েছিল। এরপর সোলায়মানিয়া মাদ্রাসার উদ্যোগে এ ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠানটিকে স্বমহিমায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমানে পরিচ্ছন্ন পরিবেশে মানসম্পন্ন একটি হিফজ মাদ্রাসার রুহানী আমেজ যেমন মাদ্রাসাটির পুরাতন ইমেজ ফিরিয়ে এনে দিয়েছে, একই সাথে সোলায়মানিয়া মাদ্রাসার উন্নত রুচিবোধের একটি সুন্দর নমুনাহিসেবে ও প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বক্ষণ কোরআনুল কারীমের অক্ষয় প্রশ্রবন উৎসারিত রয়েছে। এখানে সকালের নাশতা সেরে কাফেলার মধ্যমণি হযরত শায়খুল হাদীস মাওলানা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী সম্মিলিত মোনাজাত করেন। এখানে সকালের নাশতা সেরে কাফেলার মধ্যমণি হযরত শায়খুল হাদীস মাওলানা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী সম্মিলিত মোনাজাত করেন। এখান থেকে হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রা.-এর মাজার মোবারক একেবারেই নিকটে। আমাদের আজকের মূল উদ্দেশ্য হযরতের মাকবারার যিয়ারত। অতএব আমরা দ্রুত যিয়ারতের উদ্দেশে মাকবারায়ে আবু আইয়ুব আনসারী রাঃ চলে যাই। হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রা.-এর প্রতি অনেক গুলো কারণে নিখাদ ভালোবাসা ও নির্ভেজাল ভালো লাগা আকাশচুম্বি হতে চায়। হিজরতে মদীনার পর পর রাসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রথম মেযবান হওয়ার সৌভাগ্য এমনি একটি মর্যাদাপূর্ণ অধ্যায়, যা তাঁর জীবন কে অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামের তুলনায় অসাধারণ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী করে দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মেযবান হওয়ার সৌভাগ্য স্বয়ং আল্লাহ তাআলার মনোনয়নের মাধ্যমে তাঁর অর্জন হয়েছিল। তিনি রাসূলে কারীম সা-এর সাথে প্রতিটি পবিত্র যুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের দুর্লভ ফজীলতের অধিকারী ও ছিলেন। কনস্তানতিনোপল অভিমুখে অভিযান পরিচালনার উপর জান্নাতের সুসংবাদ হাদীস শরীফে দেয়া হয়েছে । তাঁর অন্তরে এই ফজীলত অর্জনের অদম্য বাসনাই তাঁকে এই দুর্গম ও সুকঠিন যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে উদ্বুদ্ধ করেছে। হযরত উসমান (রাঃ)র খেলাফত কালে হযরত মুআবিয়া রাঃ কর্তৃক প্রেরিত ইস্তাম্বুল অভিযানে তিনি যে আবেগ ও ভালবাসা এবং ঈমানী চেতনার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে অংশগ্রহণ করেছেন, এর নজীর ইতিহাসে বিরল বলা যায়। শাহাদাতের অদম্য আকাংখা পোষণ করেই তিনি ক্ষান্ত ছিলেন না, তিনি বলেছিলেন যে তাঁর লাশ যতদূর অভিযান অব্যাহত থাকবে ততদূর নিয়ে গিয়ে দাফন করা হয়, যাতে যমীন এ মর্মে স্বাক্ষ বহন করে যে অন্তত নিথর দেহটা ও অভিযানের শেষ স্থান পর্যন্ত সংগ দিয়েছে । এমন “আশিকানা” ঈমানী আবেগ তাঁর দ্বীনে ইসলামের জন্য কোরবানির প্রকৃষ্ট প্রমাণ বলতে হয়। যাইহোক এসব কারণে আমরা আবেগ ও ভালবাসাসিক্ত অন্তরে হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রাঃ র মাকবারা যিয়ারত করি। আল্লামা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী দামাত বারাকাতুহুর সান্নিধ্য এ সফর কে আমাদের জন্য বিরাট নিয়ামত বানিয়ে দিয়েছে। তিনি সংগত কারণেই এসব পবিত্র জায়গায় পুরুষ মহিলাদের এক সংগে অবাধ যাতায়াতের সিস্টেম নিয়ে চিন্তামগ্ন। মুসলমানদের সার্বিক দ্বীনি অবস্থার অবনতি দেখে উম্মতের দরদী একজন রাহবার ও কাণ্ডারি ব্যক্তিত্বের অন্তরে কষ্টের উদ্রেক এবং যবানে তিক্ততার উন্মেশ হওয়াটা নেহায়েত স্বাভাবিক ব্যাপার। দ্বীনি অবস্থার অবনতি দেখতে থাকার কারণে আজ আমাদের মনে কোন কষ্টের অনুভূতি টুকু ও যেন শেষ হয়ে যাচ্ছে। যাইহোক আল্লাহ ওয়ালাদের সান্নিধ্যে অবস্থান নিজের মধ্যে দ্বীনের ফিকির জীবন্ত রাখতে কতটুকু সহায়ক যে প্রমাণিত হয়, তা হযরত মুহাদ্দিস সাহেবের সাহচর্যে থাকার দ্বারা কিছুটা হলেও অনুধাবন করা সম্ভব হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা এই ওলিয়ে কামিল ও মুর্শিদে বরহক এর ছায়া আমাদের উপর যেন দীর্ঘায়িত করেন আমীন। হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রাঃ-এর মাকবারা যিয়ারত শেষে বিকেলে আমরা উম্মাহর হৃদয়ের স্পন্দন ইস্তাম্বুল বিজয়ী বীর সেনানী হযরত সুলতান মুহাম্মদ ফাতেহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মাযার যিয়ারত ও তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত দর্শনীয় ঐতিহাসিক মসজিদে মাগরিবের নামাজ আদায় করার জন্য গমন করি। আমাদের সফর অব্যাহত থাকবে আগামী ২৬ জুন পর্যন্ত ইনশাআল্লাহ।