মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৫ পূর্বাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার:
বহুল আলোচিত-সমালোচিত সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়কে দুই দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে দিরাই থানায়। গতকাল জিজ্ঞাসাবাদের দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হয়েছে। এদিকে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির দাবিতে রোববার বিকেল ৫টায় এক বিক্ষোভ মিছিল করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন।
দিরাই থানা সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়কে শনিবার আদালতে নিয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে বিজ্ঞ আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আজ (গতকাল রোববার) জিজ্ঞাসাবাদের দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হয়েছে। ফলে অধিকতর তদন্তের স্বার্থে এখনও মুখ খুলছেন না তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা জানান, রিমান্ড শেষ হলেই বিস্তারিত জানানো হতে পারে।
জানা যায়, দিরাইয়ের আলোচিত রুহেদ হত্যা মামলার প্রধান আসামী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়কে গোপন সংবাদে ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে শুক্রবার রাত ১১টায় সিলেট শহরের মদীনা মার্কেট এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র্যাব-৯ এর একটি আভিযানিক দল। পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় শহরতলির ইসলামপুরস্থ র্যাবের কার্যালয়ে। রাত ৩টায় দিরাই থানায় হস্তান্তর করে র্যাব-৯। এর আগে ২০১৭ সালে উপজেলার জারলিয়া জলমহাল দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ত্রিপল মার্ডার মামলারও আসামী প্রদীপ রায়।
দিরাই থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার উদির হাওর জলমহালের দখল নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে রুহেদ নামে একজন নিহত হয়। এ ঘটনার পাঁচ দিন পর নিহতের ভাই বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। দিরাই থানায় করা ওই মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়সহ ৭৩ জনকে আসামি করা হয়।
২২ অক্টোবর রাতে দিরাই থানায় মামলাটি দায়ের করেন নিহত রুহেদ মিয়ার ভাই সুহেদ মিয়া। এর আগে গত ১৮ অক্টোবর বিকেলে উদির হাওর জলমহালের দখল নিয়ে উপজেলার ভাটিপাড়া দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ওই গ্রামের যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা কাজল নূরের পক্ষের রুহেদ মিয়া (৪০) নিহত হন। আহত হন আরও অর্ধশতাধিক।
অভিযোগ আছে, স্থানীয় একটি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামের জলমহালটি ইজারা নিলেও এর পেছনে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়। তিনিই এটি নিয়ন্ত্রণ করলেও ভাটিপাড়া গ্রামে তার পক্ষের নেতৃত্ব দেন শাহ আলম। সংঘর্ষে নিহত রুহেদ মিয়া কাজল নূরের চাচাতো ভাই। দিরাই থানা অফিসার ইনচার্জ আজিজুর রহমান জানান, হত্যা মামলায় আসামী প্রদীপ রায়কে আইনি প্রক্রিয়ায় সুনামগঞ্জ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারিতে উপজেলার জারলিয়া জলমহালের দখল নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ-যুবলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় পরে প্রদীপ রায়কে প্রধান আসামী করে দিরাই পৌরসভার তৎকালীন মেয়র মোশাররফ মিয়া এবং দিরাই উপজেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান তালুকদারসহ ৩৯ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়। ওই মামলায় বর্তমানে প্রদীপ রায় জামিনে আছেন।
এদিকে রুহেদ হত্যা মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই আজিজুর রহমান জানান, ঘটনার বিষয়ে অধিকতর তদন্তের স্বার্থে দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়কে শনিবার আদালতে নিয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে বিজ্ঞ আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাকে আজ (গতকাল রোববারও) দিরাই থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। তবে তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে কোন তথ্য দিতে অপারগতা জানান।
এদিকে দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়কে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার ও রিমান্ড নেয়ার বিরুদ্ধে দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে গতকাল (রোববার) বিকেল ৫টায় স্থানীয় দলীয় অফিস থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল দিরাই পৌরশহরের সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রতিবাদ সভায় মিলিত হয়। বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এডভোকেট সোহেল আহমদ ছইল মিয়া, দিরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ হাফিজুর রহমান তালুকদার, আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজ-উদ-দৌলা, এডভোকেট অভিরাম তালুকদার, আসাদ উল্লা, শাহজাহান সরদারসহ অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী। বিক্ষোভ মিছিলে দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির দাবিতে শ্লোগান দেয়া হয়।