সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৭ অপরাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার:
প্রায় ২৫ বছর আগে স্থাপিত বিদ্যুতের খুঁটি সরাতে দুই অফিসের রশি টানাটানিতেই সময় পার হচ্ছে। আর রাস্তা প্রশস্ত হওয়ার পর এখন খুঁটিগুলো মধ্যখানে পড়ে যাওয়ায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। ঘটনাটি সুনামগঞ্জের দিরাই পৌরসভার হাইস্কুল রোডের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দিরাই পৌরসভা ঘোষণা হওয়ার আগেই স্থাপিত হয় দিরাইয়ে বিদ্যুৎ লাইন। সে সময় দিরাই বাজারের অনেক রাস্তাই ছিল আকারে ছোট। কিন্তু ১৯৯৯ সালে দিরাই পৌরসভা ঘোষণা হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের অংশ হিসেবে রাস্তাঘাটেরও উন্নয়ন করা হয়। ফলে সাধারণ মানুষ ও যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে অনেক ছোট রাস্তা সংস্কারের কারণে বড় হয়। সাবেক মেয়র আজিজুর রহমান বুলবুলের মেয়াদকালে দিরাই পৌরসভার হাইস্কুল রোডস্থ হরেন্দ্র বর্মণের দোকান থেকে চণ্ডিপুর পর্যন্ত রাস্তা প্রশস্ত করা হলে বিদ্যুতের অনেক খুঁটিই রাস্তার মাঝখানে পড়ে যায়। সেই খুঁটিগুলো সরানোর জন্য শুরু থেকেই স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ দিয়ে আসলেও এখন পর্যন্ত সরানো হয়নি। ফলে এ রাস্তায় প্রতিদিন শত শত মোটর সাইকেল, অটো রিকসা, লাইটেস, কার, ট্রাক, ট্রলিসহ হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। এছাড়া এ রোডে দিরাই উচ্চ বিদ্যালয় থাকায় স্কুল খোলা ও ছুটির সময়ে প্রচুর যানজট সৃষ্টি হয়।
দিরাই পৌরসভার হাইস্কুল রোডের ধান-চাউল ব্যবসায়ি ফজলুল করিম ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী ফনু মিয়া বলেন, আমি এ রোডে প্রায় ২০ বছর ধরে ব্যবসা করে আসছি। এখন পর্যন্ত দিরাই বিদ্যুৎ অফিস বা অন্য কোন অফিসের কেউ এই ঝুঁকিপূর্ণ খুঁটিগুলো সরাতে আসে নি। তার মতে, দিরাই পৌরসভা স্থাপিত হওয়ার আগেই এ খুঁটিগুলো রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এখানে জায়গার কোন সমস্যা নেই। বর্তমানে যে খুঁটি রাস্তার উপর রয়েছে, সেটিকে উত্তর দিকে নিয়ে গেলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। জায়গা নিয়ে ঝামেলার কথা বলা স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসের খামখেয়ালিপনা বলেও তিনি মনে করেন।
এ রোডের অনেক ব্যবসায়ি ও সাধারণ জনগণের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে দিরাই হাইস্কুল সংলগ্ন, হরেন্দ্র বর্মণের দোকানের পূর্বে ও এর মধ্যবর্তী স্থানে ৩টি ট্রান্সফরমার রয়েছে। এগুলোর একটি খুঁটি রাস্তার মধ্যখানে থাকায় সাধারণ জনগণ ও যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করে। যে কোন সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায়ভার কে নেবে বলেও তারা মন্তব্য করেন।
দিরাই পৌরসভার মেয়র বিশ্বজিৎ রায় বলেন, সাবেক মেয়র মোঃ মোশাররফ মিয়াসহ আগেও আমরা এই খুঁটিগুলো সরাতে স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ করেছি। তারা রাস্তার মধ্যখানের খুঁটিগুলো সরাতে আমাদেরকে বার বার আশ্বস্ত করলেও এখন পর্যন্ত কোন সুরাহা হয়নি।
দিরাই বিদ্যুৎ সরবরাহের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল মালেক এ প্রতিবেদককে জানান, বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন কিংবা খুঁটি উত্তোলন আমাদের কাজ না। তারপরেও আমি আসার পর অভিযোগ পেয়ে সরেজমিন গিয়ে দেখে জানতে পারলাম, এখানে মূলত জায়গা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। খুঁটি তুলে কোথায় স্থাপন করবো, সে জায়গা কেউ দিতে রাজি নয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, মূলত এই কাজটি করে থাকে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে। এখানে আমরা গিয়ে কাজ করতে পারি না। যারা এগুলো স্থাপন করেছে, তারাই খুঁটিগুলো সরাতে হবে বলেও তিনি জানান। তাছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মাসিক মিটিংসহ বার বার লিখিত ও মৌখিকভাবে এ সমস্যার কথা বলেছি।
বিদ্যুৎ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প দিরাইয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিলেট বিভাগীয় প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম জানান, দিরাই বাজারের রাস্তার উপর বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর জন্য আজ পর্যন্ত লিখিত কিংবা মৌখিক কোন অভিযোগ পাইনি। আমি খোঁজ নিয়ে দেখে এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন বলেও তিনি জানান।