মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৭ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেক্স : বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বিরুদ্ধে অবান্তর এবং তীব্র আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে হিন্দু মহাসভা নেতার ফাঁসির দাবি জানিয়েছে ভারতের উত্তর প্রদেশের ক্ষুব্ধ মুসলিমরা। সম্প্রতি ‘অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা’র পক্ষ থেকে এক প্রেস নোটে অবান্তর মন্তব্য করায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার সন্ধ্যার পর হিন্দু মহাসভার নির্বাহী প্রেসিডেন্ট কমলেশ তিওয়ারিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। গত ২৮ নভেম্বর টাইমস সাহিত্য উৎসবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী এবং বিজেপি’র সিনিয়র নেতা অরুণ জেটলি সমকামিতার পক্ষে সাফাই দেন। এ নিয়ে ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট সমকামকে অপরাধ বলে যে রায় দিয়েছিল তাকে ‘পুনর্বিবেচনা’ করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন।
তার মতে, ‘(শীর্ষ) আদালত এ ক্ষেত্রে রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি দেখিয়েছে। যখন দেখা যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ মানুষ এ রকম সম্পর্কে (সমকাম) লিপ্ত হচ্ছেন, তখন বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায় না।’ জেটলি আরো বলেন, ‘বিশ্ব জুড়ে বিচার ব্যবস্থা যেভাবে পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে চলেছে, সেই প্রেক্ষিতে আমি মনে করি ওই রায় ঠিক ছিল না। ভবিষ্যতে একটা পর্যায়ে গিয়ে ওই সিদ্ধান্ত তাদের পুনর্বিবেচনা করে দেখতেই হবে।’
জেটলির এ ধরণের মন্তব্যের পর উত্তর প্রদেশের মন্ত্রী আজম খান ‘আরএসএস স্বেচ্ছাসেবকরা সমকামিতার জন্য বিয়ে করে না’ বলে মন্তব্য করেন। তার মন্তব্যে বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে হিন্দু মহাসভার পক্ষ থেকে নির্বাহী প্রেসিডেন্ট কমলেশ তিওয়ারি এক প্রেস নোটের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে কুমন্তব্য করেন। এর প্রতিবাদে বুধবার উত্তর প্রদেশের শাহরানপুর মাদ্রাসার ছাত্ররা হিন্দু মহাসভা এবং কমলেশ তিওয়ারির বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়।
দারুল উলুমের পক্ষ থেকে কমলেশ তিওয়ারির মন্তব্যকে নিন্দনীয় এবং ঘৃণ্য বলে আখ্যা দিয়ে বলা হয়, এর ফলে দেশের পরিবেশ নষ্ট হবে।
দারুল উলুমের মুহতামিম মাওলানা আবু কাশিম নোমানি বলেছেন, ‘কোনো রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক দল যদি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মর্যাদা নিয়ে বেয়াদবি করে তাকে কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। এটি একটি ইচ্ছাকৃত ষড়যন্ত্র। দারুল উলুম হিন্দু মহাসভার এ ধরণের দৃষ্টিভঙ্গিকে কঠোরভাবে নিন্দা জানাচ্ছে।’ মাওলানা নোমানি আরো বলেছেন, ‘আরএসএস-এর বিরুদ্ধে কোনো নেতার মন্তব্যে হিন্দু মহাসভার যদি কষ্ট হয়, তাহলে তার জবাব রাজনৈতিকভাবে দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু তারা এটা না করে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মর্যাদাকে অবমাননা করেছে।’ এদিকে, শুক্রবার উত্তর প্রদেশের শাহরানপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ক্ষুব্ধ মুসলিমদের পক্ষ থেকে আরএসএস নেতা কমলেশ তিওয়ারিকে ফাঁসির সাজা দেয়ার দাবি জানানো হয়। লখনৌতে শহর কাজী শাহনওয়াজ আলী এবং উলেমাদের প্রধান সংগঠন আহলে সুন্নাতুল জামাত-এর প্রেসিডেন্ট মাওলানা তানভীর উল কাদরির ডাকে মুসলিমরা ইমামবাড়ার কাছে জমা হওয়ার পর সেখান থেকে প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। এ সময় তার ফাঁসির দাবিতে শ্লোগান ওঠে। ক্ষুব্ধ মানুষজন নাজিবাবাদ-হরিদ্বার জাতীয় সড়ক অবরোধ করার পাশাপাশি কমলেশ তিওয়ারির কুশপুতলে লাঠিপেটা করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
অন্যদিকে, বিজনৌরে ‘জমিয়তে শাহাবুল ইসলাম’-এর পশ্চিম উত্তর প্রদেশের মহাসচিব এবং মহল্লার চাহশীরিস্থিত জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আনোয়ারুল হক অভিযুক্তের শিরশ্ছেদ করলে ৫১ লাখ টাকা পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি হিন্দু মহাসভা নেতা কমলেশ তিওয়ারিকে ফাঁসির দাবি করেছেন।
শনিবার সকালে উত্তর প্রদেশের সীতাপুর জেলার তম্বর শহরে এ সংক্রান্ত এক প্রতিবাদ মিছিলকে কেন্দ্র দু’পক্ষের মধ্যে করে অশান্তির জেরে ভাঙচুর এবং পাথর নিক্ষেপের ফলে উত্তেজনা শুরু হলে পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয়। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে হিন্দু মহাসভা নেতার তীব্র আপত্তিকর এবং অবাঞ্ছিত মন্তব্যে ক্ষোভে ফুঁসছেন উত্তর প্রদেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন।