বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৯ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : সৌদিআরবে গৃহকর্মীর কাজ করতে গিয়ে শারীরিক ও পাশবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন মালা খাতুন নামে ঝিনাইদহের এক গৃহবধু। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে তার স্বামী স্থানীয় এক দালালকে মোটা অংকের টাকা দিয়েছেন। কিন্তু ওই দালাল টাকা নিয়েও আত্মগোপনে আছেন। এ অবস্থায় মোবাইল ফোনে সৌদিআরব থেকে আত্মহত্যার হুমকী দিয়েছেন নির্যাতিত গৃহবধু মালা খাতুন।
অভিযোগে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাগান্না ইউনিয়নের সাহেবনগর গ্রামের মোশারফ হোসেনের স্ত্রী মালা খাতুন গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে গত প্রায় ১৫মাস আগে সৌদিআরবে পাড়ি জমান। সেখানে আল-আবলুম এন্টারন্যাশনাল এজেন্সির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির মালিক আব্দুল আজিজ তকে পাঠায়। তার বাড়ি ঝিনাইদহ সদর উপজেলায়। সৌদি প্রবাসি চুয়াডাঙ্গার আব্দুর রশিদ নামে এক দালাল মালাকে আব্দুল আজিজের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাঠিয়ে ছিল বলে তার পরিবার অভিযোগ করেছেন।
মালার স্বজনরা বলেন, সৌদিআরবে মালা পৌছানোর পর তাকে অত্যাচার ও পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে। কাজের নামে বিভিন্ন বাসায় ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়ানো হচ্ছে। আর মালাকে বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে হাত বদল করা হচ্ছে। দালালদের কথা না শুনলে চালানো হচ্ছে তার উপর অমানুষিক নির্যাতন। মোবাইল ফোনে নির্যাতিত মালার বুকফাটা আর্ত্মনাদ শুনেও কিছু করতে পারছেন-না তার স্বামী মোশাররফ হোসেন।
অপরদিকে মালাকে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সৌদি প্রবাসী চুয়াডাঙ্গার রশিদ দালালের ছোট ভাই সজলের কাছে মোটা অংকের টাকা দেওয়া হয়েছে। সজল চুয়াডাঙ্গা কৃষি ব্যাংকে চাকুরী করেন। টাকা নেয়ার পর সজল গাঢাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগে করেছেন হতভাগা গৃহবধূর স্বামী মোশাররফ হোসেন। মালা তার স্বামীকে জানিয়েছেন, সৌদিআরবে তাকে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই তার উপরে মানসিক ও পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতনের ফলে তার শরীর এখন দূর্বল। হাটাচলাও করতে পারছেন না। কাজ করার মত শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। তাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে না আনলে আত্মহত্যা করা ছাড়া তার কোন উপায় থাকবে না বলে মালা তার স্বামীকে জানিয়েছেন। মালা খাতুনকে সৌদিআরবের রিয়াদ শহরের আল কাসিম রোডের হুরাইভিলা নামক স্থানে রাখা হয়েছে। তাকে ঠিক মতো খাবার দেওয়া হয়না।
এ বিষয়ে আল-আবলুম এন্টারন্যাশনাল এজেন্সির মালিক আব্দুল আজিজ জানান, মালার স্বামীকে বারবার ঢাকায় আসতে বলছি, কিন্তু তিনি আসছেনা না। ঢাকায় আসলেই আলোচনা করে তার স্ত্রীকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।
অপরদিকে মালার স্বামী মোশাররফ হোসেন জানান, ঢাকায় গেলে তাকে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করা হতে পারে বলে তিনি ভয়ে যাচ্ছেন না। এর আগে পোতাহাটি গ্রামের এক গৃহবধূকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তার উপরও একই ভাবে নির্যাতন করা হচ্ছিল। বাদপুকুর গ্রামের মতি দালাল পোতাহাটীর ওই গৃহবধূকে সৌদিআরবে নিয়ে যান। মতির বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের একাধিক মামলা আছে।মতি দালাল এখন পলাতক রয়েছে।
রিনা খাতুন নামে এক যুবতি জানান, সৌদিতে গিয়ে তার উপর নির্যাতন চালানো হয়ে ছিল। তিন মাস থাকার পর রিনা দেশে ফিরে আসেন। সেখানে ২৫ দিন তিনি অভুক্ত ছিল। রিনার উপরও পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়।
এছাড়া মালা খাতুনের স্বামী মোশাররফ তার নাবালক দুই সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে মালাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। মায়ের এই দুরাবস্থার কথা শুনে মালার দুই সন্তানও সর্বক্ষন কান্নাকাটি করছে। বিষয়টি নিয়ে সাগান্না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন আল মামুন জানান, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। মেয়েটিকে দ্রুত ফিরিয়ে আনতে তিনি প্রবাসি কল্যান মন্ত্রনালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।