বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৯ পূর্বাহ্ন
আর্ন্তজাতিক সীমান্ত আইন লংঘন করে মিয়ানমার আবারো সীমান্তের জিরো লাইনের আশে পাশে বিক্ষিপ্তভাবে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে মাটিতে বিস্ফোরক পুঁতে রাখায় জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এর আগে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে বিস্ফোরক পোঁতার তৎপরতা চালালেও বর্তমানে বান্দরবানের থানছি আলীকদম সীমান্তে এতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, মিয়ানমার সীমান্তের ৪৫ নং পিলার থেকে ৬০ নং পিলার পর্যন্ত এলাকায় এসব বিস্ফোরকগুলো পুঁতে রাখছে। এই এলাকা বান্দরবানের রুমা থানছি সীমান্ত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা আশারতলী পর্যন্ত। সীমান্তের ৪৫ নং পিলার থেকে ৬০ নং পিলার পর্যন্ত এর বেশির ভাগ সীমান্ত এখনো অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা প্রায় সময় অভিযান চালিয়ে এসব বিস্ফোরক উদ্ধার করলেও মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষিবাহিনী পুনরায় এসব বিস্ফোরক একই জায়গায় পুঁতে রাখছে। এঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় সীমান্ত পাড়ে বসবাসকারীদের মধ্যে আতঙ্ক উৎকণ্ঠার বিরাজ করছে।
গত মঙ্গলবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার আশারতলী সীমান্তের জিরো লাইনের পাশ থেকে বিজিবি সদস্যরা বিশেষ তৈরীর ১৪টি মাইন উদ্ধার করে। বিস্ফোরক গুলো স্থানীয়রা বিস্ফোরক মাইন বললেও নিরাপত্তা বাহিনীর বোমা বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যরা জানান, এগুলোকে হাল্কা বিস্ফোরক আই ই ডি বা ইমপ্রোভাইস্ড এক্লুসিভ ডিভাইস। তবে বোতল, প্লাস্টিকের পাইপ বা বাঁশের মধ্যে বিস্ফোরক ডুকিয়ে এগুলো হাতেই স্থানীয়ভাবে তৈরি করা হয়। এসব বিস্ফোরক বিস্ফোরণের জন্য ব্যাটারী ও সার্কিট ব্যবহার করা হয়। তবে স্থানীয়দের মধ্যে কেউ কেউ বলছে সীমান্তে মানুষ বা বন্যহাতি পারাপার ও জিরো লাইনের পাশে কাটা তাঁর চুরি ঠেকাতে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী এসব বিস্ফোরক পুঁতে রাখছে। তবে বিজিবি বলছে যে কারণে সীমান্তের জিরো লাইনে বিস্ফোরক পুঁতে রাখুক না কেন এটি পুরোপুরি আর্ন্তজাতিক সীমান্ত আইন লংঘন।
বিজিবির রামু ৫০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শফিউল আযম পারভেজ বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, সীমান্তের ৪৬ নাম্বার পিলারের কাছে মিয়ানমার বেশ কিছু বিস্ফোরক পুঁতে রেখেছে খবর পেয়ে বিজিবির সদস্যরা সেখানে অভিযান চালিয়ে ১৪টি আই ই ডি বিস্ফোরক উদ্ধার করে। এগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য ব্যাটালিয়ন হেডকোয়াটারে পাঠানো হয়েছে। মাটিতে পুঁতে রাখা এসব বিস্ফোরক গুলোতে পায়ের আঘাত লাগলেই সেগুলো বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এবিস্ফোরণে প্রাণহানীর ঘটনাও ঘটতে পারে বলে জানা গেছে। বিজিবি সূত্র জানায়, এর আগেও মিয়ানমার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ফাত্রাঝিড়ি রেজু আমতলি, চাকঢালা, আশারতলী দোছড়ির বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় মাটিতে বিস্ফোরক পুঁতে রাখে। ২০০১ সালে মিয়ানমার সীমান্তে বিচ্ছিন্নতাবাদী কয়েকটি গ্রুপের তৎপরতা ঠেকাতে ব্যাপকভাবে বিস্ফোরক পোঁতা শুরু করে। পরে সীমান্তে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরকের ঘটনায় সীমান্তে বসবাসকারী অনেকেই পঙ্গুসহ মারাত্মক আহত হয়। বিস্ফোরণের ঘটনায় সে সময় সীমান্ত জরিপ কাজও বন্ধ হয়ে যায়। পরে বাংলাদেশ এর প্রতিবাদ জানালে মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষিবাহিনী বিস্ফোরণ পুঁতে রাখার তৎপরতা বন্ধ রাখে। তবে সীমান্ত পাড়ের বাসিন্দা জানিয়েছে, মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা রাতের আঁধারে বিভিন্ন এলাকার লোকজনদের দিয়ে মাটিতে এসব বিস্ফোরক পুঁতে রাখছে।
এ বিষয়ে বিজিবি’র কক্সবাজার সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আনিসুর রহমান জানান, সীমান্তের জিরো লাইনের কাছে বিস্ফোরক পুঁতে রাখার বিষয়ে মিয়ানমারকে চিঠি দিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তবে তারা এখনো এ বিষয়ে কোনো জবাব দেয়নি। তিনি আরো বলেন, দুদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে আগামীতে পতাকা বৈঠক গুলোতে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে। সীমান্ত সুরক্ষায় বিজিবি সব সময়েই সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে।