সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:০৩ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : ভোট শুরুর আগেই প্রার্থী-সমর্থকদের বাড়িতে হামলা, কেন্দ্রে যেতে বারণ, মামলা, এজেন্টদের গ্রেফতার, প্রিসাইডিং অফিসারদের নানামুখী চাপের মধ্যেই আজ সকাল থেকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৪৪ জেলার ৯২টি উপজেলার ৭২৬ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভোট। এরই মধ্যে অন্তত প্রাণ হারিয়েছে ১০৬ জন। আহত হয়েছে কমপক্ষে ১০ হাজার। গতকালও নির্বাচনী সহিংসতায় আহত হয়েছে শতাধিক। আজ ৫ম ধাপের ভোট গ্রহণের জন্য আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। দায় এড়ানোর জন্যই পূর্বের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহাল রাখা হয়েছে। বিভিন্ন ইউপি থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর আবেদন গ্রহণ করেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটের তফসিল ঘোষণার পর বিভিন্ন কারণে এ পর্যন্ত ১৪ ইউপিতে ভোটগ্রহণ স্থগিত করছে নির্বাচন কমিশন। এদিকে ভোটের আগের দিন দেশের বিভিন্ন ইউপিতে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার হাটফাজিলপুর বাজারে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে নৌকা প্রতীকের ১৫ সমর্থক আহত হয়েছেন। কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় শাহিনুর রহমান (৩৮) নামে এক নৌকার সমর্থককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নড়াইলে কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়ায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হারুন অর রশিদ ও বিদ্রোহী প্রার্থী আমিরুল ইসলাম আমিরের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এর আগে বৃহস্প্রতিবার রাতে ভোলার সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিজয়ী এবং পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থক ও পুলিশের সংঘর্ষের অন্তত ৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এতে আরো ৪০ জন আহত হয়েছে। পঞ্চম ধাপে চেয়ারম্যান পদে ৭২৯ ইউপিতে সর্বমোট ৩২৫৪ জন। এর মধ্যে ১৫টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ১ হাজার ৭২৭ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থী ১ হাজার ৫২৭ জন। রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৭২৬ ইউপিতে ও বিএনপির ৬২৯টি ইউপিতে প্রার্থী রয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি ১৭৭টি, জাসদ ২১টি, বিকল্পধারা ২টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ১৩টি, ইসলামী আন্দোলন ১২২টি, জেপি ২টি, ইসলামী ফ্রন্ট ১১টি, এলডিপি ৬টি, সিপিবি ৫টি, জেএসডি ১টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ৬টি ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ৭টি ইউপিতে প্রার্থী দিয়েছে। এ ধাপে ভোটের আগেই ক্ষমতাসীন দলের ৪২ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন। ষষ্ঠ ধাপে আগামী ৪ জুন ৭২৭ ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে তৃণমূলের এ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে। গতকাল শুক্রবার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা কেন্দ্রে কেন্দ্রে দিয়েছেন ব্যালট পেপার, বাক্সসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম। এক লাখেরও বেশি নির্বাচনী কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন ভোটে। এদিকে পঞ্চম ধাপের এ নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বাড়তি কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। গতানুগতিক ধারায় এবার মোতায়েণ করা হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। মোতায়েন করা হয়েছে দেড় লাখ পুলিশ, আনসার, র্যাব ও আধা সামরিক বাহিনী বিজিবি সদস্য। ইতোমধ্যে তারা সংশ্লিষ্ট এলাকায় টহল দিতে শুরু করেছে। নির্বাচনকে ঘিরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে মাঠে নেমেছে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। একইসঙ্গে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও নানা অনিয়ম ঠেকাতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরাও অপরাধ তদারকিতে মাঠে থাকবেন। ইসি সচিবালয়ের উপসচিব সামসুল আলম জানান, ভোটের দুই দিন আগে থেকে মাঠে নামছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের জন্য বাড়তি কোনো নিরাপত্তা নেয়া হয়নি। তিনি বলেন, এবারের নির্বোচনে সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি মোকাবেলায় আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটেলিয়ন আনসারের সমন্বয়ে প্রতি ইউনিয়নে একটি করে মোবাইল ফোর্স ও প্রতি তিন ইউপির জন্য স্ট্রাইকিং ফোর্স রাখা হয়েছে। অন্যদিকে প্রতি উপজেলায় ২টি করে র্যাবের মোবাইল টিম ও ১টি স্ট্রাইকিং টিম এবং প্রতি উপজেলায় ২ প্লাটুন বিজিবি মোবাইল ও ১ প্লাটুন স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকছে। এছাড়া নির্বাচনে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি মোকাবেলায় বৃহস্পতিবার বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির উপ-সচিব মো. সামসুল আলম রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়েছেন। স্বেচ্ছায় এলাকা না ছাড়লে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এবিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। ভোটের মাঠের সার্বিক নিরাপত্তায় যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে ইসি। ভোটের দিনের পূর্ববর্তী রাত ১২টা থেকে গ্রহণের দিন মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত বেবিট্যাক্সি, অটোরিকশা, ইজিবাইক, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পোসহ সব ধরনের যান্ত্রিক যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ভোটগ্রহণের পূর্ববর্তী তিনদিন থেকে ভোটগ্রহণের দিন মধ্যরাত পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ আছে। এছাড়া ভোটের দিনের পূর্ববর্তী রাত ১২টা থেকে ভোট গ্রহণের দিন মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত লঞ্চ, ইঞ্জিনচালিত সব ধরনের নৌ-যান ও স্পিটবোট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে বলা হয়েছে। তবে ইঞ্জিনচালিত ছোট নৌযান বা জনগণ তথা ভোটারদের চলাচলের জন্য ক্ষুদ্র নৌযান চলাচল নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।