আমার সুরমা ডটকম ডেক্স :
আবদুর রহিম হারমাছি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ উচ্চতার এই টাওয়ার নির্মাণের জায়গা এরইমধ্যে ঠিক করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক। তৈরি হয়েছে নকশাও। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) দুই হাজার ফুটের বেশি উচ্চতার এই ভবন ২০১৮ সালের মধ্যে নির্মাণের আশা করছে সরকার। রাজধানীর অদূরে পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পে এই টাওয়ার নির্মাণ করবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান কেপিসি গ্রুপ। এই গ্রুপের কর্ণধার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কালী প্রদীপ চৌধুরী একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। তার উপস্থিতিতে রোববার কেপিসি গ্রুপ এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে এই টাওয়ার নির্মাণের বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠেয় চুক্তি স্বাক্ষরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত উপস্থিত থাকবেন।
মুহিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পিপিপির আওতায় এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। আমাদের সিলেটের ছেলে বিশ্বখ্যাত নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কেপিসি গ্রুপ গড়ে তুলেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তিনি বড় বড় ভবন নির্মাণ করে খ্যাতি অর্জন করেছেন। “বাংলাদেশে কিছু করার জন্যই তিনি আমার কাছে এই প্রকল্পের জন্য আগ্রহ দেখিয়েছেন। আমরা তার এই সদিচ্ছাকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চাই।” অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ১৪২তলা এই টাওয়ারের নকশা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে এই ভবনের দিকে তাকালে মুক্তিযুদ্ধের কথা মনে পড়বে। “এটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে দুই পাশ থেকেই ’৭১ লেখা ফুটে উঠবে।”
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কেপিসি গ্রুপের কর্ণধার কালী প্রদীপ চৌধুরীর বাড়ি সিলেটে। এই টাওয়ার নির্মাণের জন্য আন্তর্জাতিক নিলাম ডেকেছে রাজউক। আগামী ২৮ জুন এ নিলাম হবে বলে রাজউকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুর রহমান জানান। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাংলাদেশে দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ উচ্চতার এ ভবন নির্মাণের জন্য আগে থেকেই কেপিসি গ্রুপ আগ্রহ দেখিয়ে আসছে। তবে ভবিষ্যতে যাতে কোনো আইনি জটিলতা না হয় সেজন্য এই নিলাম আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নিলামে আন্তর্জাতিক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও অংশ নেবে বলে ধারণা করছেন তিনি।
রাজউকের চেয়ারম্যান বলেন, ভবনটি নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে পূর্বাচলের ১৯ নম্বর সেক্টরে সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট বা সিবিডি অংশে ৬০ একর জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে একর প্রতি জমির ভিত্তিমূল্য ধরা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। নিলাম প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রকল্প এলাকার প্রযুক্তিগত সমীক্ষার (টেকনিক্যাল স্টাডি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের ব্যুরো অব রিসার্চ, টেস্টিং অ্যান্ড কনসালটেশন বিভাগকে। এই প্রকল্পের আইনগত দিকগুলো দেখভাল করছেন ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম।
নিলামের বিষয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাধারণত রাজউক আবাসিক ও প্রাতিষ্ঠানিক প্লটের মূল্য নিজেরাই নির্ধারণ করে থাকে। তবে বাণিজ্যিক প্লটের ক্ষেত্রে নিলামের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ দরদাতাকে জায়গা হস্তান্তর করা হয়। এর আগে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এসব নিলামে অংশ নিলেও এবারই প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই নিলামে অংশ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে এর প্রস্তুতি ও ডকুমেন্টেশনের কাজেও কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। “নিলাম বিষয়ে আমার কাছে যে আইনগত সহায়তা চাওয়া হয়েছিল আমি তা প্রস্তুত করে ইতোমধ্যে রাজউককে দিয়ে দিয়েছি।”
৬০ একর জমির ওপর সুউচ্চ ভবনটি ঘিরে আরও কিছু ছোট-বড় ভবন ও অন্যান্য স্থাপনা থাকবে। ৬০ একর জায়গায় সুউচ্চ ভবনটি ছাড়াও এটিকে ঘিরে আরও কিছু ছোট-বড় ভবন ও অন্যান্য স্থাপনা থাকবে। নিলামের আগে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে নকশা জমা দিতে হবে। নিলামের মাধ্যমে ভবন নির্মাণের দায়িত্ব অন্য প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হলেও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এর সার্বক্ষণিক তদারকিতে থাকবে রাজউক। এর জন্য রাজউকের পক্ষ থেকে ‘ফোকাল পয়েন্ট’ হিসেবে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক উজ্জ্বল মল্লিককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই ভবনটি নির্মাণের জন্য পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের মাস্টারপ্ল্যানেও খানিকটা সংশোধন আনতে হচ্ছে। ভবনটি দুই হাজার ফুটের বেশি উচ্চতার হওয়ায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন কর্তৃপক্ষের অনাপত্তিপত্রের জন্য ইতোমধ্যেই চিঠি দিয়েছে রাজউক।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে কেপিসি গ্রুপের চেয়ারম্যান কালী প্রদীপ চৌধুরী ভবনটি নির্মাণের ইচ্ছা প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী মুহিতের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে কেপিসি গ্রুপের পক্ষে অর্থমন্ত্রী ১০০ একর জায়গার ওপর মূল ভবনসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাগুলো নির্মাণের জন্য গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় নভেম্বর মাসে পূর্বাচলের সিবিডি অংশে ওই জায়গা দিতে রাজি হয়।
রাজউকের কর্মকর্তারা বলছেন, ভবনটিতে আন্তর্জাতিক কনভেনশন, এক্সিবিশন সেন্টারসহ থাকবে হোটেল, থিয়েটার ও শপিং মল। এটিকে ঘিরে তৈরি হবে আরও কয়েকটি ছোট-বড় ভবন এবং অনেক নান্দনিক স্থাপনা। উচ্চতার দিক থেকে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবনটি হচ্ছে দুবাইয়ে অবস্থিত ১৬৫ তলার বুর্জ আল খলিফা। পূর্বাচলে এ ভবনটি নির্মিত হলে তা হবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতার। এটি নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা (১.২ বিলিয়ন ডলার)।
অর্থমন্ত্রী ২ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের যে বাজেট পেশ করেছেন তাতে তিনি এই প্রকল্প সম্পর্কে বলেছেন, “আমি আমার একটি স্বপ্নের কথা বলতে চাই। আমার এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক ও জনবান্ধব একটি প্রকল্প সম্পর্কে সবাইকে বলব।” “আপনারা জানেন, পূর্বাচল ও এর নিকটস্থ এলাকা নিয়ে একটি স্বতন্ত্র মহানগর গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ মহানগরে পিপিপির আদলে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি। “এর মাধ্যমে একটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার, একটি আধুনিক স্পোর্টস কমপ্লেক্স এবং ১৪২তলা বিশিষ্ট আইকনিক টাওয়ার স্থাপন করা হবে।” সে সময় মুহিত জানান, কনভেনশন সেন্টারের মূল মিলনায়তনে পাঁচ হাজার লোকের বসার ব্যবস্থা থাকবে। স্পোর্টস কমপ্লেক্সের মূল স্টেডিয়ামের ধারণ ক্ষমতা হবে ৫০ হাজার। ২০১৮ সালে এই প্রকল্প শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।