শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩০ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেক্স : একেই বলে প্রোপাগান্ডা। অপপ্রচার। ঈদে বাড়ি যাচ্ছে হাজারো বাংলাদেশি। উপচেপড়া ভিড় বাসে, ট্রেনে। বাসের ভেতর মোড়ায় হোক। আর ট্রেনের ছাদে হোক। যে যেখানে পারছে উঠে পড়ছে। বাড়িতে তো যেতে হবে। ঈদ বলে কথা। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করার বছরজোড়া আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ছুটে চলা মানুষের এই দৃশ্য শত বিড়ম্বনা সত্ত্বেও নির্মল আনন্দের খোরাক। আর সেই ছবিই কিনা ‘ইউরোপগামী মুসলিম আর্মি’ বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চালিয়ে দিয়েছে ব্রুস পোর্টার নামের এক মার্কিন টুইটার ব্যবহারকারী। বিমানবন্দর স্টেশনে কোনো এক ঈদের আগে ট্রেনের উপচেপড়া ভিড়ের ৩৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও টুইটারে প্রকাশ করেছেন তিনি। সঙ্গে লিখেছেন, ‘দেখুন-ওবামা, মার্কেল দাবি করছে তারা ইউরোপে মুসলিম আর্মির অগ্রযাত্রার গতি থামিয়েছেন কিন্তু তারা মিথ্যা বলছেন।’ শেষে দুটি হ্যাশট্যাগ দিয়ে লিখেছেন, মার্কেলকে লকাপে ঢোকান আর ওবামাকে গ্রেপ্তার করুন।
ওই পোস্টে ঈদে বাড়ির পথে ছোটা বাংলাদেশিদের ভিডিও দিয়ে পক্ষান্তরে এটাই বোঝানোর চেষ্টা করা হলো যে, ইউরোপে দলে দলে ঢুকছে কথিত ‘মুসলিম আর্মি’। পোস্টটি করার পর তা ১৩০০ বার শেয়ার হয়েছে। অনেকে ডাহা এই মিথ্যা বিশ্বাস করেছেন। তবে ভেরকানভাল নামের আরেক টুইটার ব্যবহারকারীর মনে খটকা লেগেছিল। তিনি ব্রুস পোর্টারের ওই টুইটের নিচে তাকে উদ্দেশ্য করে জবাব দিয়েছেন, ‘ইউরোপিয়ান’ এই ট্রেন ভিডিও আসলে বাংলাদেশের। এই টুইটের সঙ্গে তিনি ইউটিউবের একটি ভিডিও’র লিঙ্ক দিয়েছেন। ৮ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের এই ভিডিও থেকেই কিছু অংশ কেটে নিয়ে ৩৭ সেকেন্ডের ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। দুটি ভিডিওতেই এটা স্পষ্ট যে ভিডিওটি ধারণ করা বাংলাদেশে। ঢাকার বিমানবন্দর ট্রেন স্টেশনে। রাস্তার দু’পাশে বাংলায় লেখা পোস্টার দৃশ্যমান। আর এ ভিডিওটিকেই ইউরোপ বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে!
ফ্রান্স২৪ এর একটি প্রতিবেদনের বদৌলতে বিষয়টি সর্বপ্রথম গণমাধ্যমে আসে। এতে ইউরোপ সীমান্তে কথিত ‘মুসলিম আর্মির’ বানোয়াট ভিডিও প্রচারণা নিয়ে সাবধান থাকতে বলা হয়। তাদের অনলাইনে প্রকাশিত ওই রিপোর্টে আরো বলা হয়, অনেক বানোয়াট তথ্য, বিশেষ করে ভুয়া ছবি প্রচার করা হচ্ছে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। এর সব থেকে সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো ১০ই সেপ্টেম্বর ব্রুস পোর্টার নামে মার্কিন এক টুইটার ব্যবহারকারী একটি ভিডিও শেয়ার করেন। এতে দেখা যায় চলন্ত ট্রেনে উপচেপড়া ভিড়। ট্রেনের ছাদেও মানুষ। দাবি করা হয়, ইউরোপে ‘মুসলিম আর্মি’র অগ্রযাত্রা ঠেকাতে ব্যর্থ বিশ্ব নেতারা।
ব্রুসের টুইটার অ্যাকাউন্টে তার পরিচয় হিসেবে লেখা আছে তিনি একজন উদ্যোক্তা, ক্রীড়াবিদ এবং পর্যটক। তার আগে করা টুইটগুলোর দিকে চোখ বোলালেই স্পষ্ট হয় যে হিলারি ক্লিনটনকে ঘৃণা করেন তিনি। ভালোবাসেন ডনাল্ড ট্রাম্পকে। আর তিনি নিশ্চিত যে, ইউরোপকে ধ্বংস করে দিচ্ছে মুসলিমরা। আর খুব শিগগিরই তারা যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তার এই জেনোফোবিক (বিদেশিদের সম্পর্কে অহেতুক ভয়, ঘৃণা) দৃষ্টিভঙ্গি ইতিমধ্যে তার টুইটার অ্যাকাউন্টে ৬০ সহস্রাধিক অনুসারীকে আকৃষ্ট করেছে।
তার ওই টুইটের নিচে ভেরকানভাল নামের আরেক টুইটার ব্যবহারকারী মূল ভিডিওটি প্রকাশ করেছেন যেখান থেকে সেটি নেয়া। ওই ভিডিওর শুরুতেই ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে, ঢাকার রাজধানীর একটি ট্রেন স্টেশন থেকে দৃশ্যটি ক্যামেরায় ধারণ করা। ঈদের আগ দিয়ে হাজারো মানুষ শহর ছেড়ে নিজেদের পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে এভাবেই বাড়ি যায়। ২০১৫’র সেপ্টেম্বরে মূল ওই ভিডিওটি ঈদের সময় ইউটিউবে পোস্ট করা হয়েছে। ভিডিওটি ওই বছর ঈদের হোক বা না হোক, সেটা যে ঢাকার ট্রেন স্টেশন থেকে ধারণ করা সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
ফ্রান্স২৪ এর প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়েছে, ভিডিওটি ধারণের তারিখ সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত না হতে পারলেও এটা সহজেই বলা যায় যে তা ইউরোপ থেকে এটা ধারণা করা নয়। আশপাশের সাইনবোর্ডগুলোর দিকে লক্ষ্য করুন। সেখানে ল্যাটিন বা সিরিলিক অক্ষরে লেখা নয় যা ইউরোপে ব্যবহার করা হয়। এটা বাংলা বর্ণমালা যা বাংলাদেশে ব্যবহার করা হয়।