শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:২৪ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেক্স: দিরাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, দিরাই পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সম্প্রতি দায়ের হওয়া ৩ খুনের মামলার আসামী। এরা ৩ জনেই সোমবার দিরাই উপজেলা সদরের একটি সমাবেশে বক্তব্য দেবেন বলে মাইকে প্রচার করা হয়। এই প্রচারণা শুনে পুলিশ, র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সমাবেশের আশপাশে অবস্থান নেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এরা কেউ-ই সমাবেশে আসেননি। তবে সমাবেশ মঞ্চ থেকে গণমাধ্যমকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের উদ্দেশ্যে লিখিত বক্তব্যে উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি অ্যাড. সোহেল আহমদ তালুকদার ১১টি দাবী ও প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন এবং তাদের প্রস্তাবনাকে গুরুত্ব দেবার জন্যও মঞ্চ থেকে অনুরোধ জানানো হয়।
গত ১৭ জানুয়ারি দিরাই উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরের জারলিয়া জলমহালে বন্দুক যুদ্ধের ঘটনায় ৩ জন নিহত হয়। পরে এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি মামলায় ৬৮ জনকে আসামী করা হয়। একপক্ষের মামলায় বাদী হন একরার হোসেন নামের এক যুবলীগ নেতা। এই মামলায় দিরাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান তালুকদার, দিরাই পৌরসভার মেয়র মো. মোশারফ মিয়া, দিরাই উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রদীপ রায়, দিরাই প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান লিটনসহ ৩৯ জনকে আসামী করা হয়।
দক্ষিণ নাগেরগাঁও মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ধনঞ্জয় দাস বাদী হয়ে একরার হোসেনসহ ২৯ জনকে আসামী করা হয়।
জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের আসামী করায় দিরাই উপজেলায় গত ২২ জানুয়ারি থেকে লাগাতার বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করছে বিভিন্ন সংগঠন। সোমবার দিরাই উপজেলা আওয়ামীলীগের উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ আহ্বান করা হয়।
সমাবেশে হাফিজুর রহমান তালুকদার, মো. মোশারফ মিয়া ও প্রদীপ রায় বক্তব্য দেবেন বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়। বেলা ১১টা থেকেই দিরাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সমাবেশে মিছিল করে আসতে থাকেন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী এবং এই ২ জনপ্রতিনিধির সমর্থকরা। সমাবেশের প্রচারণা শুনে সমাবেশ স্থলের আশপাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ এবং র্যাবও অবস্থান নেয়। বিকাল ৩টায় সমাবেশ শুরু হলেও দলীয় এই দ্ইু জনপ্রতিনিধি এবং প্রদীপ রায় উপস্থিত হননি।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আছাব উদ্দিন সর্দারের সভাপতিত্বে এবং দপ্তর সম্পাদক বিকাশ রায় ও যুব লীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মিয়ার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন-সহ সভাপতি অ্যাড. সোহেল আহমদ ও সিরাজদৌলা তালুকদার, দিরাই প্রেসক্লাব সভাপতি হাবিবুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক অভিরাম তালুকদার, ইউপি চেয়ারম্যান শিবলী আহমেদ বেগ, ইউপি চেয়ারম্যান রেজওয়ান খান, ইউপি চেয়ারম্যান শাজাহান কাজী, যুবলীগ নেতা রঞ্জন রায়, কৃষক লীগের আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম, শ্রমিক লীগের সভাপতি আবুল কাশেম, ছাত্রলীগের সভাপতি উজ্জ্বল চৌধুরী প্রমুখ।
ঘোষণা দেবার পর এই তিন নেতা সমাবেশে উপস্থিত না হওয়ার বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি সিরাজদৌলা তালুকদার বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও প্রদীপ রায় যথা সময়ে সমাবেশস্থলে আসতে না পারায়, আমরা অন্যরা সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছি, কেন তারা আসতে পারলেন না এই বিষয়টি জানতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করাও সম্ভব হয়নি’।
সমাবেশে লিখিত বক্তব্যে অ্যাড. সোহেল আহমদ ১১টি দাবী ও প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। এগুলো হচ্ছে-জারলিয়া নদী জলমহালে ঐ দিন সংঘর্ষে নিহতরা কেন এসেছিল এবং এরা কোন পক্ষের গুলিতে নিহত হয়েছে, এর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। ঐ ঘটনার সময় হাফিজুর রহমান তালুকদার, মোশারফ মিয়া তাদের অফিসে সভা করছিলেন, প্রদীপ রায় ছিলেন সংসদ ভবনে, তারা কীভাবে আসামী হলেন তদন্তের মাধ্যমে খুঁজে বের করতে হবে। পুলিশ প্রশাসন অনুসন্ধান না করেই মামলা নিয়েছে। এ কারণে থানার ওসির উপর এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ। জলমহালটি দক্ষিণ নাগেরগাঁও মৎস্যজীবী সমিতির নামে বন্দোবস্ত দেওয়া হলেও তাঁদের কাউকে আসামী বা স্বাক্ষী কোনটাই করা হয়নি। লোকমুখে শোনা গেছে একরার বাহিনী ভাড়াটিয়া খুনীদের দিয়ে জলমহাল দখলের জন্য ঘটনাটি ঘটিয়ে কুচক্রি মহলের ঈশারায় জনপ্রতিনিধি, আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিককে আসামী করেছে। একরারের এক ভাই কামিল জামায়াতের সঙ্গে যুক্ত, আরেক ভাই বদরুল আজাদ রানা সিলেটে ছাত্রদলের অস্ত্রধারী ক্যাডার। ঘটনার সময় সে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে সিলেট থেকে এসেছিল বলে লোক মুখে শোনা যায়। জলমহালের বন্দোবস্তপ্রাপ্ত সমিতির কাউকে আসামী করা হয়নি। অথচ, বিভিন্ন গ্রামের নিরপরাধ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের আসামী করা হয়েছে। ঘটনার পর পরই আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তিনি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করার বিষয়ে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে একরার বাহিনীকে দিরাই থেকে অস্ত্র দেওয়া হয়েছে বলে লোকমুখে শোনা যায়, এটিও তদন্ত হোক’।
———————————————————————————–
‘দিরাই উপজেলা আওয়ামীলীগের বক্তব্য’
গত ৩০ জানুয়ারি ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ সোমবার দুপুরে সুনামগঞ্জের দিরাই থানা পয়েন্টে উপজেলা আওয়ামীলীগের উদ্যোগে দিরাইয়ে সংঘটিত তিন হত্যা মামলায় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও সাংবাদিককে আসামি করার প্রতিবাদে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে আসামিগণ উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তারা আর আসেন নি। সমাবেশ থেকে ‘দিরাই উপজেলা আওয়ামীলীগের বক্তব্য’ শিরোনামে উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি সোহেল আহমদ স্বাক্ষরিত ১১ দফা সম্বলিত একটি কাগজ সাংবাদিকদের কাছে সরবরাহ করা হয়। তা হুবহু নিুে তুলে ধরা হলো।
১/ সমাবেশে আগত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন।
২/ ১৭/০১/২০১৭ ইং তারিখ জারলিয়া নদী জলমহালের ঘটিনায় ০৩ জন লোক মারা যায় এবং অন্যরা আহত হয়। তারা কেন ঐ ফিসারতে আসে এবং কোন পক্ষ গুলি করে, কার গুলিতে তারা মারা যায় তাহা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করা।
৩/ উক্ত ঘটনার সময় জনপ্রতিনিধি হাফিজুর রহান তালুকদার ও পৌর মেয়র মোশারফ মিয়া তাদের নিজ নিজ অফিসে কর্মরত ছিল এবং সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় ঐ সময় ঢাকাতে জাতীয় সংসদে ছিল। দিরাই প্রশাসন তাহা জানেন, তার পরও তারা ঐ মামলায় আসামী হয়েছে তার মূল রহস্য তদন্তের মাধ্যমে বের করা।
৪/ পুলিশ প্রশাসন অনুসন্ধান করার পর মামলা নেয়া উচিত ছিল। তা করা হয়নি এতে আমাদের ধারণা বর্তমান ওসি কর্মকান্ড নিয়ে এলাকাবীস ক্ষুদ্ধ। তাই তার প্রত্যাহর দাবী করছি।
৫/ ফিসারী নিয়ে ঘটনা ফিসারীর বা সমিতির কোন লোকজনকে আসামী বা সাক্ষী কোনটাই করা হয়নি কেন? তাও তদন্তের মাধ্যমে বের করা।
৬/ ২৭/১২/১৬ইং তারিখ দিরাই আইন শৃঙ্খলা কমিটিতে এই ফিসারী নিয়ে আলোচনা ক্রমে সিদ্ধান্ত হয় প্রয়োজনে র্যাব বাহিনী দিয়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা। কিন্তু ওসি তা বাস্তবায়ন করলে হয়ত এই ঘটনা ঘটত না।
৭/ এলকার লোক মুখে শোনা যায় এশরার বাহিনী ভাড়াটিয়া খুনি এনে জারলিয়া নদী দখল করার জন্য উক্ত ঘটনা ঘটিয়ে কুচক্রী মহলের ইশারায় আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিবৃন্দকে আসামী করেছে।
৮/ একরার তার এক ভাই জামায়ত করে ও অন্য ভাই রানা সিলেট ছাত্র দলের অস্ত্রধানী ক্যাডার। সে ঘটনার সময় অবৈধ অস্ত্র নিয়ে সিলেট থেকে এসেছিল বলে লোকে মুখে শোনা যায়। তাহা তদন্ত করে বের করা।
৯/ জলমহাল বন্দোবস্ত প্রাপ্ত সমিতির লোককে আসামী করা হয়নি। অথচ বিভিন্ন গ্রামের নিরপরাধ লোকজনকে বেচে বেছে আসামী করেছে।
১০/ উক্ত ঘটনার পরপরই আমরা আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এর সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করার বিষয়ে পুলিশের উর্ধ্বতন অফিসারকে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে আমাদেরকে আশ্বস্থ করেছেন।
১১/ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে একরার বাহিনীকে মহায়তা করার জন্য দিরাই হতে অস্ত্র দেয়া হয় বলে লোকমুখে শোনা যায় তাহা তদন্ত করা হোক।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন।
স্বাক্ষরিত-সোহেল আহমদ, সহ-সভাপতি, আ/লীগ, ৩০/১/২০১৭