বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১৮ পূর্বাহ্ন
আফতাব চৌধুরী
রঙিন খাবার মানে প্রাকৃতিকভাবে রঙিন খাদ্যদ্রব্য, যা আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। রঙিন শাকসবজি ও ফলমূলে নানা ধরনের স্বাস্থ্যবর্ধক পুষ্টিদ্রব্য থাকে। যেমন-ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ভিটামিন এ, থিয়ামিন, রাইবোফ্লেভিন, ফোলিক অ্যাসিড, আয়রন, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, কেরাটিনয়েড এবং বিভিন্ন ফাইটোকেমিক্যাল ইত্যাদি। এছাড়াও প্রাকৃতিক খাদ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে পানি এবং স্বাস্থ্যবর্ধক আঁশ। বেশিরভাগ শাকসবজি ও ফলমূলে চর্বি ও সোডিয়াম কম মাত্রায় থাকে। ক্যালরির পরিমাণও কম থাকে এ-ধরনের খাদ্যে। কাজেই প্রাকৃতিকভাবে রঙিন খাবার শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে। অবশ্য, মিষ্টি আলু, আলু, মাটি আলুর কা-, কাঠ আলু, কচু, চীনা আলু, আম, কাঁঠাল, সবেদা ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে। সবুজ শাকসবজির মধ্যে পুদিনা, ধনে পাতা, পালং ইত্যাদিতে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে। সবুজ শাকে যথেষ্ট পরিমাণের ম্যাগনেসিয়াস ও পটাসিয়াম থাকে। এছাড়াও এগুলোতে চর্বি ও সোডিয়ামের পরিমাণ সামান্য। যে কোনো সবুজ শাক হৃদপিন্ডের সুরক্ষা করে। সম্প্রতি গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, শাকসবজি ও ফলমূলে ফাইটেকেমিক্যাল নামের এক দ্রব্য প্রচুর পরিমাণে থাকে। এগুলো অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, প্রদারোধী, ব্যাক্টেরিয়ারোধী এবং প্রতিরোধী শক্তিবর্ধকের কাজ করে। ফাইটোকেমিক্যাল থাকা খাদ্য- * ফ্ল্যাভোনলস : লেবু, কমলা, প্লাম, পিচ, আপেল, অ্যাপরিকট, সবুজ শাকসবজি, হলুদ ক্যাপসিকাম এবং ব্রকোলিতে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনলস থাকে। * লেরিংজেনিন : কমলা, জাম্বুরা, মৌসুম্বি ইত্যাদি ফলে যথেষ্ট পরিমাণের লেরিংজেনিন থাকে। রক্তের কোলেস্টরেলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এটি। * অ্যান্থোসায়ানিনস : লাল আলু, ডালিম, ষ্ট্রবেরি, চেরি ও প্লামে যথেষ্ট পরিমাণে থাকে। এটি হৃদপিন্ড ও স্নায়ুতন্ত্রের সুরক্ষা করে। * বিটাক্যারোটিন : আম, আমজাতীয় হলুদ ফল, লাউ, গাজর ইত্যাদি সবজি এবং শাকে যথেষ্ট বিটাক্যারোটিন থাকে। আমাদের শরীরে এটি ভিটামিন এ’তে পরিণত হয়। এটি ক্যানসার রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। * লাইকোপিন : টমোটো, তরমুজ ইত্যাদি লাল ফলে লাইকোপি থাকে। এটি প্রোসেস্ট গ্লান্ড ক্যানসার এবং হৃদরোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। * ফিজেটিন : স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, আপেল, আঙুর এবং পিয়াজে ফিজেটিন থাকে। এটি বার্ধক্য রোধ সহায়ক। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রকৃতিকভাবে নিরাময় করতে সবুজ শাকসবজি তথা আঁশ জাতীয় সবজি ও ফল খান। এগুলোতে বিদ্যমান প্রচুর পরিমাণে পানি ও আঁশ খিদে মেটায়। এতে ক্যালরিও কম থাকে। ফলে ওজনও হ্রাস হয় তাড়াতাড়ি। শাকসবজি ও ফলমূলে টাইপ টু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ তথা প্রতিরোধী ক্ষমতা থাকে। এছাড়াও এগুলো খাদ্যনালী, পাকস্থলী, মলাশয়, ফুসফুস এবং ফেরিংসের ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। হৃৎপিন্ড এবং রক্ত সঞ্চলন তন্ত্রেরও সুরক্ষা করে এগুলো। এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল খেলে মগজে অ্যামাইলয়েড প্লাক সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়। এর ফলে অ্যালঝাইমার রোগ হতে পারে। অন্য এক গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, শাকসবজি ও ফলমূল চোখে ছানি পড়া,ডাইভার্টকুলোসিস, ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ এবং উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদিরও সম্ভাবনা হ্রাস করে। স্বাস্থ্য ভাল রাখতে প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল খান। এগুলো শুধু পুষ্টিদায়কই নয়, সব দিকে স্বাস্থ্য রক্ষা করে। প্রতিবার খাওয়ার সময় অন্তত পাঁচ ধরনের সবজি খান। মুখরোচক খাবারের পরিবর্তে ফল-মূল খাওয়ার অভ্যাস করুন। শিশুদের ছয় মাস বয়স থেকেই শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ানো যেতে পারে। এগুলো পেষ্ট করে খাওয়াবেন। শিশুদের খাবারের সঙ্গে এই পেষ্ট মেশান। প্রথমে অল্প পরিমাণে দেবেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিমাণও বাড়াবেন। এতে এটি তার অভ্যাসে পরিণত হবে যা পরবর্তী সময়ে ফলপ্রসূ হবে।
সাংবাদিক-কলামিস্ট।