আমার সুরমা ডটকম: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আমরা অবশ্যই নির্বাচনে যেতে চাই। কিন্তু সেই নির্বাচন অবশ্যই নির্বাচনের মতো হতে হবে। যদিও বর্তমান সরকার চায়, বিএনপি নির্বাচনে না আসুক। অন্যান্য দল দুই-একটা যা আছে তারাই থাকুক। আমার বিস্ময়, দেশ কি আওয়ামী লীগ চালাচ্ছে নাকি অন্য কেউ। তারা কি এতটাই রাজনৈতিক দেউলিয়া?
বৃহস্পতিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে তিনি এসব বলেন। সেখানে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা ক্ষমতায় থাকবেন, হেলিকপ্টার চড়ে ঘুরে ঘুরে ভোট চাইবেন আর বিরোধী দলকে একটা কথাও বলতে দেবেন না, তাদেরকে ধরে ধরে নিয়ে জেলে ভরবেন— এভাবে করলে তো হবে না। নির্বাচনে সমান মাঠ থাকতে হবে। বাংলাদেশের নির্বাচনকালীন সামাজিক সংস্কৃতি অনুযায়ী এখানে একটি নিরপেক্ষ সরকার থাকতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে হবে ও সবার আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, গত রাতেও (বুধবার) গাজীপুরের কাশিমপুরে আমাদের দলের ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ কারণে গাজীপুরের পুলিশ সুপারকে সরানোর জন্য বলে আসছি আমরা। যেদিন আমাদের প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিল আর জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করলো, তাকেসহ ৫৭ জনকে গ্রেফতার করলো। আর হাইকোর্ট যেদিন নির্বাচন বন্ধ করলো ওইদিন আমাদের আব্দুল্লাহ আল নোমানসহ ২১৩ জনকে মামলা দিলো। এটা হলো আমাদের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, এটা হলো আমাদের সিইসি সাহেবের খুলনার মতো নির্বাচন না হওয়ার নমুনা। আমি জানি না, এই দেশ আওয়ামী লীগ সরকার চালাচ্ছে নাকি অন্য কেউ?
বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে জনগণের কাছে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে দলের মহাসচিব বলেন, হতাশাই শেষ কথা হতে পারে না। লড়াই করতে হবে, লড়াই করতে করতে আমরা একটা জায়গায় গিয়েই পৌঁছাবোই। আমরা এই দেশে কিন্তু বাকশালও দেখেছি। মানুষ কিন্তু জেগে উঠেছে। এই বাংলাদেশের মানুষই কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ধ্বংসস্তুপ থেকে ফিনিক্স পাখির মতো উড়ে গেছে। আমাদেরকে সেভাবেই এগোতে হবে। নির্বাচন হবে, আমরা ক্ষমতায় যাবো, এটা মনে করার কারণ নেই। আপনাকে আদায় করে নিতে হবে। এজন্য জনগণের কাছে যেতে হবে। এর কোনও বিকল্প নেই। সব সময় একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে একটা কথা বিশ্বাস করি, হোয়েন দেয়ার ইজ ক্রাইসিস গো টু দ্য পিপল, লার্ন ফ্রম দেম। তাদের কাছ থেকে জানো, তারপর সেটাকে প্রয়োগের চেষ্টা করো। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বাংলাদেশের সব জায়গায় যাবো। মানুষকে জাগ্রত করার চেষ্টা করবো।
তিনি বলেন, একটি রাষ্ট্রের আদালত হচ্ছে আশা-ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল। অথচ এখন সেই আদালতে যেতেও আমাদের এখন ভয় হয়। কারণ আদালতকে ব্যবহার করেই দেশের জনপ্রিয় ও গণতান্ত্রিক নেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে।
ফখরুল ইসলাম বলেন, কেউ কোনও কিছু করে দেবে তা নয়, এমনকি নির্বাচন হলেই বিএনপিকে ক্ষমতা দিয়ে দেবে তেমনটিও ভাববার কারণ নেই। বরং আমাদের অধিকার আদায় করে নিতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একই কথা এখন আর শুনতে ও বলতে নিজেরই ইচ্ছে করে না। কারণ আমরা ধীরে ধীরে এমন একটা অন্ধকার গহ্বরের দিকে যাচ্ছি যেখানে আলোর রেখার দেখা মেলে না।
তিনি বলেন, গ্রামে কিংবা শহরে কেউ নিরাপদ নয়। নিজ এলাকায় কেউ থাকতে পারে না। শুধু তাই নয়, ঢাকা শহরের এক এলাকার লোকও অন্য এলাকায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে যাচ্ছি। এবং তাদেরকে বলছি যে, রাষ্ট্রক্ষমতায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি এসব কথা বাদ দিন, অন্তত দেশটাকে বাঁচতে দিন। এগিয়ে আসুন। দেশটাকে বাঁচাতে হবে। আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের চলমান সংকট দূরীকরণে জাতীয় ঐক্য দরকার। এবং দেশের মানুষকে নিয়েই সেই (বিএনপি) জাতীয় ঐক্য আমাদের সৃষ্টি করতে হবে।
আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (একাংশ) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব এম আব্দুল্লাহ, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (একাংশ) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (একাংশ) সংবাদপত্রের এ আলোচনার আয়োজন করে।