বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৫ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১
সাংবাদিক আজিজুল ইসলাম ছিলেন আদর্শের মূর্ত প্রতিক

সাংবাদিক আজিজুল ইসলাম ছিলেন আদর্শের মূর্ত প্রতিক

শহীদ নূর আহমেদ:
আজিজুল ইসলাম চৌধুরী। মাত্র একদিন হলো কবরে রেখে আসলাম প্রিয় এই মানুষটিকে। সেদিন শেষবারের মতো দুই বার তাঁর মুখম-ল দেখার সাহস হয়েছিল আমার। হলদে রঙের মুখ সহসাই বুঝা যায় গভীর ঘুমে আছেন তিনি। আহা… কী মায়াবি মুখ। আর দেখা হবে না এই মায়ার মুখটি। আজিজুল ভাইয়ের একমাত্র ছেলেটার বয়স মাত্র বারো কিংবা তেরো হবে। লাশ কবরে রাখার সময় ছেলেটির ফুপিয়ে কাঁদার শব্দে আতকে উঠেছিল প্রাণ। জানি এ পথে সবাইকেই একদিন যেতে হবে… আগে কিংবা পরে। তবে আজিজুল ভাইয়ের অকালে চলে যাওয়াটা মন থেকে মেনে নিতে পারছিনা। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর।
আইন পেশার পাশাপাশি সাংবাদিকতায় সক্রিয় ছিলেন তিনি। দেশের প্রাচীন পত্রিকা দৈনিক ইনকিলাবের জেলা প্রতিনিধি ছিলেন। তুলনামূলক জুুনিয়র ও বয়সের বেশ ফারাক থাকায় তেমন সখ্যতা ছিলনা তাঁর সাথে আমার। তবে পেশাগত কারণে অনেকবার তাঁর সাথে দেখা ও কথা হতো। দেখা হলেই নাম ধরে ডাকতেন। বলতেন কোথায় যাও, কেমন আছো, কেমন লেখালেখি চলছে, বাকি সহকর্মীদের খোঁজখবর নিতেন।
দু’তিনবার তাঁর সাথে নিউজ সংগ্রহের কাজে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে আমার। একজন সদালাপী, খোশ মেজাজের মানুষ ছিলেন তিনি। খুব চ্যাটকাট কথা বলতেন। তবে তাঁর কথায় প্রচুর হাস্যরস থাকতো। মনে পড়ে গত এক-দু’বছর আগে টাঙ্গুয়ায় জ্যোৎস্না উৎসবে যাত্রাপথে একঝাঁক গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যমণি ছিলেন তিনি। আমার হাতে অগ্রজ সহকর্মী মাহবুবুর রহমান পীর ভাইয়ের ডিএসএলআর ক্যামেরা ছিল। কত রঙ ঢঙের ছবি যে তুলেছিলাম আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে। যা আজো জীবন্ত মনে হচ্ছে।
যুগান্তরের জেলা প্রতিনিধি মাহবুব ভাইয়ের অফিসে প্রায়ই আড্ডা বসে সিনিয়র সাংবাদিকদের। মাঝে মধ্যে আসতেন আজিজুল ভাই। আমি মাহবুব ভাইয়ের সান্নিধ্যে থাকায় আজিজুল ভাইয়ের অতীত সাংবাদিকতা, কর্মনিষ্ঠা, সততা ও ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা পাই তাঁর কাছ থেকে। সাংবাদিকতায় তিনি খুবই পরিশ্রমী ও সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন। তাছাড়া কথাবার্তা ও আচার-ব্যবহারে অত্যন্ত অমায়িক ছিলেন তিনি। যাকে যা বলতেন একদম সরাসরি। সিদ্ধান্তে থাকতেন অনড়। বর্তমান সময়ে সাংবাদিকদের গ্রুপিংয়ের ধারধারি ছিলেন না তিনি। নবাগত বা জুনিয়র গণমাধ্যমকর্মীদের দেখে ভ্রূ কুচকাতেন না কখনো। কাছে টেনে নিতেন, উৎসাহ দিতেন, অনুপ্রেরণা যোগাতেন, সাহস দিতেন ভালো কিছু করার জন্য। যা বর্তমান প্রতিযোগিতার ভিড়ে পাওয়াটা দুষ্কর। একজন জুনিয়র গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে বলতে পারি আজিজুল ইসলাম চৌধুরী ছিলেন আমাদের জন্যে আদর্শের মূর্ত প্রতীক। তাঁর আচার-আচরণ, কথা বলার ভঙ্গিতে একটা সহজ-শান্ত ভাব থাকতো। যা দেখে খুবই ভালো লাগতো। তিনি কারো সাথে দুর্ব্যবহার করেছেন এমন কথা কখনো শুনিনি। তাঁর অকাল প্রয়াণে জেলার সাংবাদিকতায় যেমন অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তেমন ক্ষতি হয়েছে জুনিয়রদের। আমরা জুনিয়ররা একজন অভিভাবককে হারালাম। যা ভাবলে খুবই কষ্ট লাগে। পরপাড়ে আমার ডাক আসবে জানি না। মাত্র কিছুদিন আগে আমি সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মৃত্যুর হাতছানি থেকে ফিরে আসলাম। সুস্থতার পরে সহকর্মী সাংবাদিকদের একের পর এক দুঃসংবাদ। ছাতকের সিনিয়র সাংবাদিক চাঁন মিয়া ভাই আজিজুল ভাইয়ের পথের পথিক হলেন কয়েকদিন আগে। দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরের সম্পাদক পঙ্কজ দা আমার মতো সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে সিলেটের একটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তিনি তাড়াতাড়ি সেরে উঠবেন মহান ষ্টার কাছেই এই প্রার্থনা করি।
বর্তমান সময়ে সাংবাদিকতা কিছু দুষ্ট লোকদের দ্বারা কলুষিত হচ্ছে। চারদিকে অপসাংবাদিক ও নামবাজদের দৌরাত্ম্য। এই প্রেক্ষাপটে যখন সৎ ও নির্ভীক মানুষের বড়ই অভাব তখন আজিজুল ইসলাম চৌধুরী ও চাঁন মিয়া ভাইয়ের মতো মানুষ চলে যাওয়াটা অনাকাক্সিক্ষত। অপারে ভাল থাকুন আজিজুল ভাই, চাঁন মিয়া ভাই। মহান প্রভুর নিকট প্রার্থনা- চিরশান্তির ঠিকানা জান্নাতবাসী হোন আপনারা।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com