শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৬ অপরাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার:
সামান্য বৃষ্টিতেই হাওর রক্ষা বাঁধে ধ্বস, বাঁধের মধ্যখানে মাটি দেবে যাওয়া ও বাঁধের পাশ থেকেই ঘাস কেটে নামমাত্র তা লাগালোর অনিয়ম পাওয়া গেছে। তবে সংশ্লিষ্ট বাঁধের সভাপতিগণ বলেছেন, এতে করে বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ নয়। এসব অনিয়ম সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নের কয়েকটি হাওর রক্ষা বাঁধের।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি হাওর রক্ষা বাঁধে মাটি ভরাট, দুর্মুজ, ড্রেসিং, ঘাস লাগানো বাধ্যতামূলক থাকলেও পিআইসির কমিটির সদস্যরা বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিতে কাজে অনিয়ম করে থাকে। তাছাড়া ক্লোজার পয়েন্টে বাঁশ ও সিনথেটিক ব্যাগ দিয়ে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে বলা হলেও এখানে অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়। মানা হচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনেক নিয়ম-নীতি। নদীতে প্রতিদিনই পানি বাড়ছে, ফলে উপজেলার প্রায় ৪০ হাজার কৃষক আতঙ্কে রয়েছেন। এ বছর দিরাই উপজেলায় ১০৪টি হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ হাতে নেয় স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড, যার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ কোটি ১৯ লাখ ৩৪ হাজার ১৬৭ টাকা ১৪ পয়সা। তবে এই বাজেটে সংযোজন-বিয়োজন হবে বলে জানা যায়।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, দিরাই উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নের টাঙ্গুয়ার হাওরের টাঙ্গুয়ার হাওরের বখশিওর গ্রামের পার্শ্ববর্তী ২৮নং বাঁধের একটি ক্লোজার পয়েন্টের বস্তা ধ্বসে পড়ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই বাঁধে এ ধরণের সমস্যা হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন কৃষক জানান। ০.৭২২ কিলোমিটার এ বাঁধের মোট বরাদ্ধ হচ্ছে ১৪ লাখ ৮১ হাজার ১শত টাকা ৯ পয়সা।
বাঁধ ধ্বসে যাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে পিআইসি কমিটির সভাপতি তছর উদ্দিন চৌধুরী জানান, বাঁধের নিচে বড় ধরণের কুরুঙ্গ (গর্ত) থাকায় বস্তা স্লিপ করেছে, তবে তাতে বাঁধে কোন সমস্যা হবে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্য সহকারি নগেন্দ্র চন্দ্র দাস জানান, আমি সরেজমিন থেকে কাজ করছি। আমাদের অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় এ ধরণের সমস্যার কোন বাঁধ নেই। এখানে পুনরায় কাজ চলছে, বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার মতো কোন সমস্যা নেই।
এদিকে একই ইউনিয়নের ৩০নং বাঁধের কাজে প্রচুর অনিয়ম পাওয়া গেছে। ঠিকমতো দুর্মুজ না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হওয়ার ফলেই বাঁধের উপর বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে পিআইসি কমিটির সভাপতি মোঃ সানুর মিয়া বলেন, বাঁধে ঠিকমতো দুর্মুজ করা হয়েছে। তবে বাঁধের উপর গর্ত হওয়ার বিষয়টি তিনি স্বীকার করে মেরামত করবেন বলে জানান। ০.৯৩১ কিলোমিটার বাঁধের মোট বরাদ্ধ ১১ লাখ ৮৭ হাজার ২০৯ টাকা ৬০ পয়সা।
অন্যদিকে একই ইউনিয়নের ৩০নং বাঁধের কাজেও প্রচুর অনিয়ম পাওয়া গেছে। ঠিকমতো দুর্মুজ না হওয়ার ফলে বাঁধের উপর গর্ত সৃষ্টি হওয়া, বাঁধের পাশ থেকে ঘাস কেটে বাঁধে দেয়াসহ নানা অনিয়ম রয়েছে। এ ব্যাপারে পিআইসি কমিটির সভাপতি মোঃ আকবর হোসেন জানান, আগে পুরনো ঘাস তুলে মাটি দিয়ে পরে দূর থেকে ঘাস লাগানো হয়েছে। তবে তার এ কথা সঠিক নয় বলে দেখা গেছে। বাঁধের একেবারে কাছ থেকেই ঘাস তোলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাছাড়া বাঁধের উপর বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি তিনি স্বীকার করে বলেছেন, পুনরায় মাটি কেটে তা ভরার করা হচ্ছে। ০.৩৫৪ কিলোমিটার এ বাঁধের মোট বরাদ্ধ ১৭ লাখ ৪ হাজার ৭৮০ টাকা ৩৩ পয়সা।
দিরাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলায় মোট ৩৯ হাজার কৃষক বোরো ধান আবাদ করেছেন। এ বছর দিরাইয়ে মোট ৩০ হাজার ১১০ হেক্টর বোরো জমি আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে হাওরে ২৮ হাজার ৪৩০ হেক্টর ও হাওরের বাইরে (পতিত জমিতে) ১ হাজার ৬৮০ হেক্টর। হাইব্রিড মোট ১৩ হাজার ৮৭৭ হেক্টর, হাওরে ১২ হাজার ৫১২ হেক্টর ও হাওরের বাইরে ১ হাজার ৩৬৫ হেক্টর। উফসি মোট ১৫ হাজার ৯৮৮ হেক্টর, হাওরে ১৫ হাজার ৬৮৮ হেক্টর ও হাওরের বাইরে ৩শত হেক্টর। স্থানীয় মোট ২৪৫ হেক্টর, হাওরে ২শত হেক্টর ও হাওরের বাইরে ১৫ হেক্টর। তাছাড়া চলতি বছর বোরো ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ১০৩ মেট্রিক টন চাউল। গত বছর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা এ বছরের সমান থাকলেও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২৭ হাজার ৮১৪ মেট্রিক টন চাউল। তবে সেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৩৪ মেট্রিক টন চাউল। এ বছর বোরোতে ৩০টি প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে বলে সূত্র জানায়। নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে পুরো উপজেলার কৃষকরা আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দিরাই অফিসের উপ-সহকারি প্রকৌশলী শাখা কর্মকর্তা (এসও) এ.টি.এম. মোনায়েম হোসেন জানান, বাঁধ থেকে বস্তা নিচে নেমে যাওয়ার বিষয়টি আমি জেনেছি। অফিসের লোক সেখানে অবস্থান করছে। তাছাড়া বাঁধের উপর গর্ত ও অন্যান্য বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।