শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৩ অপরাহ্ন
মো. অাব্দুল মতিন: গতকাল কয়েকজন শিক্ষার্থী অামার সাথে দেখা করল। তারা কিছু বলার অাগে তাদের মুখের দিকে একবার চেয়ে নিলাম। তাদের চেহারা মলিন, মুখে হতাশা, ক্ষোভের স্পষ্টতা অনুমান করলাম। বললাম, ‘বলো, কি বলতে চাও?’ কে ঘুচিয়ে বলবে এ নিয়ে সময় গেলো। নিরবতা…..। তারপর একজন বলল, ‘স্যার, জগন্নাথপুর ডিগ্রী কলেজের রুমেনা নামে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী গত ২৫শে জুলাই কলেজে ক্লাস করে বাড়ী ফেরার পথে তাঁর অাপন খালাত ভাই সিএনজি ড্রাইভার ইউনুছ মিয়া এবং তার সহযোগী সাহেদ মিলে বাড়ীতে পৌছে দেবার নাম করে গাড়ীতে তুলে নিয়ে তার সর্বনাশ করেছে। তাঁর অসহায় কৃষক বাবা ও তাঁর পরিবার কিছু করতে না পেরে বিচারের জন্য ধর্ষকদের অভিভাবকদের কাছে বিচার প্রার্থী হলে তারা মেয়েটির অভিভাবকদের অভিযোগের বিচার করতে কাল ক্ষেপণ ও তাঁদের অপমান করে। অবশেষে মেয়েটি চরম অন্যায়, অপমান, অবিচারের থেকে নিজেকে মুক্তি দিতে ৩১শে জুলাই অাত্মহত্যা করে।’ নিরবতা…বোনহারা শোকের নিরবতা..চরম অবিচারের বিরুদ্ধে কারো কাছে ক্ষোভ বলার পর প্রত্যোত্তরের নিরবতা..। তারপর অারেকজন বলল, ‘স্যার, জগন্নাথপুর কলেজের শিক্ষার্থীরা রুমেনার সুবিচারের জন্য মানববন্দন ও অান্দোলন করছে। অামরা কী রুমেনার জন্য কিছু করতে পারিনা? তাঁদের মুখের দিকে না তাকিয়েই বললাম, ‘অবশ্যই; অবশ্যই রুমেনার অবিচারের বিচার জগন্নাথপুরে হতেই হবে। অামরাও অামাদের পক্ষ থেকে তাঁর সুবিচার পাইতে যা করার সব করব। তাছাড়া প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনে যারা অাছেন তাঁদেরকে অামি ব্যক্তিগতভাবে ভাল চিনি; তাঁরা ও তাঁদের চেষ্টার ত্রুটি করবেন না এটুকু ও জেনে রেখো। এছাড়া এই মাস রাষ্ট্রীয়ভাবে শোকের মাস; এই মাসে বিশৃঙ্খলভাবে কিছু করা ঠিক হবেনা। অামরা শিশু শিক্ষার্থী অাবু সাঈদের হত্যার সুবিচারের জন্য অান্দোলন করেছিলাম; তাঁর পরিবার ন্যায় বিচার পেয়েছে। অামাকে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে দাও, দেখি কী করা যায়।’ তারা অভয় পেয়ে সালাম দিয়ে চলে গেলো, কিন্তু বিষয়টির নিষ্ঠুরতা অার ভোক্তভোগী অসহায় পরিবারের অবস্থার যে ছবি অামার মনের মধ্যে ভেসে উঠল তা থেকে কি অাসলেই নিস্তার পাওয়া যায়? প্রান্তিকজনের ঘরে অালো দেওয়ার ব্রতে দিন রাত যে পরিশ্রম করি সেখানে অাজ অনেকদিন পর শক্ত ধাক্কা খেলাম। অমানুষরা যে অাপন হয়ে চারপাশে মানুষের রূপ নিয়ে বসবাস করে তা অামাদের অাজ নতুন করে বাছাই করতে তাড়া দিচ্ছে। রুমেনার বয়সী অামার ছাত্রীদের দিকে অাজ বার বার খেয়াল করলাম; ক্লাস শেষে সসম্মানে বাড়ী যাবে তো সবাই? এদের জ্ঞান পিপাসু মন অার চোখের তারার মধ্যে নিষ্ঠুর ঘাতকদের অনিষ্ট চিন্তার সময় ও বয়স তাদের হয়নি সেটা বারবার জানান দিচ্ছিল। রুমেনা, তোমার চলে যাবার সময় হয়নি। দেখো, তোমার সাথীরা সবাই ক্লাস করছে, তাদের স্বপ্ন পূরণের ব্যস্ততা কি তুমি দেখতে পেলেনা? এ লজ্জা তোমার কেন হবে? অাত্মাহুতি তুমি কেন দিলে? এ লজ্জা অামাদের। অামরা তোমার প্রতি অবিচারের বিচার করবোই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মৃত্যুর পরে’ কবিতায় তুমি থাকবে অামাদের মাঝে অনন্তকাল…… অাজিকে হয়েছে শান্তি/জীবনের ভুলভ্রান্তি/সবগেছে চুকে/রাত্রিদিন ধুক্ ধুক্/তরঙ্গিত দুঃখ সুখ/থামিয়াছে বুকে/যতকিছু ভালমন্দ/যতকিছু দ্বিধাদ্বন্দ্ব/কিছু অার নাই/বলো শান্তি,বলোশান্তি/দেহ সাথে সবক্লান্তি/হয়ে যাক ছাই।
লেখক: মো. অাব্দুল মতিন, প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, শাহজালাল মহাবিদ্যালয় জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ।