রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫২ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার (সুনামগঞ্জ): ৭১’র লাখো লাখো শহীদের ত্যাগে অর্জিত এ বিজয় দিবসের মাসে জামায়াত নেতার মালিকানাধীন বিলাসবহুল আবাসিক হোটেল উদ্বোধন করে বৃহস্পতিবার দলীয় নেতাকর্মী এমনকি মুক্তিযোদ্ধাগণের মধ্যে নতুন করে ফের সমালোচনার মুখে পড়লেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের শাসক দল আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জোম হোসেন রতন এমপি। এ নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, এক সময়ের সিলেট জেলা জামায়াতের সহকারি রোকন ও বর্তমানে যুক্তরাজ্য প্রবাসী সক্রিয় জামায়াত নেতা মাওলানা শামছুজ্জামানের মালিকানাধীন তাহিরপুর উপজেলা সদরে ৫তলা বিশিষ্ট শাহজালাল টাওয়ারের ‘হোটেল টাঙ্গুয়া ইন’-এর শুভ উদ্বোধন করার মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার বিজয়ের মাসে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য রতন এমপি জাতীরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিুবর রহমানের আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারীদের সাথে অনেকটা তামাশাই করছেন।
দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি বৃহস্পতিবার নিজের ব্যক্তিগত কয়েকজন অনুসারী ও দলে সুবিধাভোগীদের নিয়ে জামায়াত নেতা মাওলানা শামছুজ্জামানের মালিকানাধনি শাহজালাল টাওয়ারে ‘হোটেল টাঙ্গুয়া ইন’ নামের একটি আবাসিক হোটেলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। জামায়াত নেতা যুক্তরাজ্যে অবস্থান করলেও হোটেল উদ্বোধনের সময় তার সহোদর ভাই সিলেট জেলা কৃষক দলের আহবায়ক ও সুনামগঞ্জ-১ আসনে জামায়াত-বিএনপির সমর্থন নিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য রতন এমপির পাশেই ছিলেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় সাংসদ হয়ে ৭১’এর মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী জামায়াতে এক নেতার হোটেল উদ্বোধন করায় তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে এমনকি মুক্তিযোদ্ধাগণের মধ্যেও তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনা দেখা দিয়েছে রতন এমপিকে নিয়ে। এমন উদ্ভট পরিস্থিতে দাওয়াত থাকার পরও এই হোটেল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মীই উপস্থিত হননি।
তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, রতন এমপি আওয়ামী লীগের দলীয় সাংসদ হয়ে যে হোটেলটি উদ্বোধন করেছেন, সেই হোটেলটির মালিক মাওলানা শামছুজ্জামান এক সময় সিলেট জেলা জামায়াতের সহকারি রোকন ছিলেন। এমনকি এখনো তিনি যুক্তরাজ্যে প্রবাসে থেকে জামায়াতের রাজনীতির সাথে সক্রিয় রয়েছেন। এ বিজয়ের মাসে, ত্যাগের মাসে জামায়াত নেতার মালিকানাধীন হোটেল উদ্বোধন করণের মধ্য দিয়ে রতন এমপি মুজিব আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ লালনকারী ও দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে অনেকটা তামাশা করেছেন, সে অনুষ্ঠানে আমার এমনকি দলীয় নেতাকর্মী অনেকেরই আমন্ত্রণ ছিল, কিন্তু আমরা তা বর্জন করেছি।
তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এখলাছুর রহমান তারা বিষয়টির তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগের একজন এমপি হয়ে বিয়ের এই মাসে কিভাবে জামায়াত নেতার হোটেল উদ্বোধন করেন সেটা আমার বোধগম্য নয়, এতেই বুঝা যায় তিনি দলের এমপি হলেও হাইব্রিড; উনার ভেতর মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শের বালাই নেই।
তাহিরপুর উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সুষেণ বর্মন ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন বিপক বলেন, যেখানে জামায়াত নেতাকর্মীরা সবসময় আমাদের দেশ ও আমাদের দল আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র সর্বদাই করছে, সে দলের একজন নেতার হোটেল উদ্বোধনে প্রধান অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য, বিষয়টি শুধু আমায় নয় দলের সর্বস্তরে নেতাকর্মীদেরই কষ্ট দিয়েছে।
জামায়াত নেতা মাওলানা শামছুজ্জামানের সহোদর অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামানের বক্তব্য জানতে বৃহস্পতিবার রাতে কয়েকদফা মুঠোফোনে কল করলেও তিনি তা রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া যায়নি।
সুনামগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাহিদ উদ্দিন আহমদ বৃহস্পতিবার রাতে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বললেন, বিষয়টি দলীয় নেতাকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধা নিকট থেকে জানতে পেরেছি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা দেখতে পেয়েছি, এতে আমরা মুক্তিযোদ্ধাগণ খুবই মর্মাহত হয়েছি, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কোন নেতার প্রতিষ্ঠানেব উদ্বোধন করাটা আমি মনে করি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হয়ে রতন এমপি জাতিরজনক শেখ মুজিবুর রহমানের ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ পরিপন্থী কাজ করেছেন।
সুনামগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি আবুল খায়ের বলেন, আমার মামা মাওলানা শামুছজ্জামান আদৌ কোনদিন জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না, তিনি এলাকায় দানবীর হিসাবে পরিচিত, এলাকায় উনার প্রতিষ্ঠিত এতিমখানা ও মাদরাসা রয়েছে, মামা লন্ডন প্রবাসী হওয়ায় হোটেলটি আমার ছোট ভাই জাকারিয়া তত্ত্বাবধান করে এবং পর্যটকদের সুবিধার জন্য ওই হোটেলটি খুলেছেন।
তাহিরপুর উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আবুল হোসেন খান বললেন, যুবলীগ নেতা আবুল খায়ের হোটেলে আমারদেরকে আপ্যায়নের নিয়ে গেছেন, উদ্বোধনের বিষয়টি আমার জানা ছিলনা, তাছাড়াও আমি ওই হোটেল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কাউকে নিয়ে যাইনি।
সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জোম হোসেন রতন এমপির বক্তব্য জানতে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বৃহস্পতিবার রাতে তিনি বলেন, জামায়াত নেতার মালিকানাধীন হোটেল এ বিষয়টি আমার জানা ছিলনা, ‘টাঙ্গুয়া ইন’র প্রোপাইটার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবুল খায়েরের বলেই জানি, উপজেলা আ’লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ দলীয় নেতাকর্মীরাই ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমাকে নিয়ে গেছেন।