বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:২৩ পূর্বাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার: একজন মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি জোরপূর্বক দখলকে কেন্দ্র করে দু’ভাইয়ের মধ্যে বিরাজ করছে চরম দ্বন্দ্ব, ঘটনার প্রেক্ষিতে এক পক্ষ বাদি হয়ে দিরাই থানায় মামলা দায়ের করেছে। এ নিয়ে যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের কাইমা গ্রামে। ঘটনার সত্যতা জানতে কাইমা গ্রামে গেলে বরকত উল্লা ও তার লোকজন কেউই এ প্রতিবেদকের সামনে মুখ খুলতে রাজি হননি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাইমা গ্রামের মৃত হাজী হাবিজ উল্লা তালুকদারের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রহমত আলী ও মোঃ বরকত উল্লা আপন দু’ভাই। প্রায় ২৫ ধরে স্বপরিবারে মোঃ রহমত আলী দিরাই পৌরসভার আনোয়ারপুর উলুকান্দি গ্রামে বসবাস করে আসছেন। এরপর থেকে তার ব্যবহৃত ঘরটি খালি থাকায় মোঃ বরকত উল্লা ব্যবহার করে আসছেন। তবে ঘর ও বাড়ির অংশ ভাগ-ভাটোয়ারা হয়ে যাওয়ায় রহমত আলীর অংশও বরকত উল্লা ব্যবহার করছেন। তিনি সর্বশেষ রহমত আলীর ঘরের সামনে জোরপূর্বকভাবে একটি নলকুপও বসিয়েছেন। এছাড়া বসবাসের ঘরের পাশাপাশি রহমত আলীর বাড়ির উত্তর অংশে একটি খালি ভিটা রয়েছে, সেটি বর্তমানে তিনি বিক্রি করতে চাইলে বরকত উল্লাকে রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। কিন্তু বরকত উল্লা সেটি রাখতে না চাওয়ায় রহমত আলীর ছেলেরা একই গ্রামের প্রবাসি জামির মিয়ার কাছে বিক্রি করে দেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, একটি ক্রয় করার পর প্রবাসি জামির মিয়ার লোকজনকে দখল স্বত্ত্ব দিতে গেলে বরকত উল্লা ও তার লোকজন বাধা দিলে এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। পরে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের হস্তক্ষেপে বরকত উল্লা ও তার লোকজন বাধা দিবেনা বলে অঙ্গিকার করে। এর কিছুদিন পর প্রবাসি জামির মিয়ার লোকজন তাদের ক্রয়কৃত বাড়িতে বেড়া দিতে গেলে আবারো বরকত উল্লা ও তার লোকজন বাধা দেয়। এমনকি যারা এ জায়গায় এসে কিছু করতে চাইবে, তাদেরকে টুকরো টুকরো করে হত্যা করার হুমকিও দেয়া হয় বলে মামলায় উল্লেখ এবং সেই হুমকির অডিও রেকর্ড থাকারও দাবি করা হয়। এছাড়া বরকত উল্লাহর লোকজন তাদের কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে হুমকি দেয় যে, যদি জায়গা দখল করতে আসে, তবে তাদেরকে হত্যা করা হবে। যার কারণে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
সংঘর্ষের ঘটনায় দিরাই থানায় মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রহমত আলীর ছেলে হাজী মোঃ জাকির আহমদ বাদি হয়ে দিরাই থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-০৫, তারিখ ০৮/১১/২০১৬। মামলার আসামিরা হলেন মৃত হাজী হাবিজ উল্লার ছেলে মোঃ বরকত উল্লা, ছানা উল্লা, মৃত রহিম উল্লাহর ছেলে মোঃ আব্দুল লতিফ, আব্দুছ ছামির, বরকত উল্লাহর ছেলে গুলজার আহমদ, সাদ আহমদ, নূর আহমদ ও জাভেদ আহমদ। মামলা দায়েরের পর বিবাদি বরকত উল্লার লোকজন বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এর আগেও তারা আরেকবার তাদের সাথে বিভিন্ন ধরণের খারাপ আচরণ করে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে এ বছরের ৮ আগস্ট জায়গার মালিকগণ ক্রেতা গ্রামের প্রবাসি জামির মিয়ার লোকজন মিনারগংদেরকে জায়গা বুঝিয়ে দিতে গেলে বরকত উল্লাহর লোকজন বাধা দেয়। এতে অপারগ হয়ে ভূমির মালিকরা দিরাই থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পরে এলাকার গণ্যমান্য লোকজনের সম্মুখে আর কোন বাধা দিবেনা বলেও তারা অঙ্গিকার করে। গত ৩ নভেম্বর ক্রেতা গ্রামের প্রবাসি জামির মিয়ার লোকজন যখন সেখানে সবজি বাগান করার জন্য বেড়া দিতে যায়, তখন আবারো বিবাদিগণ বাধা দেয়। এমনকি তাদেরকে টুকরো টুকরো করে হত্যার হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। একই দিন রাত ৮টার পর বিবাদিগণ বাড়ির ক্রেতা গ্রামের প্রবাসি জামির মিয়ার লোকজনকে অস্ত্রসহ বাড়িতে গিয়ে আক্রমণ করার পরিকল্পনা করে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এর অডিও রেকর্ড বাদিপক্ষের কাছে সংরক্ষিত আছে বলেও এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন মামলার বাদি হাজী জাকির আহমদ।
অন্যদিকে ঘটনার সত্যতা জানতে গত ১১ নভেম্বর শুক্রবার সুনামগঞ্জের রাজানগর ইউনিয়নের কাইমা গ্রামে বিকেল ৩টায় সরেজমিন গেলে গ্রামের অনেকেই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তবে আশপাশের অনেকেই বরকত উল্লা ও তার লোকজনের অত্যাচারের ভয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। নামপ্রকাশ না করার শর্তে পাশে বাড়ির একজন জানান, মূল সমস্যা বরকত উল্লা ও তার লোকজন সৃষ্টি করেছেন, এর বেশি আর কিছু বলতে চাইনা। গ্রামের মৃত আব্দুছ ছাত্তারের ছেলে বয়োবৃদ্ধ ফিরোজ আলী (৭০) এ প্রতিবেদককে জানান, মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রহমত আলী ও মোঃ বরকত উল্লা আপন দু’ভাই, তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বাড়ির ভিটা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এ জায়গার মালিক মোঃ রহমত আলী হলেও বর্তমানে বরকত উল্লাহর দখলে আছে। কিছুদিন আগে এ বাড়িটি রহমত আলী বিক্রি করেন একই গ্রামের প্রবাসি জামির মিয়ার কাছে। তারা যখন জায়গা বুঝে নিতে আসলো, তখনই বরকত উল্লা ও তার লোকজন বাধা দেয় এবং গালিগালাজ করে। এ ঘটনায় আতঙ্কিত মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রহমত আলীর লোকজন তাদের জানমালের নিরাপত্তার জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দিরাই থানার এসআই সেকান্দর এ প্রতিবেদককে জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে, তবে আরো তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে বলেও তিনি জানান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আব্দুল জলিল মামলার সত্যতা স্বীকার করে জানান, একপক্ষ তাদের ওপর হামলা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করলেও অপরপক্ষ এখনো করেনি, মামলাটি তদন্তনাধিন রয়েছে।