শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৬ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : এই মুহূর্তে দেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে মারমুখী কোন কর্মসূচী না থাকলেও অভ্যন্তরে চলছে নানা তৎপরতা। ক্ষমতায় টিকে থাকতে আওয়ামীলীগ সরকার নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতৃত্বও ক্ষমতায় ফিরতে চোখ-কান খোলা রেখে পা ফেলছে। নিজেদের জোটকে শক্তিশালী করতে বামপন্থীদের যেভাবে সঙ্গে নিচ্ছে বিএনপি, ঠিক একইভাবেই ইসলামী শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। এ প্রচেষ্টায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে সফলও হয়েছে সরকার। সরকার হঠানোর ঘোষণা দেওয়া চরম বিরোধী হেফাজতে ইসলামী এখন আর সরকারের বিরুদ্ধে কোন কথা বলছে না। প্রায় দেড়যুগ ধরে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে থাকা ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী দলটির একটি অংশ নিয়ে ২০ দলীয় জোট থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা কথা আলোচিত হয়। তখন বিশ্লেষকরা বলেছিলেন, সরকারের পরোক্ষ প্রচেষ্টায় দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক মিত্রদের ছেড়েছেন নেজামী। সরকারের তরফ থেকে সুবিধা নেওয়ার অভিযোগও উঠে আবদুল লতিফ নেজামীর বিরুদ্ধে। অবশ্য তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করে জোট ছাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। অপর দিকে দেশের প্রধান ইসলামী রাজনৈতিক শক্তি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকেও নিয়ে নানা কৌশল চলছে রাজনীতিতে। দেশের যখন একটি আগাম নির্বাচনের আলোচনা চলছে তখন সম্ভাব্য ওই নির্বাচনে বিএনপির বিকল্প হিসেবে জামায়াতকে সঙ্গে চায় সরকার। দলটিকে অর্ধশতাধিক সংসদীয় আসন দিয়ে বিরোধী দলে বসানোর ইঙ্গিতও দেওয়ার খবর জামায়াতের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। সরকারের সীমাহীন দমননীতির ফলে দলটির একটি অংশ আওয়ামীলীগের সঙ্গে সমঝোতার পক্ষে থাকলেও শীর্ষ নেতারা এতে নারাজ।
অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে আওয়ামীলীগ ও জামায়াতের শীর্ষ কয়েকজন নেতার বৈঠক হয় তুরস্কে। ওই বৈঠকের মধ্যস্থতা করে তুরস্কের একটি রাজনৈতিক দল। ওই সময় জামায়াতে ইসলামীকে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য সরকার প্রস্তাব দেয় এবং ৭০টি সংসদীয় আসন ও বিরোধী দলীয় নেতার চেয়ার দেয়ার কথা বলা হয়। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত না নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সময় নেওয়া হয়। কিন্তু তারই মধ্যে প্রতিবেশী দেশ ভারত এতথ্য জেনে যায়। ভারত এতে কড়া আপত্তি জানায় এবং বিকল্প চিন্তা করতে সরকারকে পরামর্শ দেয়। ফলে সেই সময় আওয়ামী-জামায়াত সমঝোতার প্রক্রিয়া এগোয়নি।
জানা গেছে, এর আগে ড্যান ডব্লিউ মজিনার সময় ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে আওয়ামীলীগ ও জামায়াতের মধ্যে একটি বিশেষ বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী, জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরসহ দুই দলের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা অংশ নেন। ওই বৈঠকটিকে চা চক্র বলা বলেও বৈঠকে আওয়ামীলীগ ও জামায়াত নেতারা ছাড়া অন্য কোন দলের কেউ উপস্থিত ছিলেন না।
আওয়ামীলীগ-জামায়াত সমঝোতার ইতিহাস নতুন নয়। ক্ষমতায় থেকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৮৬ সালে জাতীয় নির্বাচন দেন। সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও আওয়ামীলীগের সঙ্গে অংশ নিয়েছিল জামায়াত। সংসদের ১০টি আসনও পেয়েছিল জামায়াত। তাছাড়া ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার আগে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে মাঠে ছিল আওয়ামীলীগ ও জামায়াত।
সম্প্রতি বিরোধী জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আহ্বানে ২০ দলের কয়েকটি বৈঠকে অংশ নেয়নি জামায়াত। এ নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা গুঞ্জন সৃষ্টি হয়। অবশ্য বিএনপির ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের উদ্বোধনী অধিবেশনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যাপক তাসনীম আলম ও মাওলানা আবদুল হালিম উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র : শীর্ষ নিউজ