শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৬ পূর্বাহ্ন
মোঃ রাজু মিয়া, সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি সংবাদদাতা: প্রায় দুই বছর অচল থাকার সচল হলো সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ‘আলী আমজাদের ঘড়ি’। বর্তমানে পরীক্ষামূলকভাবে ঘড়িটি চালু করা হয়েছে। এখন প্রতি ঘন্টায় বাজে ঘন্টার ধ্বনি। যা প্রায় আধাকিলোমিটার দূর থেকে শোনা যায়। ঘড়িটির মেরামত কাজ করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ঐশি ইলেকট্রনিক্স। এর আগেও একাধিকবার ঘড়িটি অচল হয়ে পড়লে লাখ লাখ টাকা ব্যায়ে মেরামত করা হলেও বেশিদিন টিকেনি। এবার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আগামী দেড় বছর ঘড়িটি রক্ষণাবেক্ষণ করবে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ঐশি ইলেকট্রনিক্স পরিচালক সত্য রঞ্জন সরকার জানান এখন ঘড়িতে যে প্রযুক্তি সচল আছে তা দিয়ে ঘড়িটি ভালভাবেই চলতেছে ,তবে ঘড়িতে যে প্রযুক্তি ব্যাবহার করা হয়েছে তার প্রত্যেকটা অংশ আলাদা আলাদা। প্রত্যেকটা অংশ আলাদা –আলাদা হওয়ার কারনে বিদ্যুৎ বেশি খরচ হওয়ার সাথে সাথে ডিভাইসের পার্টগুলাও নষ্ট হওয়ার আশংকা প্রকাশ করেছেন তিনি। তাই তিনি এক নতুন যুগান্তরকারী প্রযুক্তির আশ্রয় নেন, যার মাধ্যমে ঘড়িটির মেয়াদকালও বাড়বে, ঘড়ির সকল যন্ত্রপয়াতির এখন আর এত সহজেই নষ্ট হয়ে যাবে না, বিদ্যুৎ না থাকলেও ঘড়ি ঘন্টার পর ঘন্টার সঠিক সময় দিবে। ঘড়িতে যে আলাদা আলাদা পার্টস আছে , নতুন প্রযুক্তি ব্যাবহার করে তিনি সকল পার্টসকে একটা বোর্ডে নিয়ে আসেন। তিনি জানান বোর্ডের কাজ প্রায় শেষের দিকে, কাজ শেষ হলেই নতুন প্রযুক্তি যোগ হবে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী আলী আমজাদের ঘড়িতে।
সুরমা নদীর ওপর ক্বিনব্রিজকে বলা হয় সিলেটের প্রবেশদ্বার। আর এই ব্রিজের পাশেই চাঁদনীঘাটে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিখ্যাত আলী আমজাদের ঘড়ি। ১৪২ বছরের পুরনো এই ঘড়ি নির্মাণ করা হয় ১৮৭৪ সালে। তৎকালীন বড়লাট লর্ড নর্থ ব্রুক সিলেট সফরে আসেন। তার সম্মানে মৌলভীবাজারের পৃথিমপাশার জমিদার নবাব আলী আহমদ খান ঘড়িটি নির্মাণ করেন। যা পরিচিতি পায় তার ছেলে নবাব আলী আমজাদের ঘড়িঘর নামে। নির্মাণের পর থেকেই আড়াই ফুট ডায়ামিটার ও দুই ফুট লম্বা ঘড়ির কাঁটা সকলের নজর কাড়তে শুরু করে। আলী আমজাদের ঘড়ির দৈর্ঘ্য ৯ ফুট ৮ ইঞ্চি, প্রস্থ ৮ ফুট ১০ ইঞ্চি, নীচ থেকে ছাদ পর্যন্ত উচ্চতা ১৩ ফুট, ছাদ থেকে ঘড়ি অংশের উচ্চতা ৭ ফুট, ঘড়ির উপরের অংশের উচ্চতা ৬ ফুট। সবমিলিয়ে এই ঘড়ির মোট উচ্চতা ২৬ ফুট। লোহার খুঁটির ওপর ঢেউটিন দিয়ে সুউচ্চ গম্বুজ আকৃতির এই ঘড়িটি হয়ে উঠে সিলেটের ঐতিহ্য। যার সময় দেখে তখন আসা-যাওয়া ও কাজকর্ম সম্পাদন করতেন এলাকাবাসী। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন হানাদার বাহিনীর গোলার আঘাতে এই প্রাচীন ঘড়িঘরটি বিধ্বস্থ হয়। আশির দশকে প্রবাসীরা ঘড়িটি সংস্কার করেন। এতে কয়েক বছর এটি সচল ছিল। পরে জাপানি সিজান কোম্পানি ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে ঘড়িটি আবার চালু করে। সেই সঙ্গে চারপাশে বেষ্টনীর ওপর উঁচু গ্রিল দিয়ে ঘড়িটিকে সুরক্ষিত করা হয়। কিন্তু বছর না ঘুরতেই ঘড়িটির কাঁটা আবারো বন্ধ হয়ে যায়। ২০১১ সালে ঘড়ি মেরামতের লক্ষ্যে ২৮ লাখ টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। মেরামতের ৬ মাসের মাথায় ঘড়িটি অচল হয়ে পড়ে। এরপর রক্ষণাবেক্ষণ করে চলে ২০১৪ সাল পর্যন্ত।
সিলেটে পর্যটকদের জন্য এক অন্যতম আকর্ষণ এই ঘড়ি। এখানে বেড়াতে এসে ঘড়িঘর দেখতে কেউ ভুল করেন না। সুরমা নদীর তীরবর্তী ঘড়িঘর ও এর লাগোয়া ঐতিহাসিক ক্বিনব্রিজ ও চাঁদনীঘাট এলাকাটি সিলেট মহানগরের একটি আকর্ষণীয় স্থান। এর পার্শ্ববর্তী সুরমা নদীর পাড় বাঁধাই করে একটি বিনোদনের স্পট তৈরি হয়েছে। লেখাটির স্বত্ত্ব আমার সুরমা ডটকম–এর