রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৩ অপরাহ্ন
চান মিয়া, বিশেষ সংবাদদাতা (সুনামগঞ্জ): সুনামগঞ্জের ছাতকে শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষিকার গালে সজোরে চড় মারার বিষয় নিয়ে উপজেলার সবগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। এটি দীর্ঘদিনের পূঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে অভিযোগে জানা গেছে। গত ৪ এপ্রিল উপজেলার দোলারবাজার ইউপির বারগোপি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে গত ৫ এপ্রিল শিক্ষিকা উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবরে এক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) উপজেলার দোলারবাজার ইউপির বারগোপি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, ঘটনার দিন শিশু শিক্ষার্থীদের ছুটি দেয়ার বিষয় নিয়ে প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান একই স্কুলের সহকারি শিক্ষিকা হালিমা বেগমকে সজোরে চপেটাঘাত করলে সর্বত্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠে। এ ঘটনায় শিক্ষা অফিসে দেয়া হালিমা বেগমের আবেদনে বলা হয়, ক্লাস না থাকায় অফিসে বসা অবস্থায় কথা প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক তার গালে সজোরে চপেটাঘাত করেছেন। এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগিয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, সুনামগঞ্জ জেলা ও ছাতক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহরে দাবি জানান। শিক্ষিকা হালিমা বেগম জানান, ঘটনার পর উপজেলার সবগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসহ সর্বত্র তীব্র নিন্দাও প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিসহ এলাকাবাসি বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে বলেন, প্রধান শিক্ষক খুবই খারাপ লোক। তাকে তিনি অনেক কথাবার্তা বলেছেন। কিন্তু তার এসব কথা তিনি মানেন নি। হালিমা বেগম বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনেক শিক্ষিকা ও ছাত্রী উত্যক্তের অভিযোগ রয়েছে। এলাকার সবারই এগুলো জানা রয়েছে। তিনি শতকরা ৯৯% ভাগই মিথ্যা কথা বলেন। তার কোন দিকই ভাল নয়। এতোদিন লোক লজ্জার ভয়ে মূখ খুলিনি। হালিমা আরো জানান, একদিন তাকে ডেকে নিয়ে বলেন তুমি যদি আমার কথা শোন, তাহলে তোমাকে অনেক সুযোগ-সুবিধা দেবো। এতে তোমার কোন অসুবিধা হবেনা। এতে সায় না দেয়ায় তিনি চরমভাবে ক্ষেপে উঠেন। আর এরই বহিঃপ্রকাশ ঘটালেন ছাত্রদের ছুটি দেয়ার তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে। এ ঘটনায় সজোরে গালে চড় মারার মতো কোন পরিস্থিতি ছিলনা। এরপর তার কথা না শুনায় গালে চড় দিয়েই ক্ষোভের সমাপ্তি ঘটানোর অপচেষ্টা চালান। এ ব্যাপারে হালিমার প্রতিবন্ধী পিতা লক্ষীপাশা গ্রামের মফজ্জিল আলী জানান, প্রধান শিক্ষক মেয়ের কোন দোষ হলে কমিটি এমনকি উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে বিচার প্রার্থী হতে পারতেন। কিন্তু অবিবাহিত মেয়ের গালে সজোরে চপেটাঘাতের ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। তিনি এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন। একই বক্তব্য দিলেন লক্ষীপাশা গ্রামের সাবেক শিক্ষক সাহাব উদ্দিন। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি নিজাম উদ্দিন, সাবেক সভাপতি হাজি মবশ্বির আলী, মুসফিকুর রহমান, সমাজসেবী হাজি আশিক মিয়া, মছলু মিয়া, নাজিম উদ্দিন, আব্দুল মোমিন, নজরুল ইসলাম, আব্দুর রব, হেলাল উদ্দিনসহ অনেকে নিন্দনীয় এ ঘটনার সাথে জড়িত প্রধান শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তির চেষ্টা চালান বলে দাবি করেন তারা। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান জানান, ডিসেম্বরে স্কুল ফাঁকি দেয়ায় তার বেতন কাটা হয়েছে। ঘটনার দিন সময়ের আগেই স্কুল ছুটি দেয়ার বিষয় নিয়ে এ ঘটনা ঘটে। তবে গালে চপেটাঘাতের ঘটনাকে তিনি অন্যায় ও অনাকাংখিত বলে দাবি করে তার বিরুদ্ধে আনীত যাবতীয় অভিযোগ মিথ্যা বলে জানান। উপজেলা শিক্ষা অফিসার মানিক চন্দ্র দাস লিখিত আবেদনের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঘটনাটি সকলকে মর্মাহত করেছে। তবে তদন্ত সাপেক্ষে শীঘ্রই এর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহ করা হবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় উপ-পরিচালক তাহমিনা খাতুন জানান, একজন পুরুষ শিক্ষক হয়ে কোন স্পর্ধায় একজন মহিলা শিক্ষকের উপর হাত তুলেছে। তবে এর শাস্তি তাকে অবশ্যই পেতে হবে। তিনি বলেন, এ ঘটনাই প্রমান করে তার বিগত দিনের চাল-চরিত্র ভাল ছিলনা। শনিবার (৮ এপ্রিল) ঘটনাস্থল তদন্তের মাধ্যমে এ ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন।