বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৮ অপরাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার: সিলেট তথা বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো যাত্রা শুরু হলো ‘ডায়বেটিক ফুট’ ও ‘বেড সোর’ রোগীদের জন্যে অত্যাধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে রোগীদের গভীর বা অগভীর ক্ষতস্থানগুলো দ্রুত ভাল করা সম্ভব। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির নাম ‘ভ্যাকুয়াম এসিস্টেড ক্লোজার থেরাপী’ বা সংক্ষেপে ‘ভ্যাকুয়াম থেরাপী’। এই প্রযুক্তি ব্যাবহার করে একটি যন্ত্র তৈরি করা হয়েছে যার নাম “ভ্যাকুয়াম মেশিন”।
এটি বিশ্বে নতুন নয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা ১৯৯৫ সালে এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। বর্তমানে এটি ফান্স ও যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে তৈরি হয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি যন্ত্র বাংলাদেশে আমদানী করতে কমপক্ষে ৫ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়।
দেশী-বিদেশী যন্তাংশ ব্যবহার করে সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে যন্ত্রটি তৈরি করেন সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র মোঃ রাজু মিয়া। তবে যন্ত্রটি তার একার পক্ষে করা সম্ভব হয়নি, এই যন্ত্রের আইডিয়া দেন ডায়বেটিক ফুট এন্ড ওউন্ড হিলিং সেন্টার, সিলেট এর পরিচালক ডাঃ এম. মঞ্জুর আহমেদ। তিনি ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড থেকে এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। মুলতঃ রাজু মিয়া, ডাঃ এম. মঞ্জুর আহমেদ-এর আইডিয়া নিয়েই দীর্ঘদিন কাজ করেন। ২ মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করার পর তারা এই ভ্যাকুয়াম মেশিনটি কম খরচে তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যন্ত্রটি কাজ করে কি না তা দেখার জন্যে বেশ কিছু রোগীর উপর পরীক্ষা করা হয়। মাত্র কয়েক সপ্তাহে আশাতীত ভাল ফলাফল পাওয়ার পর, যন্ত্রটি দিয়ে এখন ডায়বেটিক ফুট এন্ড ওউন্ড হিলিং সেন্টারের মাধ্যমে সিলেটের রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছে।
রাজু মিয়া বলেন “এই যন্ত্রটি তৈরি করা এত সহজ ছিলনা, যন্ত্রটি একটি সফটওয়্যারের সাহায্যে চলে, আর সেই সফটওয়্যার তৈরি করার জন্যে রাত-দিন অনেক কাজ করি, কখনও বাসায় আবার কখনও মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ইনোভেশন ল্যাব-২ তে কাজ করতে হয়েছে, সফটওয়্যারের কাজ শেষে একটি কন্ট্রলার সার্কিট বোর্ড তৈরি করি, এই কন্ট্রলার সার্কিট বোর্ডটি সমস্ত যন্ত্রটাকে নিয়ন্ত্রন করে, এই যন্ত্রের মেকানিক্যাল কাজটাও খুব একটা সহজ ছিল না।”
ডাঃ এম. মঞ্জুর আহমেদ বলেন, “ভ্যাকুয়াম থেরাপী একটি বাস্তবধর্মী ক্ষত চিকিৎসা পদ্ধতি। এর মাধ্যমে ক্ষত বা অপারেশন সাইট থেকে রক্ত বা তরল শোষণ করা হয়। বিশেষ ধরণের একটি ফোম ক্ষতস্থানে স্থাপন করে বিশেষ এক ধরণের পাতলা ফিল্ম দিয়ে ক্ষতস্থান সম্পূর্ণ ঢেকে (সীল) দেওয়া হয়। সীলের ভিতর থেকে একটি পাইপ ভ্যাকুয়াম মেশিনের পাম্পে সংযুক্ত করা হয়। পাম্পের সাহায্যে ক্ষতস্থানের তরল পদার্থ ও সংক্রামক উপাদান সমূহ সয়ংক্রিয়ভাবে বাইরে টেনে নেওয়া হয়।”
ডাঃ এম. মঞ্জুর আহমেদ আরো বলেন যে “বেড সোর” বা শয্যাক্ষত একটি মারাত্মক সমস্যা। সাধারণত প্যারালাইসিস রোগী, কিডনী রোগী, হাড়ভাঙ্গা রোগী বা পঙ্গু রোগীদের দীর্ঘদিন বিছানায় শুয়ে থাকতে হয় এবং পিঠে বা কোমরে বড় বড় ক্ষত হয়। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দেয়াসহ রোগীর জীবন বিপন্ন হতে পারে। ভ্যাকুয়াম থেরাপীর মাধ্যমে এ ধরণের ক্ষত শুকানো এখন আগের চেয়ে অনেক বেশী সহজ”।
আমাদের শরীরে যেকোন সময় যেকোন ভাবে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে যেমনঃ আঘাত, এক্সিডেন্ট, বার্ন, অপারেশন ইত্যাদি। ক্ষত সময় মতো না শুকালে এর থেকে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষত মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি ডেকে আনতে পারে। তাই ছোটবড় কোন ক্ষতকেই অবহেলা না করে সঠিক চিকিৎসা নিন। ভ্যাকুয়াম থেরাপীর মাধ্যমে বেড সোর, ডায়াবেটিস ও নন-ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের ক্ষত, এক্সিডেন্ট ও বার্ন রোগীর ক্ষত খুব সহজেই ভালো করা সম্ভব।
লেখাটির স্বত্ত্ব আমার সুরমা ডটকম–এর