রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৯ পূর্বাহ্ন
কাজী জমিরুল ইসলাম মমতাজ: কামারখালটি শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এক সময়ে। বিশাল এই খালটি ছিল এই শহরের ঐতিহ্য। শহরের পানি নিষ্কাশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতো এই খালটি। কিন্তু কিছু ভূমিখেকোর কবলে পড়ে শহরের এই বড় খালটি এখন মৃত। খালে পানির কোন প্রবাহ নেই। নেই নদীর সাথে সংযোগ। স্থানে স্থানে বাঁধ দিয়ে এবং বৃহদাংশ দখল করে খালটিকে মেরে ফেলা হয়েছে। যেমন মেরে ফেলা হয়েছে শহরের অন্যসব খালকেও। সুনামগঞ্জ শহরের বৈশিষ্ট্য ছিল এর প্রতিটি পাড়া-মহল্লা এরূপ খাল দ্বারা বেষ্টিত ছিল এবং খালগুলোই ড্রেনের কাজ করত। এই খালটি চালু থাকলে শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার বড় অংশের সমাধান হয়ে যেত। কিন্তু আমাদেরই কতিপয় ব্যক্তির দখল দারিত্বের মনোভাবের কাছে এই খালটি আজ কেবল ইতিহাসের বিষয় বস্তুতে পরিণত হয়েছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ইং তারিখে প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে জানা যায়, শহরের সবচাইতে বড় এই খালটির বিভিন্ন অংশের জায়গা এখন ৫৯ ব্যক্তি দখল করে রেখেছেন। দখলকৃত জায়গায় অনেকে স্থায়ী/অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। শহরবাসী বার বার এই খাল দখলবাজদের নিকট থেকে উদ্ধার করে চালু করার দাবি জানিয়ে আসলেও বাস্তবে খালটিকে দখলমুক্ত করার কোন পদক্ষেপ গৃহিত হতে দেখা যায়নি। অতীতে নানা সময়ে বিশেষ করে গত ওয়ান ইলিভেন সরকারের আমলে এই খালটিকে উদ্ধারের জন্য বেশ কিছু তৎপরতা দৃশ্যমান থাকলেও রহস্যজনক কারণে সেই তৎপরতাও সফলতার মুখ দেখেনি। সম্প্রতি জেলা প্রশাসন এই খালটি পুনরুদ্ধারের জন্য কিছু কাজ শুরু করেছেন বলে জানা যায়। গত ৮ আগস্ট ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ৫৯ দখলকারের নাম উল্লেখ করে জমির পরিমাণ এবং দখলকৃত জায়গায় নির্মিত স্থাপনার বিবরণ দিয়ে সহকারি কমিশনার (ভূমি)-এর নিকট চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে দখল উচ্ছেদের মোকদ্দমা রুজু করার প্রস্তাব করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক বলেছেন, যাচাই বাছাই শেষে এই বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব আমরা। কোন অঞ্চলের প্রাকৃতিক এইসব খাল দখলের বিরুদ্ধে তথা দখলিকৃত খাল পুনরুদ্ধারের জন্য সারা দেশেই জনসচেতনতা তৈরি হয়েছে। ঢাকার বিশাল ও দৃষ্টিনন্দন হাতির ঝিল প্রকল্প-এর বড় প্রমাণ। ঝিলের জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে বলে বিজিএমইএর বিশাল ভবন ভেঙ্গে ফেলার জন্য আদালত নির্দেশনা জারি করেছেন। সিলেট শহরে বহু ছড়া উদ্ধারের কথা আমাদের জানা রয়েছে। এরূপ অবস্থায় সুনামগঞ্জ শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহ্যবাহী খাল কেন পুনরুদ্ধার করা যাবেনা? এই খালটি উদ্ধার করে চালু করা একটি সুন্দর শহর নির্মাণের আকাঙ্খার সাথে স¤পর্কিত। বিশাল এই খালটিকে আগের অবস্থায় নিয়ে এটিকে দৃষ্টিনন্দন লেকে পরিণত করা যায়। তখন এটি পানি ধারণ ও নিষ্কাশনের পাশাপাশি শহরবাসীর বিনোদন চাহিদা মিটিয়ে শহরের সৌন্দর্য বাড়াবে অনেকখানি। তাই আমরা প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাই এই খালটিকে দখলকারদের কবল থেকে উদ্ধার করার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। এছাড়া শহরের মরে যাওয়া অন্যসব খালগুলোও যাতে উদ্ধার করা যায় সে লক্ষ্যেও প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করি আমরা।