সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৬ অপরাহ্ন
চান মিয়া, নিজস্ব প্রতিবেদক (সুনামগঞ্জ): ছাতক সিমেন্ট কারখানার দু’টি পাওয়া প্ল্যন্ট বিক্রয়ের যাচাই-বাছাই ও জমা দানে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই জমা গ্রহণ বন্ধ করে নিজেদের পরিচিত প্রতিষ্ঠানের দরপত্র নির্বাচন করতে সর্বোচ্চ দরদাতাদের জমা দিতে বাঁধা দেয়া হয়েছে। এমনকি দরপত্র জমা দেয়ার ৩টি বক্স একত্রিত না করেই যাচাই-বাছাইয়ের কাজ সম্পন্ন করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নিরাপত্তাকর্মি ও আনসার সদস্যদের বাঁধার মুখে নির্ধারিত সময়ের আগে এসেও প্রধান ফটকে আটকে দেয়া হয় আগ্রহী ১৫টি প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারদের। ফলে জমা দিতে আসা পে-অর্ডার ফেরত নিয়ে ফেরত নিয়ে চলে যান অনেকে।
এদিকে নির্ধারিত সময়ে এসেও জমা দিতে না পারায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারদের তোপের মুখে পড়েন কোম্পানীর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নেপাল কৃষ্ণ হাওলাদার। সূত্র জানায়, সিডিউল অনুযায়ি গত বুধবার চট্টগ্রামের সাগরিকা নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ২ কোটি ৫১ লাখ টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচন করেন কর্তৃপক্ষ। অথচ সকাল সাড়ে ১১টা থেকে অপেক্ষা করেও এর চেয়ে বেশি মূল্যের ২ কোটি ৭১ লাখ টাকার দরপত্র জমা দিতে পারেনি একটি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া এর কাছাকাছি মূল্যের আরো কয়েকটি সিডিউল জমা দিতে ব্যর্থ হন আরো একাধিক প্রতিষ্ঠান। কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে কোম্পানীর নিরাপত্তা কর্মী ও আনসার সদস্যরা ভেতরে প্রবেশ করতে না দেয়ায় ক্ষোব্ধ হন দরপত্র দাখিল করতে আসা একাধিক প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদাররা। এ ঘটনায় ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়। জানা গেছে, গত ১৬ অক্টোবর ছাতক সিমেন্ট কারখানা কর্তৃক আহ্বানকৃত দরপত্র (সূত্র নং-সিসিসিএল/এমপিআইসি-৬০/২০১৭-১৮/২১৩, তাং-১৬.০৬.২০১৭) স্মারকে কোম্পানীর ২ দশমিক ৪ ও ৪ দশমিক ৫ মেঘাওয়াটের দু’টি অকেজো পাওয়ার প্ল্যান্ট বিক্রয়ের জন্যে দরপত্র আহবান করেন। গত ৩১ অক্টোবর সিডিউল ক্রয় ও ১ নভেম্বর দুপুর ১২টার মধ্যে দরপত্র জমাদানের শেষ সময় ছিল। এছাড়া দরপত্র সিলেটের জেলা প্রশাসকের নেজারত শাখা, গণপূর্ত অফিস ও কোম্পানীর ভেতরে একটি উন্মুক্ত বক্সে জমা দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। সূত্র জানায়, ১ নভেম্বর নির্ধারিত সময় দুপুর ১২টার আগেই জমা নেয়া বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ৩টি স্থানে জমাকৃত দরপত্র একত্রিত না করেই শুধুমাত্র ফ্যাক্টরির ভেতরের বক্সে জমা হওয়া দরপত্রগুলো থেকে বাছাই করেন তারা। জানা গেছে, যে দরপত্রটি বাছাই করা হয়েছে, তার বেশি দামের দরপত্র জমাদানকারি প্রতিষ্ঠানকে কোম্পানীর বাইরে নিরাপত্তাকর্মীরা আটকে দেন। ফলে তারা পে-অর্ডার নিয়েই ফেরত যেতে হয়েছে। জানা গেছে, মেসার্স রুবেল এন্টারপ্রাইজ, রেজা ইলেক্ট্রিক, চিশতি এন্টারপ্রাইজ ও গোবিন্দগঞ্জ ট্রেডিংসহ ১৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১১টায় দরপত্র জমা দিতে আসেন। কিন্তু গেইটের নিরাপত্তাকর্মীরা জমা নেয়ার সময় শেষ বলে তাদেরকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। রুবেল এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারি রিমাদ আহমদ রুবেল জানান, সাড়ে ১১টার সময় তারা কোম্পানীর ভেতরে গিয়ে দরপত্র জমা দিতে চাইলে প্রধান ফটকের নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে বাঁধা দেন। এ সময় তিনি অনেক চেষ্টা করেও জমা দিতে পারেন নি। এতে বিপুল পরিমান রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার। মাহি আয়রন-এর স্বত্ত্বাধিকারি দুলাল আহমদ জানান, কর্তৃপক্ষ যে ২ কোটি ৫১ লাখ টাকার দরপত্র বাছাই করেছে। এর চেয়ে তার প্রতিষ্ঠান অনেক বেশি মূল্যের পে-অর্ডার করেছে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগে এসেও তিনি জমা দিতে পারেন নি বলে জানান। একইভাবে রেজা ইলেক্টিকসের স্বত্ত্বাধিকারি কামাল উদ্দিন বিপ্লব বলেন, তাদের ১০/১৫টি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ের পূর্বে দরপত্র জমা দিতে চাইলে তাদেরকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।
কারখানার এমডি নেপাল হাওলাদার বলেন, আমি এ ব্যাপারে তেমন কিছু জানি না। টেন্ডার নিরিক্ষণ কমিটির প্রধান কোম্পানীর ডেপুটি ম্যানেজার নার্গিস মোমেনা সব কিছু দেখাশুনা করেছেন। তবে চট্টগ্রামের সাগরিকা নামে একটি প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার নির্বাচন করা হয়েছে। আর কোন সূযোগ নেই। যারা দিয়েছেন, তাদের থেকে আমরা বাছাই করেছি। তবে সময়ের আগে দাখিলকারি কোন প্রতিষ্ঠানকে ঢুকতে বাঁধা দেয়া হয়নি বলে তিনি জানান। তবে আবেদনকারিদের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে এবং সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।