সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২১ অপরাহ্ন
চান মিয়া, নিজস্ব প্রতিবেদক (সুনামগঞ্জ): ছাতক সিমেন্ট কারখানার দু’ইউনিট বিশিষ্ট একটি পাওয়ার প্ল্যান্ট বিক্রয়ের টেন্ডার নিয়ে অনিয়মের ঘটনা নিয়ে দু’পক্ষে পরস্পর বিরোধি বক্তব্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কতিপয় বঞ্চিত ঠিকাদার ও কর্তৃপক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ চলছে। কর্তৃপক্ষ বলছেন, টেন্ডারে কোন দূর্নীতি হয়নি। কিন্তু বঞ্চিত কতিপয় ঠিকাদার এমডির কাছে অনিয়মের লিখিত অভিযোগ ও থানায় জিডি করে কর্তৃপক্ষের অভিযোগ অস্বীকার করছেন।
এদিকে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ৬শ’ ৬৭টি কোটি টাকার নতুন সিমেন্ট ফ্যাক্টরির নির্মাণ কাজ শীঘ্রই শুরু হতে যাচ্ছে। এতে ১৯৬৫ সালে স্থাপিত একটি পাওয়ার প্ল্যান্টের দু’টি ইউনিট ২০০৪ সাল তথা ১৩ বছর থেকে অকেজো পড়ে থাকা ২.৪ ও ৪.৫ মেঘাওয়াটের একটি ভবনসহ ইউনিটগুলো এখান থেকে সরিয়ে নেয়ার প্রয়াজনীয়তা দেখা দেয়। এখানে নতুন কারখানার জন্যে ৬ মেঘাওয়াটের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন নতুন পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে কর্তৃপক্ষ অকেজো প্ল্যান্টকে সরানোর জন্যে টেন্ডার আহবান করেন। জানা গেছে, গত ১৯ অক্টোবর ছাতক সিমেন্ট কারখানা কর্তৃক আহবানকৃত দরপত্র (সূত্র নং-সিসিসিএল/এমপিআইসি-৬০/২০১৭-১৮/২১৩, তাং-১৯.১০.২০১৭) স্মারকে কোম্পানীর পাওয়ার প্ল্যান্টের দু’টি অকেজো ইউনিট বিক্রি দরপত্র আহবান করা হয়। গত ১৯ অক্টোবর পত্রিকা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সিডিউল বিক্রির সময় শেষ ও ১ নভেম্বর দুপুর ১২টার মধ্যে দরপত্র জমাদানের নির্ধারিত সময় ধার্য করা হয়। সিলেট জেলা প্রশাসকের নেজারত শাখা, গণপূর্ত অফিস ও কারখানায় দরপত্র বিক্রি করা হয়। পরে কারখানায় ১১টি ও সিলেটের ২টি বক্সে আরো ৯টিসহ মোট ২০টি জমাকৃত দরপত্র একত্রিত করে ফ্যাক্টরির ভেতরে পুলিশ, বিজিবি, আনসার, সিকিউরিটি ও জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সুষ্ঠুভাবে বাছাই কাজ সম্পন্ন করা হয়। এ সময় উপ-ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ও টেন্ডার নিরীক্ষণ কমিটির প্রধান নার্গিস মোমনা, কমিটির নেতৃবৃন্দ ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ২০টি দরপত্রের মধ্যে ২ কোটি ৫১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা মনোনীত হয়েছেন চট্টগ্রামের মেসার্স বিছমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া ২ কোটি ২০ লাখ টাকায় মেসার্স এম আলী এন্টারপ্রাইজ ২য় ও ২ কোটি ১৯ লাখ টাকায় ৩য় হয়েছেন আল আমিন আয়রন এন্টারপ্রাইজ নামের অপর একটি প্রতিষ্ঠান। এ ব্যাপারে বিক্রয় কমিটির প্রধান নার্গিস মোমেনা জানান, অত্যন্ত সুষ্ঠু ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে দরপত্র কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে, এক্ষেত্রে কোন দূর্নীতি ও অনিয়ম করা হয়নি। কতিপয় ঠিকাদার সময় বাড়িয়ে দেয়ার কথা বলে জোরপূর্বক টেন্ডারবক্স খোলার প্রচেষ্টা করলে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপে তাদের সব ষড়যন্ত্র অবশেষে ব্যর্থ করা হয়। ওই দিন সকাল থেকে পুলিশ ও বিজিবিসহ নিরাপত্তা কর্মির মাধ্যেমে কারখানায় সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল লক্ষ্যণীয়।
অন্যদিকে মেসার্স রুবেল এন্টারপ্রাইজ, রিয়াজ ইলেক্ট্রিক, চিশতি এন্টারপ্রাইজ ও গোবিন্দগঞ্জ ট্রেডিংসহ ১৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গত ১ নভেম্বর যথাযথ সময়ে এসেও কারখানার ভেতরে যেতে বাঁধা দেয়ায় তারা টেন্ডার জমা দিতে পারেন নি বলে অভিযোগ করেছেন। এ ব্যাপারে কারখানার এমডির কাছে লিখিত অভিযোগ ও থানায় পৃথক জিডি করেছেন বলে জানান তারা। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ অস্বীকার করে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই তারা টেন্ডার বক্সের পাশে উপস্থিত ছিলেন জানিয়ে বলেন, তাদের কাছে সিসি ক্যামেরাসহ অন্যান্যভাবে রেকর্ড প্রমানাদি রয়েছে। এতে কারখানার সহ-ব্যবস্থাপক (শ্রমকল্যাণ) একেএম হাবিবুর রহমান কারখানার সুনামকে ক্ষুন্ন করার জন্যে একটি মহলে নানা অপ-প্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। এ ব্যাপারে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চঃ দাঃ) নেপাল কৃষ্ণ হাওলাদার টেন্ডারে কোন ধরনের অনিয়ম দূর্নীতি হয়নি জানিয়ে বলেন, ১৩ বছরের অকেজো পাওয়ার প্ল্যান্টসহ একটি বিল্ডিং ভেঙ্গে এখানে নতুন প্ল্যান্ট স্থাপন ও ৮৪ বছরের পুরাতন কারখানাকে নতুন কারখানায় রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে অকেজো পাওয়ার প্ল্যান্টকে সরানোর জন্যে টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। তিনি বলেন, ড্রপিংয়ের এর দিন বিকেল ৩টায় বাসায় যাবার পথে কয়েকজন কয়েক ব্যক্তি নিজেদেরে ঠিকাদার পরিচয় দিয়ে বলেন, দরপত্র জমা দিতে তাদের বাঁধা দেয়া হয়েছে। অথচ এর আগে আমিসহ কারখানার কোন অফিসারকে বাঁধা দানের কথা জানানো হয়নি। তবে এ ব্যাপারে কয়েকজন লিখিত অভিযোগ দেয়ায় একটি কমিটির মাধ্যমে তাদের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।