সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৭ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক: প্রথমে বসেছিলেন চেয়ারে। কিন্তু সেখানে বসতেই কেঁদে উঠছিল কোলের শিশুটি। অগত্যা শিশুকে শান্ত করতে বসলেন মেঝেতে। এতে বাচ্চাকে কোলে রাখতেও সুবিধা। এভাবে দুই মাস বয়সী শিশুকে কোলে নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছেন আফগানিস্তানের জাহান তাব। আর সামাজিক মাধ্যমের কল্যাণে এখন সেই ছবি ভাইরাল হয়ে গেছে।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের দায়কুন্দি প্রদেশে সম্প্রতি এ ঘটনা ঘটেছে। ওই এলাকার অধিবাসী ২৫ বছর বয়সী নারী জাহান তাবের স্বামী একজন কৃষক। উচ্চশিক্ষা লাভের ইচ্ছে জাহানের। সে জন্যই একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। ওই পরীক্ষাকে আফগানিস্তানে বলা হয় কানকোর পরীক্ষা।
নিল্লি শহরের নাসিরখোসরো হায়ার এডুকেশন ইনস্টিটিউট নামের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন করেছিলেন জাহান। সামাজিক বিজ্ঞানের একটি বিষয় নিয়ে পড়তে চান তিনি। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতেও বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল তাঁকে। পরীক্ষা চলার সময়ই কেঁদে ওঠে জাহানের দুই মাসের শিশু। শেষে বাচ্চা সামলাতে চেয়ারের পেছনে পিঠ দিয়ে মেঝেতে বসে পড়েন তিনি। এভাবেই দেন পুরো পরীক্ষা।
পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে জাহান তাবের ছবি তোলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ইয়াহিয়া এরফান। এরপর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে একটি পোস্ট দেন তিনি। মূল পোস্টটি এরফান পরে মুছে ফেললেও, তা ভাইরাল হতে বেশি সময় লাগেনি।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নানা মানুষ এ ঘটনায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। এক টুইট বার্তায় জাহানের ছবির ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, ‘আফগান নারীরা অপ্রতিরোধ্য।’ অন্যরাও জাহানকে ‘প্রেরণাদায়ী’ ও ‘একজন কিংবদন্তি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। জাহানের ছবি তোলা ইয়াহিয়া এরফান সিএনএনকে বলেছেন, ‘এটি ছিল একটি অভাবনীয় ঘটনা এবং সহপাঠীরা তাঁর প্রশংসা করছিল।’
জাহান তাবের তিন সন্তান। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে ছয় ঘণ্টার পথ পেরিয়ে নিল্লি শহরে পৌঁছাতে হয়েছিল তাঁকে। সুসংবাদ হলো, ভর্তি পরীক্ষায় উতরেছেন জাহান। কিন্তু পড়াশোনার খরচ জোগানো নিয়ে চিন্তায় আছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত টিউশন ফি দেওয়া তাঁর সাধ্যাতীত।
আফগানিস্তানের স্থানীয় দৈনিক এতিলাত্রুজ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পড়াশোনা চালিয়ে যেতে আগ্রহী জাহান। এদিকে তাঁর পড়াশোনার খরচ সংগ্রহ করতে শুরু হয়েছে প্রচারাভিযান। আফগান ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশন নামের একটি ব্রিটিশ সংস্থা এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছে। ওই সংস্থা বলেছে, একই ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হাজার হাজার আফগান নারীর রোল মডেলে পরিণত হয়েছেন জাহান তাব।