শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১৯ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১
জামালগঞ্জে ৪০ দিনের কর্মসূচীতে বরাদ্ধ আত্মসাতের পায়তারা এক্সেবেটর দিয়ে কাজ করার অভিযোগ

জামালগঞ্জে ৪০ দিনের কর্মসূচীতে বরাদ্ধ আত্মসাতের পায়তারা এক্সেবেটর দিয়ে কাজ করার অভিযোগ

aamarsurma.com

মোঃ আবুল কালাম জাকারিয়া, জামালগঞ্জ (সুনামগঞ্জউপজেলা সংবাদদাতাসুমনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার ইউনিয়ন গুলোতে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় ৪০ দিনের কর্মসূচীতে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সংশিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বাররা কর্মসূচির ১ম পর্যায়ের কাজ যথাযথ ভাবে না করেই বরাদ্ধে সিংহ ভাগ টাকা আত্মসাৎ করে নিয়েছে বলে জানা যায়।

কর্মসূচির ২য় পর্যায়ে এসে একই পন্থা অবলম্বন করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টদেরও অধিকাংশরাই। উপজেলা প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে জামালগঞ্জ উপজেলায় ৬টি ইউনিয়নে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় ১ম ও ২য় পর্যাায় মিলে ১০৯১টি জব কার্ডের জন্য ১ কোটি ৭৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরমধ্যে ১ম পর্যায়ের ৮৭ লাখ ২৮ হাজার টাকার কাজ এখনো যথাযথভাবে সম্পন্ন করেননি সংশ্লিষ্টরা। ১ম পর্যায়ে আংশিক কাজ করেই অধিকাংশ বরাদ্ধ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে নিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের মৌন সমর্থনে, ট্যাগ অফিসারের অবহেলা ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের যোগ সাজেসে প্রতিরারই অতিদরিদ্রদের জন্য দেওয়া এতসব বরাদ্ধ নাম মাত্র কাজ দেখিয়ে শ্রমিকের মাষ্টার রোল বানিয়ে নির্দ্ধিধায় আত্মসাৎ করা হচ্ছে। সরেজমিনে প্রকল্প স্থানের খোঁজ খবর নিতে গিয়ে স্থানীয়রা এসব অভিযোগ জানিয়ে বলেন, সংশিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বাররা স্থানীয় লোকজনকে ও স্ট্যান্ডিং কমিটিকে প্রকল্প কাজের ব্যাপারে কোন কিছুতেই অবগত করেন না।
জামালগঞ্জ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় ১ম পর্যায়ের গৃহিত প্রকল্প সমূহের অনুমোদন দেওয়া হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে। দীর্ঘ ৬ মাস অতিবাহিত হবার পরেও কিছু কিছু প্রকল্প কাজের চিহ্ন ও প্রকল্প স্থানে দেখা যায়নি। এসব বরাদ্ধের টাকা কোথায় গেল তা কেউ জানেন না।
স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৪ মে উপজেলার ভীমখালী ইউনিয়নের ওয়ার্ড গুলোতে প্রদত্ত প্রকল্প কাজের সরেজমিন খোজঁ নিতে গিয়ে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির সত্যতা প্রত্যক্ষ করা গেছে। ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার হাবিবুর রহমান হাবিব একই রাস্তার উপর পরপর দুইবার প্রকল্প সাজিয়েছেন। ১ম পর্যায়ে দুই লাখ টাকার বরাদ্ধের কাজের নামমাত্র আংশিক কাজ করে পুরো টাকা নামে মাস্টার রোল করে উত্তোলন করে নিয়েছেন। একই রাস্তার কাজে ২য় বার দুই লাখ টাকার আরেকটি প্রকল্প দিয়ে মাত্র ৩০ হাজার টাকার কাজ করেই প্রকল্প সমাপ্ত করেন।
৭নং ওয়ার্ডের কলকতখাঁ গ্রামের আশরাফ উদ্দিন জানান, তার বাড়ির সামনে থেকে গৌতম রায়ের মিল পর্যন্ত মাত্র ৫শ ফুট রাস্তায় দুই পর্যায়ে দুই লাখ টাকা বরাদ্ধে ধরে দু’বার প্রকল্প দিয়েছেন হাবিব মেম্বার। অথচ ১ম পর্যায়ের কাজই তিনি সমাপ্ত না করেই বরাদ্ধ উত্তোলন করেন কিভাবে তা বোধগম্য নয়। ২য় পর্যায়ে এসে ও একই রাস্তার উপরে যে প্রকল্প তিনি দিয়েছেন তাতে বরাদ্ধের মাত্র ২০% টাকার কাজ তিনি করেছেন।
তিনি তো এলাকার উন্নয়ন কাজের কোন ব্যাপারেই স্থানীয় লোকজন। এমনকি স্ট্যডিং কমিটিকেও অবগত করেন না। নিজের খেয়ালমত ব্যাক্তিস্বার্থে প্রকল্প দেন আর বরাদ্ধ ভাতা বাটোয়ারা করেন। স্থানীয় উপকার ভোগী জনগন এ ব্যাপারে কোন কিছুই জানতে পারেনা। বার বার যোযাযোগ করা হলেও মেম্বার হাবিবুর রহমান হাবিকে প্রকল্প স্থানে পাওয়া যায়নি।
একই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড মেম্বার এতরাজ আলী বিরুদ্ধেও অনুরূপ প্রকল্প কাজের ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। স্থানীয় হারারকান্দি গ্রামের পূর্বপ্রান্তে একই স্থানে একই রাস্তার উপর পরপর দু;বারে ৫ লাখ টাকার প্রকল্প দিয়েছেন তিনি। শ্রমিকের বদলে এসকেভেটর দিয়ে রাস্তায় মাটি উত্তোলন করলে বরাদ্ধ উত্তোলনের অজ্ঞাত শ্রমিকের নামে মাষ্টার রোল করেছেন। হারারকান্দি গ্রামের আলী আমজদ, শফিক মিয়া, আব্দুল খালেক, লিয়াকবর মড়ল জানান, গ্রামের অভ্যন্তরের রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী থাকায় বর্ষাকালে স্কুলগামী শিশুরা তাদের স্কুলে যেতে পারেনা। কাঁদা মাড়িয়ে গ্রামের মসজিদে আমরা নামাজ পড়তে যাই।
মেম্বার এতরাজ আলী গ্রামের অভ্যন্তরীন রাস্তাটিতে প্রকল্প দিয়ে চলাচলের উপযোগী করার জন্য বারবার অনুরোধ করা হলে ও তিনি তা করেন নি। অথচ পুরাতন রাস্তার উপর রাস্তা তৈরির প্রকল্প এনে বরাদ্ধের তছরুপ করেন।
শ্রমিকের বদলে এসকোভেটর দিয়ে রাস্তায় মাটি ফেলেন এতরাজ মেম্বার। অখচ অতিদরিদ্রদের জন্য দেওয়া এ কাজে এসকোভেটের থাকার কথা নয়। এ সময় সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বার এতরাজ আলীকে প্রকল্প স্থানে আসার অনুরোধ জানালেও তিনি এড়িয়ে যান।
অপরদিকে উপজেলার ফেনারবাকঁ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড। গত ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে অনুমোদিত অতি দরিদ্রাদের জন্য ৪০ দিনের কর্মসূচির ১ম পর্যায়ের কাজে রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে রাজাপুর পয়েন্ট পর্যন্ত রাস্তা নির্মানের প্রকল্প দিয়ে দুই লাখ টাকা বরাদ্ধ উত্তোলন করেন তিনি।
অথচ ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও উক্ত রাস্তা নির্মাণ করা হয়নি। একই ওয়ার্ডেও ২য় পর্যায়ে আরো দুই লাখ টাকা বরাদ্ধ পেয়ে মাত্র ৩১ হাজা টাকার কাজ করেই ২য় পর্যাায়ের প্রকল্প সমাপ্ত করন বলে রাজাপুর মুসলিম পাড়ার শ্রমিকরা জানান। ১ম পর্যায়ের বরাদ্ধকৃত দুই লাখ টাকার কাজ কোথায় করা হল এ ব্যাপারে রাজাপুর গ্রামের অমৃকা সরকার জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজাপুর পয়েন্ট পর্যন্ত রাস্তাটি কেন করা হল না বা উক্ত টাকা কোন খাতে ব্যয় করা হল তা এলাকাবাসী জানেন না। এই প্রকল্প ব্যাপারেও স্থানীয়রা অবগত নন।
বেহেলী ইউনিয়নের হরিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে নির্মাল্য কান্তি জমি পর্যন্ত ২য় পর্যায়ে ২ লক্ষ টাকা বরাদ হলেও এখন পর্যন্ত কোনো কাজ শুরু হয়নি। রহিমাপুর বীজ হইতে সামছুল হক এর বাড়ি সামনে পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ কাজ নামে মাত্র হলে ও অন্ততপুর হইতে আরশীনগর রাস্তায় মোট ৪ লক্ষ ৯৬ হাজার টাকার কোনো কাজ হয়নি।
সর্বপোরি অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মস্থান কর্মসূচির ২য় পর্যায়ের প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন না করে ভূঁয়া মাস্টারোল তৈরি করে টাকা উত্তোলনের পায়তারা চালাছে বলে জানা যায়। ফাঁকিবাজ সদস্যরা একটি বৃষ্টির অপেক্ষায় আছে, বৃষ্টিতে তলিয়ে গেলে মাস্টারোল দিয়ে অর্থ আত্মস্বাৎ করার চেষ্টা করছে। প্রতি বছর অতি দরিদ্রদের দিয়ে গঠিত শ্রমিক দল ছাড়া তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে শ্রমিক ও এক্সেবেটর দিয়ে মাঠি কাটিয়ে অতি দরিদ্রদেরকে ৪০ দিনের কর্মসূচির প্রত্যেককে ৮ হাজার টাকা থেকে বঞ্চিত করছে। অনেক মেম্বারের কাছে ভূয়া শ্রমিকের তালিকা দিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে নিচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তা শাহাদত হোসেন ভূইয়া বলেন, আমাদের মনিটরিং অফিসার আছে, আমি চলতি বছরে জামালগঞ্জ সদর, জামালগঞ্জ উত্তর ও ইউনিয়নের কাজ দেখেছি, অন্যগুলো দেখতে পারিনি। গেলো বছরে কাজ না করার জন্য ৪৭ লক্ষ টাকা ফেরৎ পাঠিয়েছি।
এ বছর প্রথম পর্যায়ের কাজের বিল পরিশোধ করলে ও গাফলতি পেলে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের ফাঁকির সাথে যোগ করে অর্থ মাইনাস করে দিবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম আল ইমরান বলেন, এসকেবেটর দিয়ে কাজ করার প্রমাণ পেলে ছাড় দিবো না, প্রকল্পে বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে বলবো মনিটরিং জোরদার করে হাওরের রক্ষা বাঁধের কাজের মতো কাজ অনুযায়ী বিল পরিশোধ করতে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com