মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১৭ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
আদালতের নির্দেশের পর যা বলল ছাত্রী লাঞ্ছনার অপরাধী রাহুল

আদালতের নির্দেশের পর যা বলল ছাত্রী লাঞ্ছনার অপরাধী রাহুল

আমার সুরমা ডটকম : স্কুলছাত্রীকে প্রকাশ্যে মারধর করা রুহুল আমিন রাহুলকে (১৫) গাজীপুরের টঙ্গী কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টায় হবিগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ মোহম্মদ আতাবউল্লাহ এ নির্দেশ দেন। এছাড়া আদালত আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর শিশু আদালতে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। বেলা পৌনে ৩টায় হবিগঞ্জ সদর থানার এসআই এ কে এম রাসেলের মাধ্যমে জেলা ও দায়রা জজ আতাব উল্লাহর আদালতে রাহুলকে হাজির করা হয়। এ সময় আদালতে জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শোয়েব আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। হবিগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণীর বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র রুহুল আমিন রাহুল। পারিবারিক নাম রুহুল আমিন। আর রাহুল নামটি তার নিজের দেয়া। লেখাপড়া শুরু ঢাকার মধ্য বাড্ডা প্রাইমারি স্কুলে। বাবা ফজল মিয়ার মুদি মালের ব্যবসায় রয়েছে সেখানে। সেই সুবাধে রাহুল সেখানে থাকে। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত বাড্ডা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পর তাকে বাবা পাঠিয়ে দেন হবিগঞ্জে। হবিগঞ্জের উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করা হয় রাহুলকে।

শহরের রাজনগরে মামা মোবারক হোসেনের বাসায় শুরু হয় তার বসবাস। পাশের বাসার শাহজাহান মিয়ার মেয়ে অর্ণা তখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। ক্লাস ফাইভে পড়া অর্ণার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়া রাহুলের। রাহুল ভর্তি হয় হবিগঞ্জ উচ্চবালক বিদ্যালয়ে, এক বছর পর হবিগঞ্জ উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে অর্ণা ভর্তি হয়। একপর্যায়ে বিষয়টি দুই পরিবারের মধ্যে জানাজানি হয়। এরপর রাহুলকে আবারো ঢাকায় নিয়ে যান তার বাবা। কিন্তু রাহুল সেখানে থাকতে নারাজ।পরিবারের কাছে কসম খেয়ে জানায় সে আর অর্ণার সাথে যোগাযোগ করবে না। তবুও সে হবিগঞ্জেই পড়তে চায়। বাধ্য হয়ে রাহুলকে হবিগঞ্জে পাঠান তার বাবা। আবারো সে ভর্তি হয় একই স্কুলের নবম শ্রেণীতে বাণিজ্য বিভাগে। গতকাল বেলা ১টায় কোর্ট হাজতখানায় রাহুল জানায়, দ্বিতীবার হবিগঞ্জে আসার পর অর্ণার সঙ্গে সে কোনো যোগাযোগ করেনি। তবে অর্ণাই তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করত। একপর্যায়ে পারিবারিক সিদ্ধান্তে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয় রাহুল। একাধারে ২০ দিন সে স্কুলেই যায়নি। শ্রেণী শিক্ষক বদরুল আলম খন্দকার খবর দিয়ে রাহুলকে স্কুলে নিয়মিত ক্লাস করতে বলেন। স্যারের নির্দেশে সে আবারো স্কুলে যাওয়া শুরু করে।

রাহুল জানায়, ঘটনার কয়েক দিন আগে অর্ণা একটি কালো ব্যাগে করে কাপড়-চোপড় সঙ্গে নিয়ে তার কাছে এসে বিয়ে করতে চাপ দেয়। বয়স না হওয়ায় বিষয়টি এখনই সম্ভব নয় জানালে তীব্র অভিমান করে অর্ণা। রাহুলের কাছ থেকে ফিরে গিয়ে অর্ণা হৃদয় নামে এক কিশোরের সাথে প্রেম শুরু করে। হৃদয়ের বাড়ি শহরের উমেদনগরে। রাহুলের দাবি অর্ণাই হৃদয়কে তার প্রতি ক্ষেপিয়ে তোলে। একদিন হৃদয় তার বন্ধুদের নিয়ে রাহুলকে স্কুলে যাওয়ার পথে মারধর করে। মারধর করে অর্ণার স্কুলের সামনেই। অর্ণাও ঘটনাস্থলে পাশেই ছিল। অর্ণা তার বান্ধবীদের নিয়ে রাহুলকে নির্যাতনের কাহিনি পর্যবেক্ষণ এবং হাসিঠাট্টা করে।

এতে চরমভাবে অপমান বোধ করে রাহুল। এর প্রতিশোধ নিতে সুযোগ খুঁজতে থাকে রাহুল। ২৬ আগস্ট বিকেলে এবার বান্ধবীদের সামনেই অর্ণাকে চড়থাপ্পড় মারতে থাকে রাহুল। এ দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও করে তার বন্ধু নোমান ও শাকিল। ফেসবুকে আপলোড করে ১ সেপ্টেম্বর। বিষয়টি জেনে তা ডিলিট করে দেয় রাহুল। কিন্তু নোমান ও শাকিলের ফেসবুক ফ্রেন্ডদের কেউ কেউ দৃশ্যটি শেয়ার করে। ফেসবুকহোল্ডার শিশু হওয়ায় তাদের ফ্রেন্ড সংখ্যাও ছিল কম। ফলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগে ৪৮ ঘণ্টা। ৩ সেপ্টেম্বর সেই দৃশ্যটি চলে আসে সাংবাদিকদের কাছে। ১ ঘণ্টার ব্যবধানে দৃশ্যটিতে শেয়ার করে তিন হাজারেরও বেশি ফেসবুক হোল্ডার, যার ভিউয়ার ছিল তখন ৪৮ হাজার। এরপর সেটি চলে যায় টিভি মিডিয়ায় ও ইউটিউবে। এখন স্কুলছাত্রীকে প্রকাশ্যে চড়থাপ্পড় মারার দৃশ্যটি ডিজিটাল দুনিয়ায় অনিয়ন্ত্রিত।

চার ভাইয়ের মধ্যে রাহুল তৃতীয়। বড় ভাই তারেক থাই এলুমিনিয়ামের দোকানে কাজ করেন, দ্বিতীয় ভাই কাউছার বেকার, তৃতীয় রাহুল, ছোট ভাই আমিনুল ইসলাম পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। রাহুলের গ্রামের বড়ইউড়ি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বদরুল আলম জানান, রাহুলের বাবা ফজল মিয়া দীর্ঘ দিন ধরে বাড়িতে আসেন না। তিনি কোথায় থাকেন গ্রামের মানুষ জানে না। কয়েক বছর পরপর তারা একেকবার বাড়িতে আসেন। বাড়িতে তাদের বসতবাড়িঘরও নেই বললেই চলে।

রাহুলের স্কুলশিক্ষক বদরুল আলম খন্দকার জানান, রাহুল অত্যন্ত ভদ্র ছেলেদের একজন ছিল। এ ঘটনার জন্য সে আপাতত দায়ী, কাজেই স্কুল কমিটি এ ব্যাপারে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্তই নেবে।

নির্যাতিতা কিশোরি অর্ণা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন। তবে কোনো কথা বলেননি অর্ণা ও তার পরিবারের কেউ। শনিবার বেলা ১টায় রাহুলকে নিয়ে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিশাত সুলতানার কোর্টে ওসি নাজিমউদ্দিন ও তদন্তকারী কর্মকর্তা ওমর ফারুক সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।

শিশু-কিশোর অপরাধ দমন আইনে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি। অবশেষে রাহুলকে নিয়ে যাওয়া হয় কিশোর অপরাধ দমন আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত জজ হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাফরোজা পারভিনের আদালতে। এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা অ্যাডভোকেট সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট চৌধুরী আশরাফুল বারী নোমান জানান, গ্রেফতারকৃত ছাত্র শিশু। কাজেই শিশু-কিশোর অপরাধ দমন আদালত ছাড়া অন্য কোনো আদালত এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।

হবিগঞ্জ সদর থানার ওসি নাজিমউদ্দিন জানান, আইন অনুযায়ীই সব কিছু হবে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য অপরাধীদের গ্রেফতারেও পুলিশ চেষ্টা করেছে। রাহুলকে গ্রেফতারের পর তার বাবা ফজল মিয়া ঢাকা থেকে আসেন নি। তার মা কোনো খোঁজখবর নেননি। এমনকি তার ভাইয়েরাও থানায় বা কোর্টে আসেন নি। রাহুলের মামার বাড়ির লোকজনই দেখভাল করছে তাকে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: