বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৯ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম:
১৫ই শাবান রাতের পহ্মে কুরআন ও সুন্নাহ্ সুস্পষ্ট অনেক দলিল থাকার পরও, হাজার বছর যাবত এ অঞ্চলের মানুষ ১৫ শাবানের রাতে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এবাদত বন্দেগি করে এ রাতকে কাটিয়ে আসছে। এ অঞ্চলের ইসলামের চর্চা শুরু হাজার বছর পর হঠাৎ এ দল কিম্ভুতকিমাকার বুদ্ধিমান সহি ফর্মুলার মুসলিমদের আবিষ্কার হয়েছে। তারা বলছে ইসলামে নাকি ১৫ শাবানের অস্তিত্ব নেই। পুন্যময় এই রাত্রিতে আপনার মসজিদ বা এলাকায়ও এই নব্য মুসলিমরা সাধারন মুসুল্লিদেরকে বিভ্রান্ত করতে পারে তাই তাদের অপপ্রচার থেকে সাধারন মুসলিমদের সচেতন করতে ১৫ শাবানের রাত সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসের দলিল জেনে নিন। নিজে জানুন, অন্যকে জানান।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেনঃ
ﻭَﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﺍﻟْﻤُﺒِﻴﻦِ 0 ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﻧﺰَﻟْﻨَﺎﻩُ ﻓِﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻣُّﺒَﺎﺭَﻛَﺔٍ ﺇِﻧَّﺎ ﻛُﻨَّﺎ
ﻣُﻨﺬِﺭِﻳﻦَ 0 ﻓِﻴﻬَﺎ ﻳُﻔْﺮَﻕُ ﻛُﻞُّ ﺃَﻣْﺮٍ ﺣَﻜِﻴﻢٍ 0 ﺃَﻣْﺮًﺍ ﻣِّﻦْ ﻋِﻨﺪِﻧَﺎ ﺇِﻧَّﺎ
ﻛُﻨَّﺎ ﻣُﺮْﺳِﻠِﻴﻦَ 0
শপথ প্রকাশ্য কিতাবের! নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন নাযিল করেছি। নিশ্চয়ই আমিই সতর্ককারী। আমারই নির্দেশক্রমে উক্ত রাত্রিতে প্রতিটি প্রজ্ঞাময় বিষয়গুলো ফায়সালা হয়। আর নিশ্চয়ই আমিই প্রেরণকারী।”( সূরা দু’খান, আয়াত শরীফ ২-৫)
উল্লেখিত অায়াতের তাফসির প্রসঙ্গে সাহাবাদের মধ্যে কুরঅানের ব্যাখ্যায় সবচেয়ে অভিজ্ঞ মুফাস্সের, মুফাসসির কুল শিরোমণি রঈসুল মুফাসসিরীন বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস(রা:) উল্লেখ করেন,
“মহান আল্লাহ পাক তিনি অয়াতে উল্লেখিত “লাইলাতুম মুবারাকাহ” (বরকতময় রজনী) বলতে শা’বান মাসের মধ্য রাত বা লাইলাতুল বরাতকে বুঝিয়েছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি এ রাতে প্রজ্ঞাময় বিষয়গুলোর ফায়সালা করে থাকেন।”
সূত্রঃ
তাফসীরে খাযীন ৪র্থ খন্ডঃ ১১২ পৃষ্ঠা, তাফসীরে মাযহারী ৮ম খন্ডঃ ৩৬৮ পৃষ্ঠা।এছাড়াও রয়েছে তাফসীরে ইবনে কাছীর, তাফসীরে বাগবী, তাফসিরে কুরতুবী, তাফসিরে কবীর, তাফসিরে রুহুল বয়ান, দূররে মানছূর, তাফসিরে
জালালাইন, তাফসিরে কামলাইন শরীফে।
দলিল-১
হযরত আয়শা রা. বলেন-এক রাতে রাসূল সাঃ-কে না পেয়ে খুজতে বের হলাম। খুঁজতে খুঁজতে জান্নাতুল বাকীতে [মদীনার কবরস্থান] গিয়ে আমি তাঁকে দেখতে পেলাম। তিনি বললেন-কি ব্যাপার আয়শা? তোমার কি মনে হয় আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল তোমার উপর কোন অবিচার করবেন? হযরত আয়শা রা. বললেন-আমার ধারণা হয়েছিল আপনি অন্য কোন বিবির ঘরে গিয়েছেন। রাসূল সা. তখন বললেন-যখন শাবান মাসের ১৫ই রাত আসে তখন আল্লাহ পাক এ রাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন। তারপর বনু কালব গোত্রের বকরীর পশমের চেয়ে বেশী সংখ্যক বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন।
সূত্রঃ
সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৭৩৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৬০২৮, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ, হাদীস নং-১৫০৯।
দলিল-২
হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন- “অর্ধ শাবানের রাতে (১৫ শাবান রাতে) আল্লাহ তাআলা তাঁর সমস্ত মাখলুকের প্রতি মনযোগ আরোপ করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ব্যক্তি ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন।
সূত্রঃ
সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস নং-১৩৯০, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৬৬৫, মুসন্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩০৪৭৯।
দলিল-৩
আবু মূসা আল আশ’আরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ ‘আল্লাহ তা‘আলা শাবানের মধ্যরাত্রিতে (১৫ শাবান রাতে) আগমণ করে, মুশরিক ও ঝগড়ায় লিপ্ত ব্যক্তিদের ব্যতীত, তাঁর সমস্ত সৃষ্টিজগতকে ক্ষমা করে দেন।
সূত্রঃ
সুনানে ইবনে মাজাহ-১/৪৫৫, হাদীস নং-১৩৯০।
দলিল-৪
হযরত আলী বিন আবু তালীব রা. বর্ণিত, রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন-“যখন শাবান মাসের অর্ধেকের রজনী (১৫ শাবান রাত) আসে তখন তোমরা রাতে নামায পড়, আর দিনের বেলা রোযা রাখ। নিশ্চয় আল্লাহ এ রাতে সূর্য ডুবার সাথে সাথে পৃথিবীর আসমানে এসে বলেন-কোন গোনাহ ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি আমার কাছে? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কোন রিজিকপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দিব। কোন বিপদগ্রস্থ মুক্তি পেতে চায় কি? আমি তাকে বিপদমুক্ত করে দিব। আছে কি এমন, আছে কি তেমন? এমন বলতে থাকেন ফযর পর্যন্ত।
সূত্রঃ
সূনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩৮৮, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৮২২।
এই মহা পবিত্র রাত্রিতে আল্লাহ পাক তার কোন বান্দাকেই বঞ্চিত না করুন। মুসলিম উম্মাহ বিশেষ করে ফিলিস্তন মায়ানমার ইরাক সিরিয়া কাশ্মিরসহ সকল নির্যাতিত মুসলিমের জন্য প্রাণ খুলে দোয়া করবেন।