রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫১ পূর্বাহ্ন
সৈয়দ রেজওয়ান আহমদ:
মহান বিজয় দিবস আমাদের একটি আনন্দঘন দিন। এ দিন মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত হয় দেশের স্বাধীনতা। স্বাধীনতা আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বড় নেয়ামত। ইসলামে দেশপ্রেমের গুরুত্ব অপরিসীম। স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা, শাশ্বত সত্য বলে ইসলামে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘দেশ রক্ষার্থে একদিন এক রাতের প্রহরা ক্রমাগত এক মাসের নফল রোজা এবং সারা রাত ইবাদতে কাটিয়ে দেওয়ার চেয়ে উত্তম। ‘ (সহীহ মুসলিম)
স্বাধীনসত্তা দিয়েই আল্লাহ তাআলা মানুষকে এ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আর তার স্বাধীন বিচরণক্ষেত্র হিসেবে এ বিশাল পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। বিশাল পৃথিবীজুড়ে আদি পিতা আদম আ. ও মা হাওয়া আ. এর আবাসভূমি ছিল। বিশাল পৃথিবীতে তখনও কেউ কোনো সীমানা চিহ্ন নির্ধারণ করতে পারেনি। পরবর্তীকালে আদম আ. এর সন্তানরা সীমানা চিহ্ন দিয়ে নিজেদের আবাস ভূমি বিভক্ত করে ফেলে। ফলে পৃথিবীতে ছোট-বড় অসংখ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হয় এবং ভিন্ন ভিন্ন স্বাধীন জাতি-গোষ্ঠির জন্ম হয়। কোনো জাতির নির্দিষ্ট অংশ যখন অন্য কারো মাধ্যমে নির্যাতিত শোষিত ও বঞ্চিত হয়, তখন নিপীড়িত ও শোষিত জনগোষ্ঠী শোষণকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে যুদ্ধ-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের অাঁধারে পাকিস্তানি হানাদাররা বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু করে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ। এ স্বাধীনতা কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। স্বাধীনতাকে কণ্টকমুক্ত করতে এ দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এমনিভাবে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের আপামর জনতা জেগে ওঠেছিল পশ্চিম পাকিস্তানি স্বৈরাচারী শোষকদের বিরুদ্ধে। প্রায় সাড়ে ৯ মাস যুদ্ধের মাধ্যমে নিজের মাতৃভূমিকে স্বাধীন করেছিল মুক্তিকামী স্বাধীনচেতা বীর সেনানীদের অাপ্রান প্রচেষ্টার বদৌলতে। প্রান দিয়েছেন এদেশের লক্ষ লক্ষ স্বাধীনতাকামী সাহসীদের। বিশ্বের স্বাধীন দেশসমূহের সাথে বাংলাদেশকে নতুনভাবে সংযোজন করতে সক্ষম হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের এ ভূমিকা ছিল ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মভূমির প্রতি তার বাসিন্দাদের পবিত্র দায়িত্ব। ইসলামে বিজয় দিবস উদযাপনের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। এ দিনের অন্যতম করণীয় হলো—আট রাকাত নফল নামাজ পড়া। কারণ নবী সা. মক্কা বিজয়ের দিন শুকরিয়াস্বরূপ আট রাকাত নফল নামাজ আদায় করেছিলেন। (জাদুল মা’আদ)
বিজয়ীদের করণীয় সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়, তুমি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবে। তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা করো। আর তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল।’ (আল কুরআন : ১১০ : ১-৩)
এ আয়াত থেকে জানা যায়, বিজয় দিবসের দিন আমাদের যা করতে হবে তা হচ্ছে, আল্লাহর বড়ত্ব ও পবিত্রতার বর্ণনা করা। যুদ্ধ চলাকালীন আমাদের অজান্তে যেসব ভুলত্রুটি হয়েছে, তার জন্য আল্লাহর কাছে অবশ্যই ক্ষমা চাওয়া। মহান আল্লাহর ঘোষণা- ‘যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়, তখন দেখবে দলে দলে লোকেরা আল্লাহর মহান দ্বীনের পথে প্রবিষ্ট হবে। তখন তোমরা মহান আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করবে, তাঁর প্রশংসা ও গুণগান করবে এবং নিজেদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে।’
পরিশেষে বলা যায়, বিজয় অর্জনের চেয়েও বিজয়ের মর্যাদা রক্ষা করা জরুরী। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদয়-এটি এক ঐতিহাসিক অর্জন। সেই অর্জনকে টেকসই করতে প্রয়োজন দেশের আপামর জনসাধারণের সক্রিয় কার্যক্রম। সব নাগরিকের সম্মিলিত প্রয়াসেই জাতি হিসেবে আমরা আরও উন্নত, সমৃদ্ধ ও আত্মমর্যাদাশীল হিসেবে বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে চলতে পারব। সে জন্য আলস্য পরিহার করে, সব ভেদাভেদ ও সংকীর্ণতার চাদর ফেলে দিয়ে দেশ ও জাতি গঠনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নিজেদের ভুল-ত্রুটি সংশোধন করে, সম্ভাবনাময় এ দেশটির সার্বিক উন্নয়নে আবশ্যকীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে দেশ প্রেমিকদের প্রতি আহবান রইল।
অধ্যক্ষ, সৈয়দপুর সৈয়দীয়া শামছিয়া ফাজিল মাদরাসা।