শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৩ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম:
ধর্মীয় আবেগঘন পরিবেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সারাদেশে হাফিজিয়া মাদরাসা এবং হিফজখানার শিক্ষা কার্যক্রম আজ থেকে শুরু হচ্ছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ হাফিজিয়া মাদরাসাগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। এতে হিফজখানার ছাত্র-ছাত্রীরা পবিত্র কুরআনের ইয়াদ হারিয়ে ফেলছিল। হিফজখানা চালুর খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে গ্রামাঞ্চল থেকে ছাত্ররা বেডিংপত্র নিয়ে বুধবার থেকেই স্ব-স্ব মাদরাসায় ছুটে আসতে শুরু করেছে। করোনা মহামারী থেকে নাজাতের জন্য মাদরাসা চালুর দিন থেকেই প্রতিদিন বিশেষ খতমের ব্যবস্থা করা হবে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়গুলো সরেজমিনে দেখার জন্য বিভিন্ন হাফিজিয়া মাদরাসায় ছুটে যাচ্ছেন। ঢাকার একাধিক হাফিজিয়া মাদরাসার মুহতামিত এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সম্প্রতি দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে সকল হাফিজিয়া মাদরাসা এবং হিফজখানার শিক্ষা কার্যক্রমে নিরবিচ্ছিন্ন অধ্যাবসায়ের আবশ্যকতার কথা উল্লেখ করে এর কার্যক্রম চালু করার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা হয়। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে গত ৮ জুলাই ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব মো. আবুল কালাম আজাদের স্বাক্ষরিত এক সার্কুলারে ১২ জুলাই থেকে হাফিজিয়া মাদরাসা ও হিফজখানার শিক্ষা কার্যক্রম চালুর নির্দেশনা জারি করা হয়। এ সকল হাফিজিয়া মাদরাসা বা হিফজখানার কার্যক্রম পরিচালনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জারিকৃত স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে হিফজখানা খুলে দেয়ার নির্দেশনা জারি হওয়ায় বিভিন্ন মাদরাসার পরিচালনা কর্তৃপক্ষ জরুরি বৈঠক করে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার জন্য রেজ্যুলেশনে সদস্যদের স্বাক্ষর নেয়া হয়।
চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী বড় কাটারা মাদরাসার মুহতামিত মুফতি সাইফুল ইসলাম মাদানী ইনকিলাবকে বলেন, হিফজখানার আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার ঘোষণা শুনে দেশের বিভিন্ন জেলার কিছু শিক্ষার্থী মাদাসায় উপস্থিত হচ্ছে। সরকারি স্বাস্থ্যবিধি ও চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের পরামর্শ মোতাবেক মাদরাসায় বিভিন্ন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ একটি গুরুত্বপূর্ণ রেজ্যুলেশন গ্রহণ করেছে। শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার পূর্বেই সর্বাত্মক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মাদরাসায় পড়া লেখা থাকা খাওয়া নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেই শিক্ষা কার্যক্রম চলবে। এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের কাছ থেকে অঙ্গীকারনামা নেয়া হচ্ছে। অভিভাবকরা যদি নিরাপদ মনে করেন তাহলে সন্তানদের মাদরাসায় দিবেন। কেউ অসুস্থ হলে মাদরাসায় পাঠাবেন না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি সরেজমিনে দেখার জন্য বড় কাটারা মাদরাসা পরিদর্শন করেছেন। মুফতি সাইফুল ইসলাম মাদানী হিফজখানা খুলে দেয়ায় সরকারকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, হিফজখানা খুলে দেয়া না হলে অসৎসঙ্গের কারণে শিক্ষার্থীদের নৈতিক অবক্ষয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
উত্তর যাত্রাবাড়িস্থ তাহফিজুল কুরআন ওয়াসসুন্নাহ মাদরাসার মুহতামিম আন্তর্জাতিক খ্যাতীসম্পন্ন ক্বারী নাজমুল হাসান গতকাল শনিবার ইনকিলাবকে বলেন, হিফজখানা খুলে দেয়ায় বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছাত্ররা মাদরাসায় আসতে শুরু করেছে। মাদরাসার গেইটে আগত ছাত্রদের জ্বর আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। মাদরাসায় স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে ক্বারী নাজমুল হাসান বলেন, হিফজখানার ছাত্রদের মাদরাসা থেকে বের হতে দেয়া হয় না। সার্বক্ষণিক সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের তদারকিতেই শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হয়। গত বছর উল্লেখিত মাদরাসাটিতে ১১ ছাত্র হিফজখানায় অধ্যায়ন করছে। করোনার কারণে এবার ছাত্র সংখ্যা কত হতে পারে তা এখন বলা মুশকিল বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর হিফজখানা খুলে দেয়ায় ছাত্রদের অভিভাবক ও শিক্ষকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালক (সমন্বয় বিভাগ) মুহাম্মদ মহীউদ্দিন মজুমদারের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে হাফিজিয়া মাদরাসা চালু প্রসঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বিষয়টি তদারকি করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা শিক্ষক ও কর্মচারিসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করা হয়েছে।