বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১৪ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম:
পদ্মাসেতুর ৪১তম তথা শেষ স্প্যানটি বসেছে ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির ওপর। তাতেই সংযোগ পূর্ণ হলো মাওয়া-জাজিরার। মুন্সীগঞ্জ আর শরিয়তপুরের মধ্যে নৌপথে যে কয়েক ঘণ্টার দূরত্ব, তা মাত্র পাঁচ মিনিটে নামিয়ে আনার শেষ ধাপটি পূরণ হলো গতকাল বৃহস্পতিবার। এর মাধ্যমে সরকারের চ্যালেঞ্জিং একটি প্রতিশ্রæতির বাস্তবায়ন ঘটলো। স্বপ্ন হলো সত্যি।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণের জেলাগুলোর দূরত্ব যেন ছিল অলঙ্ঘনীয়। সেই দূরত্ব কাটিয়ে উঠতেই স্বপ্নের পদ্মাসেতুর যাত্রা শুরু। সেই যাত্রা শেষ করার পথে অন্যতম একটি ধাপ পূরণ হলো শেষ স্প্যানটি বসার মাধ্যমে। আগামী ২০২২ সালের জুন মাসে পদ্মা সেতু চালু হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ২ মিনিটে ৪১তম এই স্প্যানটি চূড়ান্তভাবে বসে যায় ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির ওপর। এর মাধ্যমে দৃশ্যমান হলো পূর্ণ ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার। এর আগে, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় এই শেষ স্প্যানটি বসানোর কাজ। গত বুধবারই (৯ ডিসেম্বর) স্প্যানটি মাওয়া প্রান্তের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ক্রেনে তুলে ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির কাছে এনে রাখা হয়েছিল। সকালে শুরু হয়ে দুপরের আগেই পদ্মার এপার-ওপারে ইস্পাত কংক্রিটের কাঠামোতে সংযোগ বাঁধলো। তীব্র খরস্রোতা এই নদীতে সেতু নির্মাণ সমসায়িক বিশ্বে বিরল ঘটনা। প্রায় ২০ থেকে ২২ বছরের প্রচেষ্টার সফলতা মিললো।
১৯৯৮ সালে যমুনা নদীতে যমুনা বহুমুখী সেতুর যাত্রা শুরু হলে পদ্মায় সেতু নির্মাণের দাবি প্রবল হয়। সেই দাবি থেকে কাজ শুরু হতে আরও এক দশক সময় লেগে যায়। এরপর দুর্নীতির অভিযোগ তোলে বিশ্বব্যাংক। একপর্যায়ে সে অভিযোগ প্রমাণিত না হলে সংশ্লিষ্ট মামলা খারিজ হয়। তবে বিশ্বব্যাংকের অর্থ সহযোগিতা শেষ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়।
বিশ্বব্যাংক সরে দাঁড়ানোয় পদ্মাসেতু নির্মাণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। কিন্তু বিশ্বকে বিস্মিত করে ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন, বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মাসেতু নির্মাণ করবে। নানা মহলের সমালোচনা অগ্রাহ্য করে শেষ পর্যন্ত নিজের ঘোষণায় অটল ছিলেন শেখ হাসিনা। শেষ পর্যন্ত দেশের মানুষের টাকাতেই গড়ে উঠলো দেশের ইতিহাসের বৃহত্তম এই অবকাঠামো।
২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মাসেতুর কাজ শেষ করার লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের। কিন্তু নদীর তলদেশে মাটির গঠনগত বৈচিত্রের কারণে কাজ পিছিয়ে যায়। সাড়ে ৪ বছর ধরে শুধু সেতুর খুঁটির কাজ চলে। আর ৩ বছর তিন মাস সময় লাগে সেই খুঁটিতে স্প্যান বসাতে। সেতুর ৪২টি খুঁটির ওপর ৪১টি স্প্যান ওঠার মাধ্যমে স্ট্রাকচারাল কাজ শেষ হলো।
পদ্মাসেতুর খুঁটি ৪২টি, স্প্যান ৪১টি। প্রতিটি স্প্যান ১৫০ মিটার লম্বা। শধু নদীতে সেতু ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দুই পাড়ের সঙ্গে সংযোগ মিলিয়ে সেতুটি সাড়ে ৯ কিলোমিটার। রোড ভায়াডাক্ট ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার। রেল ভায়াডাক্ট শূন্য দশমিক ৫৩২ কিলোমিটার। অর্থাৎ সংযোগ ও ভায়াডাক্টসহ সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ১০ দশমিক ৪৮২ কিলোমটার। প্রমত্ত এই নদীর বুকে সেতু গড়তে নদী শাসন করা হচ্ছে ১৪ কিলোমিটার। সংযোগ সড়ক উভয়দিকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার।
চীনের মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি সেতুটি নির্মাণ কাজ করছে। নদী শাসন কাজ করছে চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন। সংযোগ সড়ক নির্মাণ করেছে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের আবুল মোনেম লিমিটেড। সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। যার পুরোটাই দেশের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, আগামী ২০২২ সালের জুন মাসে পদ্মা সেতু চালু হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ আয়োজিত ‘কোভিড-১৯ মোকাবিলা এবং টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া প্রণোদনা প্যাকেজ’ বিষয়ে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আমি আট বছর সেতু বিভাগের সচিব ছিলাম। ফলে আমি এখনো এটিকে দেখাশোনা করে থাকি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।