শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১৭ অপরাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার:
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক পরলেও স্থানীয় প্রশাসন নীরব। ব্যানারে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ছবি, দেয়ালে পোস্টার, পোস্টারে প্রিন্টিং নাম না থাকা, প্রতিশ্রুতি প্রদান ও নগদ অর্থ বিতরণ, নির্ধারিত সময়ের আগে-পরে মাইকিংসহ প্রকাশ্যে বিভিন্নভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে উপজেলার অন্যতম করিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর ক্ষেত্রে।
সরেজমিন দেখা যায়, সরকার দলীয় এ প্রার্থীর পোস্টারে প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠানের নাম নেই, স্থানীয় সংসদ সদস্যের ছবি সম্বলিত তার পক্ষে ব্যানার ছাপানো, প্রার্থী নিজে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নগদ অর্থ প্রদান, নির্বাচনী প্রচারণামূলক মাইক নির্ধারিত সময়ের আগে ও পরে চলাসহ নানা গুরুতর অনিয়ম পাওয়া গেছে। এছাড়াও অন্যান্য ইউনিয়নে দেয়ালে পোস্টার লাগানোসহ আচরণবিধি লঙ্ঘনের নানা অনিয়ম দেখা গেছে। তবে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিসে লিখিত কোন অভিযোগ না থাকায় এ পর্যন্ত কোন প্রার্থীর আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছেন না বলে জানান দিরাই উপজেলা নির্বাচন অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোঃ ফয়েজুর রহমান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ দেলোয়ার হোসেন, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ শরিফুল আলম।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা-এর ধারা ৪-এর কোন প্রতিষ্ঠানে চাঁদা, অনুদান ইত্যাদি নিষিদ্ধ অংশে বলা হয়েছে, ‘কোন প্রার্থী বা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তাহার পক্ষে রাজনৈতিক দল, অন্য কোন ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান নির্বাচন পূর্ব সময়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন এলাকায় অবস্থিত কোন প্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্যে বা গোপনে কোন প্রকার চাঁদা বা অনুদান প্রদান করিতে বা প্রদানের অঙ্গিকার করিতে পারিবেন না’।
একই বিধিমালার ধারা ৮-এর ‘পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল ব্যবহার সংক্রান্ত বাধা-নিষেধ’-এর উপধারা ৫-এর দ্বিতীয় প্যারায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে, প্রতিদ্বন্দ্বী কোন রাজনৈতিক দলের মনোনীত হলে সেই ক্ষেত্রে তিনি কেবল তাহার দলের বর্তমান দলীয় প্রধানের ছবি পোস্টারে বা লিফলেটে ছাপাইতে পারিবেন’।
একই ধারার উপধারা ৭-এ বলা হয়েছে, কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তাহার পক্ষে অন্য কোন ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা ও মুদ্রণের তারিখবিহীন কোন পোস্টার লাগাইতে পারিবেন না।
একই ধারার উপধারা ৮-এ বলা হয়েছে, ‘কোন প্রার্থী বা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তাহার পক্ষে অন্য কোন ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান বা রাজনৈতিক দল নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত দেওয়াল বা যানবাহনে পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল লাগাইতে পারিবেন না। তবে শর্ত থাকে যে, ভোট কেন্দ্র ব্যতীত নির্বাচনী এলাকার যে কোন স্থানে পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল ঝুলাইতে বা টাঙ্গাইতে পারিবেন’।
একই বিধিমালার ধারা ২১-এর ‘মাইক্রোফোন ব্যবহার সংক্রান্ত বাধা-নিষেধ’-এর উপধারা ২-এ বলা হয়েছে, ‘কোন নির্বাচনী এলাকায় মাইক বা শব্দের মাত্রা বর্ধনকারী অন্যবিধ যন্ত্রের ব্যবহার দুপুর ২ ঘটিকার পূর্বে এবং রাত ৮ ঘটিকার পরে করা যাইবে না’।
ধারা ৩১ ‘বিধিমালার বিধান লঙ্ঘন শাস্তিযোগ্য অপরাধ’-এর উপধারা ১-এ বলা হয়েছে, কোন প্রার্থী বা তাহার পক্ষে অন্য কোন ব্যক্তি নির্বাচন-পূর্ব সময়ে এই বিধিমালার কোন বিধান লঙ্ঘন করিলে অনধিক ৬ (ছয়) মাসের কারাদণ্ড অথবা অনধিক ১০ (দশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডণীয় হইবেন।
উপধারা ২-এ বলা হয়েছে, কোন রাজনৈতিক দল অথবা কোন প্রার্থীর পক্ষে কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান নির্বাচন-পূর্ব সময়ে এই বিধিমালার কোন বিধান লঙ্ঘন করিলে অনধিক ১০ (দশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডণীয় হইবেন।
দিরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদুর রহমান মামুন জানান, এখন পর্যন্ত আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোন অভিযোগ লিখিতভাবে কেউ দেয়নি। আমরা বিভিন্নভাবে এসব দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের কাছে লিখিত আসলে অবশ্যই ব্যবস্থ গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।