বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৫ অপরাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার/সাইফুর রহমান:
জন্মের সময় স্বাভাবিকই জন্ম হয়েছে তার। কিন্তু কিশোর অবস্থায় হঠাৎ করেই মাথা ব্যথা দেখা দিলে তার জীবনটাই তছনছ হয়ে যায়। এখন অন্ধ দু’চোখ নিয়েই বাবার সাথে পরিবারের কাজে সহযোগিতা করছেন মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস (৩৫)। কারো উপর বোঝা না হয়ে, কারো দয়ার পাত্র না হয়ে নিজের অদম্য আত্মবিশ্বাস আর আইডিয়ার ফলেই তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। বলছিলাম সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের পুরাতন কর্ণগাঁও গ্রামের বিরেন্দ্র বিশ্বাসের পুত্র মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসের কথা।
সরেজমিন গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নিজ ঘরের বারান্দায় বসে পিতার সাথে বাঁশের বেত দিয়ে উড়া (মাটি কাটা ও অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত বস্তু) বানাচ্ছে। চোখে দেখতে না পারলেও হাতের আঙ্গুলগুলো চলছে দ্রুত গতিতে। দৃঢ় মনোবল আর আত্মশক্তির বলেই কাজ করছে মৃত্যুঞ্জয়। প্রায় ২০ বছর যাবত নিজের আইডিয়াতেই এই কাজ করে যাচ্ছে সে।
মৃত্যুঞ্জয়ের পিতা বিরেন্দ্র বিশ্বাস জানান, ১২/১৪ বছর বয়সেই হঠাৎ মাথা ব্যথা শুরু হলে প্রথমে সিলেট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে ডাক্তার দেখান। কিন্তু কোন ফল না পেয়ে চোখের সমস্যা দেখা দিলে সুনামগঞ্জ বার্ডে ভর্তি করা হয়। ইতিমধ্যে মৃত্যুঞ্জয়ের বাম চোখ নষ্ট হয়ে যায়। বার্ডের চিকিৎসায়ও কোন পরিবর্তন না হলে পুনরায় তাকে নিয়ে সিলেটের চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আরিফ উদ্দিনকে দেখানো হলে তিনি তাকে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। সেখানে ভর্তি করে মৃত্যুঞ্জয়ের চোখের অপারেশন করানো হয়। ঢাকা থেকে আসার পর তার ডান চোখও নষ্ট হয়ে যায়। প্রচুর অর্থকড়ি খরচ করে নিঃস্ব হয়ে এখন উপরওয়ালার হাতে সব ছেড়ে দিয়েছি। টাকার অভাবে ভালো চিকিৎসা করাতে পারিনি বলে আমার ছেলেটা আজ অন্ধ হয়ে গেছে। তবে চিকিৎসকরা বলেছেন, ভালো চিকিৎসা পেলে হয়ত আবারও দুনিয়ার আলোটা সে দেখতে পাবে বলেও জানান মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসের বাবা বিরেন্দ্র বিশ্বাস।
জানা যায়, পঞ্চম শ্রেণি পাস মৃত্যুঞ্জয় ২ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। গত এক বছর আগে পার্শ্ববর্তী রাজানগর ইউনিয়নের কেজাউড়া গ্রামে সে বিয়ে করেছে। তার ছোট ভাই দিরাই বাজারের একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করছে। ৫ সদস্যের সংসার চলছে টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে। অন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তাকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়া হলেও এর বাইরে সে আর কোন সরকারি বা বেসরকারি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না। এমনকি করোনাকালীন কোন সহযোগিতাও তাকে দেয়া হয়নি বলে জানায়।
মৃত্যুঞ্জয় জানায়, হেমন্তে উড়া, আগুল, টুকরি আর বর্ষায় মাছ ধরার ছাই বানিয়ে সংসারের সহযোগিতা করছে। কারো কোন সহযোগিতা ছাড়া বাড়ির আশপাশে সে ঘুরাঘেরা করতে পারে। তবে বাইরে গেলে অন্যের সহযোগিতা লাগে। সে আরও জানায়, তাদের বাড়িতে উৎপাদিত কুটির শিল্পের মালামাল পাইকাররা এসে বাড়ি থেকেই নিয়ে যায়। যদি এক্ষেত্রে তাদের লাভ কম হয়। প্রতি পিছ উড়া/আগুল ৩০/৪০ টাকা বিক্রি করেন তারা। মৃত্যুঞ্জয় তার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন ও পরিবারের সহযোগিতার জন্য দেশের সরকার, দেশি-বিদেশি সাহায্য সংস্থা, বাংলাদেশ অন্ধ কল্যাণ সমিতিসহ বিত্তবানদের সুদৃষ্টি কামনা করছে।