বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১২ পূর্বাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার:
২০১৭ সালের চৈত্র মাসে অতিবৃষ্টির ফলে হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে যায় সুনামগঞ্জ জেলার সকল হাওরের বোরো ধান। তৎকালীন পিআইসি কমিটির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সূত্র ধরেই গঠিত হয় হাওর বাঁচাও আন্দোলন। মূলত কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের পিআইসির সঠিক কাজের তদারকিসহ জনস্বার্থে গড়ে ওঠা এ সংগঠন জেলাব্যাপি ছড়িয়ে পড়ে। গঠন করা হয় জেলা ও উপজেলা কমিটি। এরই ধারাবাহিকতায় হাওরের কৃষকদের স্বার্থে গঠন করা হয় হাওর বাঁচাও আন্দোলনের দিরাই উপজেলা কমিটি। কিন্তু এ কমিটিও কৃষকদের স্বার্থে কতটুকু সক্রিয়, তা বর্তমান কমিটির অবস্থা পর্যালোচনা করলেই পরিস্থিতি অনুধাবন করা যায়।
২০২১-২০২২ সালের জন্য গঠিত কমিটি যে হ-য-ব-র-ল অবস্থায় চলছে, তা কমিটির কয়েকজন দায়িত্বশীলদের সাথে আলাপচারিতায় চলে এসেছে। বর্তমান কমিটিতে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে মোট ২৮ জন রয়েছেন। তবে অধিকাংশই জানেন না তাদের নাম কমিটিতে রয়েছে। আবার কমিটির সর্বশেষ বৈঠক কবে হয়েছে, একেকজন জানালেন একেক তথ্য! কারো মতে, দেড় মাস আগে, কেউ বলেছেন ৩/৪ মাস, ৫/৬ মাস আগে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কমিটির সর্বশেষ বৈঠক কতদিন আগে হয়েছে?
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের দিরাই উপজেলা কমিটির সভাপতি বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল কাইয়ুম জানান, সর্বশেষ ৫/৬ মাস আগে কমিটির বৈঠক হয়েছিল হাইস্কুল রোডস্থ আমাদের বিওসিতে। হাওর রক্ষা বাঁধের ব্যাপারে কোন তথ্য নেই বলেও তিনি জানান।
কমিটির সাধারণ সম্পাদক সামছুল ইসলাম সরদার খেজুর জানান, সর্বশেষ বৈঠক হয়েছে প্রায় দেড় মাস আগে। তিনি অসুস্থ থাকায় এ বছর মাঠ পর্যায়ে তেমন যাওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।
উপজেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, ধল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক দীন ইসলাম জানান, আমি জানি না, অথচ আমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রাখা হয়েছে। আমি এখন পর্যন্ত কোন কাগজ বা কোন বৈঠকের দাওয়াত পাইনি। তারপরেও আমি নিয়মিত হাওর রক্ষা বাঁধ পরিদর্শন করে যাচ্ছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেকজন সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, আমাকে বলা হয়েছিল কমিটিতে রাখলে জানাবেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন কাগজ পাইনি। তারপরও মাঝে-মধ্যে ডাকলে যাই। তিনি জানান, সর্বশেষ বৈঠক হয়েছে ৫/৬ মাস আগে।
বাঁধ বিষয়ক সম্পাদক মোঃ শাহীনূর আলম জানান, সাধারণ সম্পাদক ডাকলে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচিতে যাই। তিনি অসুস্থ হওয়ায় এ বছর খুব বেশি বাঁধ পরিদর্শন করা হয়নি। তাছাড়া তার ব্যক্তিগত সমস্যার কারণেও হাওর রক্ষা বাঁধ পরিদর্শন করা হয়নি বলেও তিনি জানান।
কমিটির সদস্য কাজী নূরুল আজিজ জানান, কমিটির বিভিন্ন প্রোগ্রামে আমি সহযোগিতা করে থাকি। সুযোগ পেলে বাঁধ পরিদর্শন করে স্যোসাল মিডিয়ায় প্রচার করি। কমিটির কাজের গতি আরও ব্যাপক করা প্রয়োজন বলেও তিনি অভিমত দেন।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন জানান, অবশ্যই জেলা কমিটি উপজেলা কমিটিগুলোকে অনুমোদন দেয়। সাংগঠনিক কার্যক্রমও জেলা কমিটিতে পাঠিয়ে থাকে। এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, আমি যেহেতু কেন্দ্রীয় কমিটিতে আছি, সেহেতু সবগুলো উপজেলার কার্যক্রমের তথ্যাদি আমি আর দেখি না। এগুলো জেলা কমিটির দায়িত্বে আছে।