বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৬ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন এবার গড়াল মাঠের লড়াইয়ে। প্রতীক বরাদ্দ শেষে প্রার্থীরা ১৮ দিন প্রচারযুদ্ধে নামছেন। তবে প্রচারের ক্ষেত্রে নানান বাধ্যবাধ্যকতা ও বিধিনিষেধ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন। প্রচারে প্রার্থীরা কি করতে পারবেন আর কি করতে পারবেন না- তা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া অনলাইনে নির্বাচনী আচরণবিধি নিয়ে বিভিন্নভাবে প্রচারণাও চালাচ্ছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) সিলেটের প্রার্থীরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রতীক বরাদ্দ নিচ্ছেন; এরপরই নামবেন আনুষ্ঠানিক প্রচারে। এই প্রচারযুদ্ধে চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। এসময় দেশ মেতে উঠবে নির্বাচনী উল্লাসে। এর দুদিন পর ৭ জানুয়ারি সকাল ৮ থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ।
নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম গণমাধ্যমকে জানান, এবার দলীয় ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মোট প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী আছেন ১ হাজার ৮৯৬ জন। তাদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন প্রায় সাড়ে তিনশ জন, বাকিরা দলীয় প্রার্থী। নিবন্ধিত ৪৪ দলের মধ্যে ভোটে আছে ২৮টি। অন্যদিকে বিএনপিসহ ১৫টি দল ভোট বর্জন করেছে। প্রতীক পাওয়ার পর তারা প্রচার শুরু করতে পারবেন। এখন একটাই কথা, প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে চলতে হবে।’
এদিকে সিলেটে সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা থেকে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দিচ্ছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা শেখ রাসেল হাসান। শুরুতেই সিলেট-১ আসনে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসময় প্রার্থীদেরকে আচরণবিধি পড়ে শুনানো হচ্ছে। নির্বাচনী মাঠ শান্ত রাখতে এসব নিয়ে প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এভাবে ক্রমান্বয়ে সবগুলো আসনেই প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে; তা চলবে আজ বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
আচরণবিধি: যা মানতে হবে, ভঙ্গ হলে যে শাস্তি
ভোটের প্রচারে প্রার্থীদের কী কী করার সুযোগ আছে, আর কী করা যাবে না- এ নিয়ে একগুচ্ছ বিধিনিষেধ রয়েছে নির্বাচনী আচরণবিধিতে।
যেমন নির্বাচনি প্রতীক ও দলীয় প্রধানের ছবি নিয়ে প্রার্থীর ছবি সংবলিত পোস্টার হবে সাদাকালো এবং এবং নির্দিষ্ট মাপের। আর সেসব পোস্টার ঝুলবে কেবল দড়িতে। কোনো দেয়াল, যানবাহন, ভবন বা সড়ক বিভাজককে প্রচার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। দলীয় প্রার্থীর পোস্টারে দলীয় প্রতীক, প্রার্থী ও দলীয় প্রধানের ছবি ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। কোনোভাবে জোটপ্রধানের ছবি ব্যবহার করা যাবে না। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নিজের ছবি ও প্রতীক ব্যবহার করতে পারবেন। কোনো দলীয় প্রধানের ছবি ব্যবহার করতে পারবেন না স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। আলোকসজ্জা, গেইট বা তোরণ নির্মাণ নিষিদ্ধ। মাইংকিংয়ের জন্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে সময়, প্যাণ্ডেল তৈরিতে মানতে হবে মাপ।
সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে নির্বাচনি কর্মসূচি মিলিয়ে না ফেলতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প ঘোষণা, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনা বা ফলক উন্মোচনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আচরণবিধি না মানলে প্রার্থী বা তার সমর্থকের সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রয়েছে। সেই সঙ্গে প্রার্থিতা বাতিলসহ নিবন্ধিত দলকে পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার করারও বিধান রয়েছে।
আচরণবিধি
* প্রার্থীর নির্বাচনি পোস্টার ঝুলিয়ে রাখতে হবে দড়িতে। পোস্টারে কেবল নির্বাচনি প্রতীক, প্রার্থীর ছবি এবং দলীয় প্রধানের ছবি ছাপানো যাবে। পোস্টার হবে নির্দিষ্ট মাপের এবং সাদা কালো; রঙিন পোস্টার নিষিদ্ধ।
* নির্বাচনি প্রচারে কোনো গেইট বা তোরণ নির্মাণ করা যাবে না। চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা যাবে না কোনোভাবেই।
* প্রার্থী কিংবা সমর্থকরা ভোটের সমাবেশের জন্য ৪০০ বর্গফুটের বেশি আয়তনের প্যান্ডেল তৈরি করতে পারবেন না।
* প্রচারের সময় প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনে প্রতি ওয়ার্ডে সর্বোচ্চ একটি নির্বাচনি ক্যাম্প স্থাপন করা যাবে।
* প্রচারের সময় বৈদ্যুতিক আলোকসজ্জা নিষিদ্ধ। ভোটারদের কোনো ধরনের খাবার বা উপঢৌকন দেওয়া যাবে না।
* মাইকে ভোটের প্রচার চালানো যাবে কেবল দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।তফসিল ঘোষণার পর থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রকল্প অনুমোদন, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অথবা উদ্বোধন এবং অনুদান বা অর্থ বরাদ্দ দেওয়া যাবে না।
* দেয়ালে লিখে কোনো ধরনের প্রচার চালানো যাবে না। কোনো যানবাহন, দালান, সেতু, সড়ক দ্বীপ ও ডিভাইডারেও ভোটের প্রচার নিষিদ্ধ।
* নির্বাচনি প্রচারের ক্ষেত্রে প্রতীক হিসাবে জীবন্ত প্রাণী ব্যবহার করা যাবে না।
* মসজিদ, মন্দির, গির্জা বা অন্য কোনো উপাসনালয়ে কোনো প্রকার নির্বাচনি প্রচার চালানো যাবে না।
* প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী, হুইপ, বিরোধী দলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা ও তাদের সমান পদমর্যাদার কেউ, সংসদ সদস্য এবং মেয়ররা ভোটের প্রচারে প্রোটকল পাবেন না। কোনো উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধনও তারা করতে পারবেন না, যা প্রচার বলে গণ্য হতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে নির্বাচনি কর্মসূচি মেশানো যাবে না। প্রচারে সরকারি যানবাহন ও অন্যান্য সুবিধা ব্যবহার করা যাবে না। প্রচারে সরকারি চাকরিজীবীদের ব্যবহার করা যাবে না।
প্রার্থী বা এজেন্ট না হলে ভোট দেওয়া ছাড়া ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকব এবং ভোট দেওয়া ছাড়া নির্বাচনের আগে এলাকায় সফর ও প্রচারও নিষিদ্ধ।
* প্রচারের সময় উসকানিমূলক, মানহানিকর, ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেয় এমন বক্তব্য দিলেও তা হবে আচরণবিধির লঙ্ঘন।