রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৫৫ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আপনারা সবাই মিলে দলে-দলে ভোট কেন্দ্রে হাজির হয়ে সর্বশক্তি দিয়ে নিজেদের ভোটের মর্যাদা রক্ষা করবেন। আজ বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, যারা আপনাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, আপনাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অপকৌশলে সরিয়ে দিয়েছে তাদের ভোট চাওয়ার কোনো অধিকার নেই। জনতার ঐক্যবদ্ধ শক্তি যে কোনো স্বৈরাচারী শাসকের অসৎ উদ্দেশ্যেকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।’ দেশবাসীকে উদ্দেশ্যে করে বেগম খালেদা জিয়া আরো বলেন, ‘পৌর নির্বাচনে আমাদের মনোনীত মেয়র প্রার্থীদেরকে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। এ বিজয় আপনাদের অধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে ভূমিকা রাখবেন।’
পৌরসভা নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে জানিয়ে দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমরা শেষপর্যন্ত নির্বাচনী যুদ্ধে অবিচল থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শাসক দল নির্বাচনের ওপর অশুভ প্রভাব বিস্তারের যে পরিকল্পনা করেছে তা শান্তিপুর্ণ পন্থায় ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর জন্য আমি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের প্রচারণা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ নির্বাচন খুবই তড়িঘড়ি করে ঘোষণা করা হয়েছে। রেওয়াজ থাকা সত্ত্বেও সময় স্বল্পতার অজুহাতে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনার প্রয়োজনবোধ করেনি। অথচ এবারের মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে দলীয় ভিত্তিতে।’
নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের জন্য আবারও দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবের কারণে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। ফলে সুষ্ঠু ও শান্তিপুর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তাই আমি নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের জন্য আবারও দাবি জানাচ্ছি।’
নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘নিজ উদ্যোগে নির্বাচন সুষ্ঠু করার সাংবিধানিক ক্ষমতা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। তারা যদি একটি স্বাধীন জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তাহলে পৌর নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপুর্ণ হতে পারে। আর তবেই নির্বাচন কমিশন তাদের হারানো ভাবমুর্তি ফিরে পেতে পারে।’
পেশিশক্তি দিয়ে ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনের ফলাফল ছিনতাই করতে চায় অভিযোগ করে ৩ বারের সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা এ নির্বাচনে সকল রকম অনিয়মের মাধ্যমে ফলাফল পাল্টে দিয়ে দেশবাসী এবং বিশ্বকে দেখাতে চায় যে, তাদেরও জনপ্রিয়তা আছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি চিকিৎসার জন্য বিদেশে গেলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছিলো আমি দেশে দেশে ফিরবো না। আমি বরাবরই বলেছি দেশের বাইরে আমার কোনো ঠিকানা নেই। বাংলাদেশই আমার একমাত্র ঠিকানা। যতদিন দেশের বাইরে ছিলাম প্রতি মুহুর্তেই ভাবনায় ছিল দেশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিদেশে অবস্থানকালে দেশে উদ্বেগজনক কিছু ঘটনা ঘটেছে এবং এখনও বিক্ষিপ্তভাবে ঘটে চলছে, বিদেশীরা আক্রান্ত হচ্ছে, ভিন্নমতের মানুষের উপর সশস্ত্র হামলা চলছে। ধর্মীয় সমাবেশ, মসজিদ ও অন্যান্য উপাসনালয় আক্রান্ত হচ্ছে। নিরাপত্তা বেস্টনির ভেতরেও ঘটছে বোমা হামলার ঘটনা। এসবের পেছনে কারা জড়িত তা নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে পরস্পর নানামুখী বক্তব্য আসছে। এসব ঘটনায় দেশবাসীর সঙ্গে আমরাও উদ্বিগ্ন।’ সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্রি. জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।
২০ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য আব্দুল হালিম, জাগপা সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) সভাপতি এএইচএম কামরুজ্জামান খান, এনডিপির চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা সৈয়দ মুজিবুর রহমান পেশোয়ারি, বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাঈদ আহমেদ প্রমুখ।