শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৭ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর ছোবলে লন্ডভন্ড হওয়া দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ২৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এই প্রাণহানির সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সীমানা অতিক্রম করায় রোয়ানু’র শঙ্কা থেকে মুক্ত হয়েছে উপকূলবাসী। তবে, নিম্নচাপের কারণে ঝড়ো বাতাস বইবে উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। ‘রোয়ানু’র আঘাতে চট্টগ্রামে ১২, ভোলায় ৪, ফেনীতে ১, কক্সবাজারে ৪, লক্ষ্মীপুরে ১, পটুয়াখালীতে ১ ও নোয়াখালীতে ৩ জনের প্রাণহানি হয়েছে। কয়েক শত ব্যাক্তির আহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। একদিন স্থায়ী হওয়া ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন স্থানে বেড়ীবাঁধ ভেঙে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপকূলীয় এলাকার অনেক ঘর-বাড়ি। গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জনগণ এখনো নিরাপদ আশ্রয় ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে রয়েছে। তাদের নিজ বাড়িতে ফিরতে আগামী দিনের দুপুর নাগাদ অপেক্ষা করতে হবে। সারাদেশ থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ।
চট্টগ্রাম : ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র আঘাতে এ জেলায় ১২ জন নিহত হয়েছেন। জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের জঞ্জল সলিমপুরে গাছচাপায় শনিবার ভোররাতে মা কাজল বেগম (৫০) ও তার ছেলে বাবু (১০) নিহত হয়েছেন। টিনের চাল উড়ে এক কিশোরের মৃত্যু হয়। দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর ষোলশহরের দুই নম্বর গেট এলাকায় ঝড়ে টিনের চাল উড়ে রাজিব (১৩) নামে এক কিশোর নিহত হয়েছে। নগরীর পাঁচলাইশ থানা এলাকায় রাকিব (১১) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে নগরীর পাঁচলাইশ থানার চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সের পেছনে এ ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন জানান, ঝড়ের প্রভাবে বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকায় সাতজনের মৃত্যু হয়েছে।
ভোলা : জেলায় ঝড়ে পড়ে নিহত হয়েছেন ৪জন। বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় ৫ শতাধিক ঘড়-বাড়ি। তজুমদ্দিন উপজেলার শশীগঞ্জ গ্রামের মফিজের ছেলে আকরাম (১২), নয়নের স্ত্রী রেখা বেগম (২৫), লালমোহন উপজেলার বাংলাবাজার এলাকার ইউনুস (৫৫)। আহত হয়েছেন একাধিক ব্যাক্তি। আহতদের উদ্ধার করে তজুমদ্দিন ও ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঝড়ে ভোলার দৌলতখানে রানু বিবি (৫০) নামে আরো এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। বিকেল ৩টার দিকে দমকা হাওয়ায় ঘরচাপা পড়ে তিনি মারা যান বলে জানা গেছে। মৃত রানু বিবি উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়নের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী। এছাড়া ঝড়ে উপজেলার বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাট বিধ্বস্ত হয়েছে।
পটুয়াখালী : জেলার দশমিনায় ঘূর্ণিঝড়ে শনিবার সকালে নয়া বিবি (৫২) নামে এক গৃহবধূ ঘুমন্ত অবস্থায় ঘরচাপা পড়ে নিহত হয়েছেন। তিনি উপজেলার উত্তর লক্ষ্মমীপুর গ্রামের সুন্দর আলীর স্ত্রী। জেলার রাঙ্গাবালী ও গলাচিপা উপজেলায় বেশকিছু কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার কবর পাওয়া গিয়েছে।
কক্সবাজার: এ জেলায় ৪জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন, উপজেলার কৈয়ারবিল গ্রামের ফজলুল হক (৫৫), একই ইউনিয়নের ধুরং গ্রামের আবদুর রহিমের ছেলে ইকবাল (২৫) এবং তাবলেরচর গ্রামের বাসিন্দা আলী আকবর ডেইল সৈকত। এদিকে বাড়ির দেয়াল চাপায় নিহত হয়েছেন শফিউল আলম (৩৬)। কুতুবদিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অংসা থোয়াই বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, নিহতদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
নোয়াখালী: হাতিয়া উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারের পানিতে ডুবে নারী-শিশুসহ ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরা হলেন জাহাজমারা ইউনিয়নের মাহফুজা বেগম (৫১) এবং চানন্দী ইউনিয়নে মিনারা বেগম (৪০) ও রুমা বেগম (৯)। হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিছুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
লক্ষীপুর : ঝড়ের তাণ্ডবে গাছচাপা পড়ে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম আনারুল উল্লাহ (৫৫)। জেলার উত্তর তেওয়ারিগঞ্জে এ দুর্ঘটনা ঘটে। লক্ষ্মমীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাজ্জাদুল হাসান এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ফেনী : ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু দুপুরে ফেনীর সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানলে সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়ার জেলে পাড়া এলাকায় জোয়ারের পানিতে এক রাখালের মৃত্যু হয়েছে। নিহত নুর আলম (৩৪) এর বাড়ি চরচান্দিয়ার জেলে পাড়া এলাকায় বলে জানিয়েছেন সোনাগাজীর ইউএনও শরীফা হক। এছাড়া রোয়ানুর প্রভাবে সোনাগাজীর তিনটি ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রামের ঘরবাড়ি জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। সূত্র : শীর্ষ নিউজ