শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৩ পূর্বাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার: ‘তথ্য পাওয়া-আমার আইনি অধিকার, সেবা পাওয়া-আমার নাগরিক অধিকার, দুর্নীতিমুক্ত দেশ-আমার সাংবিধানিক অধিকার’ শ্লোগান নিয়ে ‘জধরংব ণড়ঁৎ ঠড়রপব বা এবার আওয়াজ তুলুন’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আগামি ৯ নভেম্বর বুধবার সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা গণমিলনায়তন হলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আয়োজিত উপজেলার সরকারি ১১টি দফতরের সেবা পেতে হয়রানি বা দুর্নীতির শিকার হওয়ার ওপর গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টায় শুরু হওয়া এ গণশুনানি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ, পরিচালক শিরীন পারভীন, উপ-পরিচালক রেভা হালদার ও উপজেলার ১১টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলা ভূমি অফিস, উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিস, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস, উপজেলা সমাজসেবা অফিস, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, উপজেলা সেটেলমনন্ট অফিস, দিরাই পল্লীবিদ্যুৎ অফিস, উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস, উপজেলা সমবায় অফিস, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সমূহের সেবা পেতে হয়রানি ও দুর্নীতির বিষয়ে প্রকাশ্যে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
সূত্র জানায়, সরকার জনগণকে সেবা প্রদানে আন্তরিক হলেও সরকারি বিভিন্ন দফতরের কতিপয় দুর্নীতিবাজ লোকেরা সাধারণ মানুষকে সেবা দিতে হয়রানি করছে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আলোকে সেবা দিচ্ছেনা। এসব কারণেই জনস্বার্থে এই গণশুনানির আয়োজন বলেও সূত্রটি এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন। তারা আরো জানান, সত্যিকারভাবে যারা হয়রানির শিকার, তাদের কাছ থেকে সঠিক তথ্য উদ্ধার করতেই গত ৩০ অক্টোবর থেকে দুদকের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা দিরাইয়ে অবস্থান করেছন। তারা সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে গণশুনানির জন্য মাইকিং, পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ করছেন। এছাড়া পৌরসদরের বেশ কিছু জায়গায় অভিযোগ বক্স স্থাপন করেছেন। এসব অভিযোগ বক্সে হয়রানি বা দুর্নীতির শিকার লোকজন তাদের অভিযোগ জমা দিচ্ছেন।
এদিকে ৯ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের উদ্যোগে আয়োজিত গণশুনানির কারণে উপজেলার ১১টি সরকারি দফতরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের মধ্যে এক ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দেশব্যাপি বিভিন্ন স্থানে দুদকের কঠোর দমন নীতির কারণে অনেকের জেল-জরিমানা হওয়ায় তারাও নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। কার কাঁধে দুদকের খড়গ নেমে আসে, সেই নিয়ে তারা এখন সাধুসাজার চেষ্টা করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানান, যদি দুর্নীতি দমন কমিশনের নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর নীতিতে থাকেন, তবে দুর্নীতি ও হয়রানির কারণে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারি ফেঁসে যাবেন। আর যদি তা হয়, তবে দুদকের গ্রহণযোগ্যতা সাধারণ মানুষের কাছে বৃদ্ধি পাবে এবং দুর্নীতিবাজরা তাদরে আস্ফালন বন্ধ করবে।
একটি সূত্র জানায়, উল্লেখিত ১১টি সরকারি দফতরের মধ্যে উপজেলা ভূমি অফিস, উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিস, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস, উপজেলা সমাজসেবা অফিস, উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিস, উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস, উপজেলা সমবায় অফিস বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত। তাছাড়া উল্লেখিত ১১টি দফতরের সাথে ব্যাংক ও পিডিবি যুক্ত না হওয়াতে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দিরাইয়ে অবস্থানরত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারি পরিচালক মনজুর আলম চৌধুরী এ প্রতিবেদককে জানান, সরকার জনগণকে সেবা দিতে আন্তরিক হলেও অনেকে নানাভাবে হয়রানি শিকার হচ্ছে এবং এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারিরা তা প্রতিনিয়তই করে যাচ্ছেন। আমাদের কাজটি হবে, যারা হয়রানি করছে বা শিকার হচ্ছেন, তার কারণ অনুসন্ধান করা এবং সঠিক সেবা প্রদানের জন্য সহযোগিতা করা। তিনি আরো বলেন, যারা অভিযোগ করবে, ভবিষ্যতে যাতে তারা আর ভোগান্তির শিকার না হয়, সে ব্যবস্থা করা।