শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার, সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জ জেলার হাওরা-বাওড় অঞ্চলের বিভিন্ন দলের নেতারা নিজেদের রাজনৈতিক মঞ্চে ভিন্ন বক্তব্য দিলেও হাওরের ফসল রক্ষায় সকলেই একই সুরে কথা বললেন। সকলেই বললেন, ‘এই লুটপাট ঠেকাতে হবে, কৃষকদের সক্রিয় হতে হবে, বাঁধের কাজ আদায় করতে হবে।’ কেউ কেউ বললেন, ‘বাঁধ না হলে ফসল ডুববে, এটা জেনেও অপকর্ম হচ্ছে।’
সুনামগঞ্জের ৫টি সংসদীয় এলাকার মধ্যে সুনামগঞ্জ-১ (জামালগঞ্জ-ধর্মপাশা ও তাহিরপুর) এবং সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে হাওর-বাওড় বেশি। এক ফসলি বোরো ধানের উপরই নির্ভরশীল এই দুই নির্বাচনী এলাকার প্রায় ৮ লক্ষ মানুষ। বুধবার এই দুই নির্বাচনী এলাকার রাজনীতিবিদদের সঙ্গে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নিয়ে কথা বলার সময় সকলেই ফসল রক্ষা বাঁধ নিয়ে অভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন।
দিরাই-শাল্লা আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ড. জয়া সেনগুপ্তা বলেন, ‘হাওর রক্ষা বাঁধ যেভাবেই হোক সময়মত করতে হবে, ফসল রক্ষা করতে হবে। হাওরাঞ্চলের মানুষ যাতে কষ্ট না পায় এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকেই দায়িত্বশীল থাকতে হবে।’
এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নাছির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘হাওরের বাঁধের কাজ এখন শেষ না হলে ভারি বৃষ্টিপাত বা পাহাড়ী ঢল হলে প্রথম ধাক্কায়ই হাওর তলিয়ে যাবে। যারা লুটপাট করছে, তারাও এই বিষয়টি জানে। তাদেরও এমন অভিজ্ঞতা আছে। তারা বুঝে শুনেই এমন অপকর্ম করছে।’
সুনামগঞ্জ-১ (জামালগঞ্জ-ধর্মপাশা-তাহিরপুর) আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, ‘হাওরের বাঁধের কাজ নিয়ে কৃষকদের দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন ছিলনা। যারা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চায়, যারা সরকারের উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ করতে চায়, স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি, যখন যে দল ক্ষমতায় আসে সেই দলের অনুসারী হয়ে লুটপাট চালায়; এই ধরনের দুষ্ট চক্রের কারণে কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন, এরা কোন দলের নয়, এরা লুটেরা। এদের প্রতিহত করে বাঁধের কাজ আদায় করতে এবং কৃষকদের বাঁচাতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তাহিরপুরের বাসিন্দা নজির হোসেন বলেন, ‘সকল হাওর উন্নয়ন কমিটিকে সক্রিয় হতে হবে। অকাল বন্যা মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হবে। বাঁধের কাজ শেষ করতে সামাজিক চাপ বাড়াতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ডুবন্ত অস্থায়ী বাঁধের পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে হবে। প্রটেকসন দেওয়াল দিয়ে স্থায়ী আফরবাঁধ করতে হবে। কোথাও কোথাও প্রয়োজনবোধে ডুবন্ত বাঁধটিই হেমন্তে সড়ক হিসাবেও ব্যবহৃত হতে পারে। একই সঙ্গে নদী খননও করতে হবে।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য, ধর্মপাশার বাসিন্দা ডাঃ রফিক চৌধুরী বলেন, ‘সুনামগঞ্জের বোরো ফসল রক্ষা বাঁধ ক্ষমতাসীন দলের একটি লুটপাট প্রকল্প। প্রত্যেক বছর বরাদ্দ আসে কাজ হয়না। পানি এসে ফসল বা বাঁধ ডুবালে কাজ হয়েছে দেখিয়ে ঠিকাদার ও পাউবোর সংশ্লিষ্টরা টাকা ভাগাভাগি করে। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা থাকায় এমন অপরাধের জবাবদিহিতাও নেই। এই বিষয়ে কৃষকদের সংগঠিত হতে হবে। দ্রুত কাজ আদায়ে চাপ সৃষ্টি করতে হবে। সরকারেরও এ ধরণের লুটাপাটের বিষয়ে নজর দেওয়া প্রয়োজন।’
জামালগঞ্জের সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার ইউসুফ আল আজাদ বলেন, ‘পাউবোকে এখন আর কেউ বিশ্বাস করেনা। জাতীয়ভাবে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে হবে, উদ্যোগ নিতে হবে। হাওর উন্নয়ন বোর্ডকে সক্রিয় এবং কার্যকর করতে হবে। এবার বাঁধের কাজে অবহেলায় কৃষকরা শঙ্কিত এবং দুশ্চিন্তাগ্রস্থ। কৃষকদের সক্রিয় হয়ে বাঁধের কাজ আদায় করতে হবে।’
সুনামগঞ্জ জেলা সিপিবির সভাপতি ধর্মপাশার বাসিন্দা চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, ‘প্রতিবছরই প্রতিবাদ করি, এবার আরো বেশি খারাপ অবস্থা। অক্টোবরে হাওর ভেসেছে। মাটি কাটা শুরু হয়েছে ৬ মাস পরে। ১৫ দিন পরেই মৌসুমি বৃষ্টিতে এই মাটি ধুয়ে নিয়ে যাবে। এই অর্থ ব্যয়-নিরর্থক। ৫০ কোটি টাকা লুটপাটের আয়োজন মাত্র। সুনামগঞ্জের ১৫টি হাওরে রাবার ড্যাম করার অনুমোদন হয়েছে। বেরিবাঁধের অপচর রোধ করে রাবার ড্যামই করতে হবে। ধর্মপাশার টঙ্গী বেড়ী বাঁধের পশ্চিমাংশে মজলিশপুর-সোলেমানপুর অংশে মঙ্গলবার কাজ শুরু হয়েছে। এই বাঁধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা।’