বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫১ পূর্বাহ্ন
হাবিব সরোয়ার আজাদ: ৭১’ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে যুদ্ধকালীন সময়ে সুনামগঞ্জ ৫নং সেক্টরের তাহিরপুরের সীমান্তবর্তী ৪নং সাব-সেক্টরের-মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বীরমুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণের জন্য কিশোরগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকা হাওর জনপদ মিঠামইন থেকে কখনো পায়ে হেঁটে, আবার কখানো নদী-হাওর পাড়ি দিয়ে রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ প্রতিবেশী হাওরের রাজধানী খ্যাত সুনামগঞ্জ ছুঁটে এসেছিলেন। সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলার অধিকাংশ একফসলী বোরো আবাদকৃত ফসলী জমির ৯০ ভাগ ফসল বিনষ্ট হওয়ায় তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে এসে সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ১৭ এপ্রিল সোমবার রাতে সুধি সমাবেশে তৎকালীন এক কৃষকের দেশ প্রেমিক বীর সন্তান বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বক্তব্যে বার বার উঠে আসে ৭১’র মুক্তিযুদ্ধকালীন সেই সময়কার সহযোদ্ধাগণের স্মরণ ও স্মৃতিকথা।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আমি সুনামগঞ্জে এসেছি কারো কথায় নয়, আমি নিজে থেকেই এসেছি, হৃদয়ের টানে। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি এ জেলায় থেকে যুদ্ধ করেছি। সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেছি। সেজন্য এখানে আজ এসেছি। তবে মানুষের দুঃখ-দুর্দশার সময় এসেছি। আজ ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের সর্বপ্রথম রাষ্ট্রপতি। ’৭১ সালের মে মাসের প্রথম দিকে আমি সুনামগঞ্জে আসি। সেই থেকে সুনামগঞ্জের মানুষের সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আমি যুদ্ধকালীন সময়ে সুনামগঞ্জে এসে একটি ছোট নৌকা দিয়ে তাহিরপুর উপজেলায় পৌঁছি। তখন দেখা হয় আব্দুজ জহুর সাহেবের সাথে। সেদিন তিনি শুঁটকি ভর্তা দিয়ে আমার ভাত খাবার ব্যবস্থা করেছিলেন। আমিও ক্ষুধার্ত থাকায় সেদিন প্রায় দেড় সের চালের ভাত খেয়েছিলাম।
রাষ্ট্রপতি উনার আমার সাথের যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছিলেন আজ তাঁরা কেউ নেই। ক’দিন আগে বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও চলে গেলেন না ফেরার দেশে। এর আগে দেওয়ান ওবায়দুর রাজা, আব্দুজ জহুর, আব্দুস সামাদ আজাদ, হোসেন বখত, জগৎজ্যোতিসহ আরও অনেকেই চলে গেছেন। যাঁরা চলে গেছেন, তাঁরা সবাই বার বার চেষ্টা করেছেন আমাকে সুনামগঞ্জে নিয়ে আসতে। কিন্তু ওই সময় আমি আসতে পারিনি। কারণ সারাজীবন আমি রাজনীতি করলেও আমার স্থান হলো অরাজনৈতিক জায়গায়। আমার স্থান নিরপেক্ষ স্থানে। এখন আমি মহানিরপেক্ষ স্থানে আছি। যার কারণে আমি যখন যেখানে যেতে চাই, যেতে পারবো না। কিন্তু আজ আমি একজন কৃষককের সন্তান হিসেবে কৃষি প্রধান এলাকায় যেখানে আমার শৈশব-কিশোর কেটেছে, যে হাওরাঞ্চলের থেকে আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি, সেই হাওরবাসির পাশে সাহস ও সমবেদনা জানাতে নিজেকে চার দেয়ালের ভেতর আটকে রাখতে না পেরে আমি আত্মার টানে নিজ থেকেই সুনামগঞ্জ ছুঁটে এসেছি।