রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৫ পূর্বাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার: প্রেমিকের চুরিকাঘাতে প্রেমিকা খুন হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় চলছে। ঘটনাটি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় শনিবার দিবাগত রাত ৮টার দিকে দিরাই পৌর সদরের মাদানি মহল্লায় এ ঘটনাটি ঘটে। নিহত প্রেমিকার নাম সুমাইয়া আক্তার মুন্নি (১৯)। সে জগদল ইউনিয়নের নগদীপুর গ্রামের ইটালী প্রবাসী হিফজুর রহমানের একমাত্র মেয়ে ও দিরাই উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। মুন্নী তার মা রাহেলা বেগম ও ছোট ভাইয়ের সাথে পৌর শহরের আনোয়ারপুর নয়াহাটি মাদানী মহল্লায় নানার বাসার ২য় তলায় বসবাস করতো। নিহত মুন্নি আক্তারের স্বজনরা জানান, শনিবার সন্ধ্যার পর নিজ বাসভবনে ছিলেন, নিহত মুন্নি আক্তার তার মা ও এগার বছর বয়সী একমাত্র ছোট ভাই মাহিদ রহমান। সন্ধ্যার পর কথিত প্রেমিক উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের সাকিতপুর গ্রামের জামাল সরদারের ছেলে ইয়াহিয়া সরদার ঘরে ঢুকে মুন্নি আক্তারকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। মেয়ের চিৎকার শুনে পাশের রুম থেকে মা রাহেলা বেগম দৌঁড়ে এসে দেখেন ইয়াহিয়া পালিয়ে যাচ্ছে। রাহেলা বেগমরে চিৎকার শুনে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এসে আহতাবস্থায় মুন্নি আক্তারকে নিয়ে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা সিলেটে প্রেরণ করলে তাকে নিয়ে যাওয়ার পথে নোয়াখালী নামক স্থানে তার মৃত্যু হয়। গতকাল (রোববার) ময়না তদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। রাতেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন লস্কর, দিরাই থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামালসহ পুলিশের একটিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় ইয়াহিয়ার খুঁজে অভিযান চালায়। রবিবার দুপুরে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার বরকত উল্লাহ খান ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাবিবুল্লা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দিরাই সার্কেল বেলায়েত হোসেন লস্কর ও সিনিয় সহকারি পুলিশ সুপার তাপস দাস। নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসিকে ঘাতকের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানে নিশ্চিত করার আশস্ত করে পুলিশ সুপার বরকত উল্লা খান বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি মেয়েটির সাথে ছেলেটির প্রেমেরে সম্পর্ক ছিলো। নির্মম এ হত্যাকা- মেনে নেয়া যায়না, এ ব্যাপারে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করবো, ইতিমধ্যে ম্যাসেজ পাঠানো হয়েছে, এখন পুলিশের কাজ হচ্ছে ঘাতককে গ্রেফতার করা।
পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, উপজেলার সাকিতপুর গ্রামের পিত্রালয় থেকে বছর চারেক পূর্বে বিতাড়িত ইয়াহিয়ার সাথে দীর্ঘদিন ধরেই স্কুল ছাত্রী মুন্নি আক্তারের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। কিছুদিন পূর্বে মুন্নির মা ছেলেটির বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ র্যাব অফিসে একটি অভিযোগ করেছিলেন। র্যাব কার্যালয়ে ছেলেটিকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার একটি মুছলেকা নিয়ে তা সমাধান করে দেয়া হয়েছিলো। বিগত দুইমাস ভালই চলছিলো। ঘটনার তিনদিন আগে হঠাৎ মেয়েটির বাসায় গিয়ে ছেলেটি নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। নিজের শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এবং তা ছবি তুলে নিজের ফেইসবুকে আপলোড করে।
নিহত মুন্নীর মা রাহেলা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, সামনের বছর ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষা ভালো করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল আমার মেয়ে মুন্নী, তাই ভালোভাবে লেখাপড়া করানোর জন্য গ্রামের বাড়ি ছেড়ে মেয়েকে নিয়ে আমি দিরাই আমার বাবার বাসায় থাকছি, কিন্তু বখাটে ইয়াহিয়া বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ায পথে এমনকি বাসার সামনে এসে আমার মেয়েকে উত্ত্যক্ত করে আসছিলো, আমি ইতিপুর্বে আইন-শৃংখলা বাহিনীর নিকটও তার উত্ত্যক্ত করার বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছি, কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হল না আমার মেয়ের।
দিরাই থানার ওসি গোলাম মোস্তফা বলেন, লাশ উদ্ধার করে রাতেই সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, মেয়ের খুনের ঘটনায় পরিবারের লোকজন মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন তাই এখন পর্যন্ত থানায় কোন মামলা দায়ের করেন নি পরিবারের লোকজন, তারপরও ঘাতক ইয়াহিয়াকে গ্রেফতারে পুলিশী চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
দিরাই উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর ইকবাল বলেন, মুন্নীর মৃত্যুর খবর শুনে আমি মর্মাহত, এ রকম ঘটনা কল্পনাও করতে পারিনা, এই মেয়েটার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে, সে খুব মেধাবী ছাত্রী ছিল, এসএসসিতে সে ভাল রেজাল্ট করবে বলে আমরা আশা করছিলাম।